তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। — ফাইল চিত্র।
রামলীলা ময়দানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তৃণমূল জানিয়ে দিল, তারা ইন্ডিয়া মঞ্চের সঙ্গে সব সময়ই রয়েছে। প্রসঙ্গত, এর আগে ইন্ডিয়া মঞ্চের সমাবেশ হয়েছিল মুম্বইয়ে, দেড় সপ্তাহ আগে। রাহুল গান্ধীর ‘ন্যায় যাত্রা’ শেষ হওয়া উপলক্ষে। সেখানে কোনও প্রতিনিধি পাঠাননি তৃণমূল নেতৃত্ব। গত কয়েক মাস আসন সমঝোতার মতো বিষয় নিয়ে ক্রমশই দূরত্ব বেড়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সঙ্গে কংগ্রেসের, যা কালক্রমে তিক্ততায় পর্যবসিত। তৃণমূলের অভিযোগ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ধারাবাহিক ভাবে মমতাকে আক্রমণ করে গিয়েছেন। দিল্লিতে দোস্তির সংকেত দিয়ে বাংলায় কুস্তি চলতে পারে না, এমনটাই জানিয়েছেন তৃণমূল নেতারা।
আজ তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন অবশ্য রামলীলার মঞ্চ থেকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ইন্ডিয়া মঞ্চের সঙ্গে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়নি। তাঁর কথায়, “তৃণমূল ইন্ডিয়া জোটের অংশ ছিল, আছে এবং থাকবে।” সভায় বক্তব্য রাখতে উঠে ডেরেক পুলওয়ামা হামলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এর পাশাপাশি দাবি করেন যে, এটা বিজেপির সঙ্গে ভারতীয় গণতন্ত্রের লড়াই। পুলওয়ামা প্রসঙ্গে ডেরেক বলেন, “আমরা চাই সত্যিটা সামনে আসুক। আমরা এই নিয়ে শ্বেতপত্র চাই।” মঞ্চের দু’টি ফাঁকা চেয়ারের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “আমরা দুটো আসন ফাঁকা রেখেছি। মাননীয় কেজরীওয়াল এবং মাননীয় সোরেন, আপনারা আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন।” বিজেপির উদ্দেশে আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, “কর্মসংস্থান, মুদ্রাস্ফীতি, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি রক্ষা করার নিরিখে মোদীর গ্যারান্টি আসলে জ়িরো ওয়ার্যান্টি।” প্রসঙ্গত, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফের কনভয়ে জঙ্গি হানায় ৪০ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়। এই ঘটনা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিল তৃণমূল-সহ বেশ কিছু বিরোধী দল। প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়ে এই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
আজ তৃণমূলের দ্বিতীয় বক্তা ছিলেন, তৃণমূলের সদ্য নির্বাচিত রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ। কংগ্রেসের সনিয়া গান্ধী, এনসিপি-র শরদ পওয়ার, শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে, এসপি-র অখিলেশ সিংহ যাদব, আরজেডি-র তেজস্বী যাদবের মতো নেতারা যখন উপস্থিত, তখন দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসাবে তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসাবে কেন এমন এক জনকে পাঠানো হল, যাঁর রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস কয়েক সপ্তাহ মাত্র? এই প্রশ্নের জবাবে ডেরেক বলেছেন, “লোকসভার সব সাংসদ এবং মন্ত্রীই ব্যস্ত নির্বাচন নিয়ে। সাগরিকাকে বাছা হয়েছে তাঁর হিন্দি বলার দক্ষতার কারণে। নাগরিক সমাজেও তাঁর পরিচিতি যথেষ্ট।”
তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য এ কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, তাঁরাই একমাত্র দল, যারা কংগ্রেস বা আপ-এর সঙ্গে কোথাও কোনও জোটে নেই। তা সত্ত্বেও আজ সমাবেশে যোগ দেওয়া হয়েছে জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধিতার হাত শক্ত করার জন্য। ফলে কোন নেতা আজকের সমাবেশে প্রতিনিধিত্ব করলেন, সেটা বড় কথা নয়। আসল কথা হল, তৃণমূল এই মঞ্চে থাকল আপ এবং কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে।