প্রকাশ চিক বরাইক। ছবি: সংগৃহীত।
মাত্র ছ’মাস আগেই তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছে দল। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের অন্দরে শুরু হওয়া ‘বিদ্রোহের’ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আলিপুরদুয়ারে হারানো জমি পুনরুদ্ধারে উত্তরের এই কেন্দ্রে সেই প্রকাশ চিক বরাইককে প্রার্থী ঘোষণা করে বড় চমক দিল তৃণমূল।
কিন্তু কেন? চা বলয় অধ্যুষিক আলিপুরদুয়ারে যে কোনও নির্বাচনেই বাগান শ্রমিকদের ভোট অন্যতম নির্ণায়ক ভূমিকা নেয় বলে মত রাজনৈতিক মহলের। তার উপরে ভর করেই গত লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন আলিপুরদুয়ারের বিদায়ী সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বার্লা। কিন্তু এ বার বিধায়ক মনোজ টিগ্গাকে বিজেপি লোকসভার প্রার্থী করতেই ‘বিদ্রোহী’ হয়ে উঠেছেন বার্লা। তিনি যে সংগঠনের চেয়ারম্যান, সেই ‘বিটিডব্লিউইউ’ বা ভারতীয় টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের বড় নেতাদেরও এখনও টিগ্গার হয়ে ভোট প্রচারে নামতে দেখা যায়নি। উল্টে কোনও কোনও বাগানে বিটিডব্লিউইউ-এর স্থানীয় নেতারা টিগ্গার বিরুদ্ধে প্রচার করছেন বলে ওই সংগঠনেরই একটি সূত্রের দাবি।
ফলে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হারানো জমি পুনরুদ্ধারে টিগ্গার বিরুদ্ধে দলের প্রার্থী হিসেবে চা বলয়ের তেমন কোনও পরিচিত মুখকেই চাইছিলেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। অনেকে সরাসরি প্রকাশকেও চাইছিলেন। কিন্তু মাত্র ছ’মাস আগে রাজ্যসভায় যাওয়া প্রকাশকে শীর্ষ নেতৃত্ব আদৌ প্রার্থী করে কিনা, তা নিয়ে ধন্দেও ছিলেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত রবিবার ব্রিগেডের সভা থেকে সেই প্রকাশের নামই আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কার্যত ‘মাস্টারস্ট্রোক’ দিলেন বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতাদের একাংশ।
গত লোকসভা নির্বাচনের পরে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও তৃণমূলকে জেলার পাঁচটি আসনে হারের মুখ দেখতে হয়। তার পরই দলের আদিবাসী মুখ প্রকাশকে আলিপুরদুয়ারের জেলা সভাপতি করে তৃণমূল। তাঁর নেতৃত্বেই গত পুরভোটে আলিপুরদুয়ারের দু’টি পুরসভার দুটিতেই জয় ছিনিয়ে নেয় রাজ্যের শাসকদল। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটেও এই জেলায় বড় সাফল্য পায় তৃণমূল। পাশাপাশি তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একের পর এক আন্দোলনে নেমে চা বলয়েও এখন অত্যন্ত পরিচিত মুখ প্রকাশ। গত অগস্ট মাসে রাজ্যসভায় যাওয়ার পরে ইতিমধ্যেই কয়েক বার চা শ্রমিকদের পক্ষে সেখানে সওয়াল করতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
প্রকাশ এ দিন বলেন, “চা বলয়ের মানুষ বিজেপির উপরে ক্ষুব্ধ। গত পাঁচ বছরে বিজেপির জনপ্রতিনিধিরা চা শ্রমিকদের জন্য কিছুই করেননি। কিন্তু শ্রমিকরা সব সময়ই আমাদের পাশে পেয়েছেন। তাই তৃণমূলকে জয়ী করে আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রের মানুষ এই আসন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপহার দেবেন।” প্রার্থী নিয়ে বিজেপির অন্দরে চলতে থাকা কোন্দল কি তৃণমূলকে বাড়তি সুবিধা দেবে? প্রকাশের সহাস্য উত্তর, “ওঁদের অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।”
তবে বিজেপি প্রার্থী মনোজ পাল্টা বলেন, “আশা সকলেই করে। তৃণমূলও আশা করতেই পারে। কিন্তু এ বারের নির্বাচনে গত বারের চেয়েও বেশি ব্যবধানে আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে বিজেপি জয়ী হবে।” তাঁদের দলের কেউ তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না বলেও দাবি করেন মনোজ।