(বাঁ দিকে) তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ‘অশালীন’ মন্তব্য করার অভিযোগ এনে তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হল তৃণমূল। তৃণমূলের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীকে ‘অশালীন’ ভাষায় আক্রমণ করে ‘নিম্নরুচি’র পরিচয় দিয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি। নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙেছেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে অবিলম্বে ফৌজদারি মামলা শুরু করতে হবে কমিশনকে। বিজেপি প্রার্থীর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে কোনও জনসভা, রোড-শোতে বা একান্ত সাক্ষাৎকারে যোগদানে তাঁকে বিরত রাখতে হবে। অভিজিৎ বা অন্য কোনও বিজেপি নেতা যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ব্যক্তিগত এবং অসম্মানজনক মন্তব্য না করেন তা-ও নিশ্চিত করার আবেদন কমিশনে জানিয়েছে তৃণমূল। রাজ্যের শাসকদলের তরফে কমিশনের কাছে অভিজিতের নামে অভিযোগ জানিয়ে চিঠিটি পাঠিয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন।
উল্লেখ্য, কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতিকে নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। বৃহস্পতিবার ‘এক্স (সাবেক টুইটার)’ হ্যান্ডেলে পোস্ট করে তৃণমূল। তাতে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে ‘কুৎসিত এবং অশালীন’ ভাষায় আক্রমণ করেছেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ। বুধবার হলদিয়ার চৈতন্যপুরে একটি সভা ছিল তমলুকের বিজেপি প্রার্থীর। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর নাম করে তিনি বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুমি কত টাকায় বিক্রি হও?’’ সে কথা উল্লেখ করেই অভিজিতের কড়া নিন্দা করেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। হলদিয়ার ওই সভার একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও আনন্দবাজার অনলাইন সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি। সেই ভিডিয়োতে অভিজিৎকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘তৃণমূল বলছে, রেখা পাত্রকে কেনা হয়েছিল ২০০০ টাকায়! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তুমি কত টাকায় বিক্রি হও? তোমার হাতে কেউ ৮ লক্ষ টাকা গুঁজে দিলে চাকরি হয়, কেউ ১০ লক্ষ টাকা দিলে রেশন হাওয়া হয়ে যায়! কেন তোমার দাম ১০ লক্ষ টাকা? তুমি কেয়া শেঠকে দিয়ে মুখে মেকআপ করাও বলে? আর রেখা পাত্র গরিব মানুষ, লোকের বাড়িতে কাজ করে, আমাদের প্রার্থী। সে জন্য তাঁকে ২০০০ টাকায় কেনা যায়?’’
সেখানেই না থেমে প্রাক্তন বিচারপতি আরও বলেন, ‘‘এক জন মহিলা হয়ে এক মহিলা সম্পর্কে উনি এই মন্তব্য করেন কী করে? উনি আদৌ মহিলা কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে আমার!’’ অভিজিতের ওই মন্তব্যের সমালোচনা করে সরব হয়েছে তৃণমূল। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ‘‘উনি ভদ্রতার সীমা লঙ্ঘন করে এতটাই নীচে নেমেছেন যে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর দাম ঠিক করছেন! এ কথা বলে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে অসম্মানিত করার পাশাপাশি বাংলার মহিলাদেরও অসম্মান করেছেন।’’ অভিজিতের ওই মন্তব্যের জন্য এক্স হ্যান্ডলে তাঁকে ‘নারীবিরোধী’ বলে মন্তব্য করে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে পদক্ষেপ করার আর্জি আগেই জানিয়েছিল তৃণমূল। এ বার সরাসরি চিঠি পাঠিয়ে বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার আর্জি জানানো হয়েছে। এক জন প্রাক্তন বিচারপতি কী ভাবে এই ধরনের মন্তব্য করতে পারেন, সেই প্রশ্নও তুলেছে তৃণমূল।
অভিজিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে যে চিঠি তৃণমূল কমিশনে পাঠিয়েছে, সেখানে উঠে এসেছে বিজেপির অন্য এক লোকসভা প্রার্থী দিলীপ ঘোষের প্রসঙ্গও। এর আগে দিলীপের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্যের অভিযোগ এনেছিল রাজ্যের শাসকদল। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্যে নির্বাচনী বিধিভঙ্গ হয়েছে অভিযোগ তুলে কমিশনের দ্বারস্থও হয়েছিল। দিলীপকে সতর্ক করে নোটিসও দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তৃণমূলের অভিযোগ, এই ভাবে বার বার বিজেপি নেতারা মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে নিয়ে ‘কুরুচিকর’ মন্তব্য করে নারীর মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করছে। রাজনৈতিক প্রচারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং লোকসভা নির্বাচনের বর্তমান সময়ে প্রাসঙ্গিক থাকার জন্যই বিজেপি নেতারা এই ধরনের মন্তব্য করছেন বলেও অভিযোগ তৃণমূলের।