(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
এই লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৪০০-র বেশি আসন পাবে বলে আত্মবিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রায় প্রতিটি জনসভা থেকে তিনি স্লোগান দিচ্ছেন, ‘‘অব কি বার ৪০০ পার।’’ মোদীর মতো অন্য বিজেপি নেতারাও সেই ধ্বনি তুলছেন সভা থেকে রোড-শোয়ে। এ বার নির্বাচনী সভা থেকেই সেই স্লোগানকেই কটাক্ষ করে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘ইস বার পগার পার (এই বার পগার পার)।’’ মঙ্গলবার পুরুলিয়ার সভা থেকে মমতা বলেন, ‘‘এ বারের ভোটে মানুষ মোদী সরকারকে বিদায় দেবে।’’
লোকসভা নির্বাচনে তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলছে মঙ্গলবার। তৃণমূলনেত্রী মমতা জানান, অনেক জায়গাতেই ভোটারদের প্রভাবিত করা হচ্ছে বলে তিনি খবর পাচ্ছেন। বিজেপিশাসিত উত্তরপ্রদেশের কথা উল্লেখ করে মমতা অভিযোগ করেন, সেখানে সংখ্যালঘুদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাংলায় এ সব করার ‘স্পর্ধা’ কারও নেই বলে হুঁশিয়ারিও দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে নাকি সংখ্যালঘুদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ভোট দিতে গিয়েছে, তাকে পিটিয়ে রোদে ফেলা রাখা হয়েছে। খবর পেয়েছি।’’ নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জনসভায় মমতার কটাক্ষ, ‘‘আপনারা কি ভাবছেন, নির্বাচন কমিশন কিছু করবে? কিচ্ছু করবে না। মডেল কোড অফ কনডাক্ট এখন মোদী কোড অফ কনডাক্ট-এ পরিণত হয়েছে। পুরো বিজেপির দালালি করছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বাংলায় হাত দিলে হাত ভেঙে গুটিয়ে দেবে মানুষ। অত্যাচার করে ভোট হয় না।’’
মমতা জানান, পশ্চিমবঙ্গে পাঁচ জনকে ভোট দিতে বাধা দিলে পাঁচ লক্ষ মানুষ তৃণমূলের পক্ষে রায় দেবেন। তিনি সভার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোদীকে নিশানা করেন। মমতা বলেন, ‘‘একটা স্বেচ্ছাচারী রাজা। অনাচারী রাজা। ব্যভিচারী রাজা। লোকের একশো দিনের কাজের টাকা দেয় না। বাড়ির টাকা দেয় না। রাস্তার টাকা দেয় না। কেন্দ্র এবং রাজ্য যে একসঙ্গে প্রকল্পের টাকা দিচ্ছে জানাবে না। শুধু নিজের ছবি দেবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘যদি ওয়াশরুমে যান, সেখানেও দেখবেন মোদীর ছবি। করোনার সময় গণতন্ত্রের দায়িত্ব মানুষের জন্য কাজ করা। প্রত্যেকটি রাজ্য খেটেছে। ভূতের মতো খেটেছি আমরা। একটি ইঞ্জেকশন দিয়ে নিজের ছবি লাগিয়ে দিচ্ছে। মানুষ মরে গেলেও যেন তোমার ছবিটা চিতায় নিয়ে চলে যায়!’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রচার করতে করতে আত্মঅহঙ্কারী হয়ে গিয়েছেন। সারা পৃথিবী ছিঃ ছিঃ করছে। হিন্দু-মুসলমান ভাগ করে দাও। উনি একা হিন্দু এসেছেন। বড় নেতা। সবার দীক্ষাগুরু হয়ে গিয়েছে। তুমি একটা মুকুট পরো।’’
সভায় মমতা রাজ্যের প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথা উল্লেখ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘সুব্রতদা এক দিন আমায় বললেন, ‘আমার প্রায় প্রায় দাঁতের ব্যথা হয়। আমি তো মিথ্যা কথা বেশি বলি না। আমার কেন দাঁতে ব্যথা হবে। আর তা হলে মোদীর কেন দাঁতে মাড়ি থাকবে?’’’ পরে মমতা জানিয়ে দেন, এটা সুব্রতের একটি গল্প ছিল। তবে মোদী সরকার যে মিথ্যাচার করছে, তার বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। মমতার কথায়, ‘‘নতুন করে লড়তে হবে সবাইকে।’’
তৃণমূল নেত্রী পুরুলিয়ার তৃণমূল প্রার্থীর প্রচারে বলেন, ‘‘শান্তিরাম মাহাতো গ্রামের ছেলে। তাঁকে ভাল করে ভোট দিয়ে জেতান।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার মতো পুরুলিয়ায় এত বার কেউ আসেনি। অযোধ্যায় রাত জেগে ঘুরেছিলাম। ভেবেছিলাম, কী ভাবে এখান থেকে অশান্তি দূর করা যায়। চারশো পার বলেছিলে না? আমি বলি, ইস বার পগার পার করে দিন বিজেপিকে।’’