বিধায়ক হিসাবে শেষ বার সভা করতে গিয়ে চোখে জল বিশ্বজিৎ দাসের। —নিজস্ব চিত্র।
গত বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দেন। বিজেপিও বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রে টিকিট দেয় বিশ্বজিৎ দাসকে। কিন্তু বিধায়ক হওয়ার কিছু দিন পরেই তৃণমূলে ফেরেন তিনি। ’২৪-এর লোকসভা ভোটে বিশ্বজিৎকে বনগাঁ কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। সে জন্য বিধায়কের পদ ছাড়তে হবে বিশ্বজিৎকে। বিধায়ক হিসাবে শেষ জনসভা করে কেঁদে ফেললেন তৃণমূল প্রার্থী। তাঁর দাবি, মানুষের জন্য দলবদল করে বিজেপির প্রতীকে ভোটে লড়েছিলেন। কিন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বনগাঁর মানুষের কাছ থেকে যে সহায়তা পেয়েছেন, তা সারা জীবন মনে রাখবেন। সেই কথা বলতে বলতে গলা ধরে এল বিশ্বজিতের। কেঁদে ফেললেন। জল খেলেন। কথা বলতে বলতে আবারও কেঁদে ফেললেন।
শুক্রবার বাগদার হেলেঞ্চা নেতাজী শতবার্ষিকী কমিউনিটি হলে তৃণমূলের বৈঠক ছিল। সেখানে নিজের রাজনৈতিক জীবনের কথা শোনান বিদায়ী বিধায়ক বিশ্বজিৎ। তিনি বলেন, ‘‘অর্থের জন্য ছুটলে সম্মান পাওয়া যায় না। আমি সম্মানের জন্য ছুটেছিলাম। সেই জন্য সম্মানও পেয়েছি। অর্থও পেয়েছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে সেই সম্মান দিয়েছেন।’’ হেলেঞ্চা বাজারে একটি মিছিল করে মানুষের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে গুরুচাঁদ ঠাকুরের মূর্তিতে মাল্যদান করেন বনগাঁর তৃণমূল প্রার্থী। তার পর গত বিধানসভা ভোটে জয়ের বিবরণ দিতে থাকেন বিশ্বজিৎ। তিনি বলেন, ‘‘২০১৬ সালে প্রায় ৩৫ হাজার ভোটে জিতেছি। আমি অন্যায় দেখলে সহ্য করতে পারি না। সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়েছি। অনেক বার বিজেপি আমাকে বলেছে, ইডি-সিবিআই লাগাচ্ছি। কালকেই যাবে। কিন্তু আমি উঁচু স্বরে কথা বলেছি এবং হেসেছি। আমি জানি, আমি কে…’’
বাগদার ভোটারদের ভূয়সী প্রশংসা করে বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘আমি জানতাম, দুটো জিনিস একসঙ্গে হয় না— অর্থ আর সম্মান। তাই অর্থ যারা পেয়েছে, সম্মান পায়নি। আর যাঁরা সম্মানের দিকে ঝুঁকেছেন, তাঁরা অর্থ এবং সম্মান দুটোই পেয়েছেন। তাই সবাইকে বলে দিয়ে গেলাম, শুধু অর্থের দিকে ঝুঁকলে মানুষ মুছে ফেলে দেবেন। কোনও দিন মনে রাখবে না। আর ওই টাকাও কোনও দিন কাজে লাগবে না।’’ বিশ্বজিৎ বলতে থাকেন, ‘‘আমি তিন বারের বিধায়ক। দু’বার বনগাঁ থেকে জিতেছিলাম। বনগাঁর কিছু মানুষের সঙ্গে মতবিরোধ হয়েছিল। আমি মতানৈক্যের জেরে এখান থেকে দাঁড়িয়েছিলাম। আপনারা আশীর্বাদ করেছিলেন। সে সময় হয়তো আমি অন্য কোনও প্রতীকে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু আমার অন্তরে ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ মাইকে বলতে বলতে গলা ধরে আসে বিশ্বজিতের। ধরা গলায় তিনি বলতে থাকেন, ‘‘মানুষের কাজ করব বলে আমি হয়তো প্রতীক ‘চেঞ্জ’ করেছিলাম। কিন্তু মানুষে মানুষে তো ভেদাভেদ নেই। আমার সীমিত ক্ষমতার মধ্যে আমি মানুষের কাজ করতে চেয়েছি। কারও সঙ্গে যদি খারাপ ব্যবহার করে থাকি, আমার কাজে কখনও খারাপ লেগে থাকে, আমি সে জন্য ক্ষমা চাইছি আপনাদের কাছে। আমার ৩২ বছরের রাজনৈতিক জীবনে আমি কাউকে আঘাত দিয়ে কোনও কথা বলিনি।’’
বিশ্বজিতের দাবি, গত আড়াই বছরে বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রে প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি তো আর বাগদায় থাকব না...১০০ কোটি টাকার মতো রাস্তার কাজ চলছে। আমার বিশ্বাস, স্বাধীনতা পর এত কাজ হয়নি বাগদায়। আমি নতমস্তকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কৃতজ্ঞ।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আড়াই বছর বিধায়ক ছিলাম। এত কাজ করেছি... সাহায্য পেয়েছি সবার কাছে। যেটুকু কাজ বাকি আছে, করে দেব। এই যে আড়াই বছরের সুখস্মৃতি আমি ভুলতে পারব না। এটা আমার স্মৃতির মণিকোঠায় থাকবে।’’ আর কথা বলতে পারেননি তিনি। কেঁদে ফেলেন। পাশ থেকে এক নেত্রী জলের বোতল বাড়িয়ে দেন। এক ঢোক জল খেয়ে বলেন, ‘‘বিধায়ক হিসাবে এটাই আপনাদের কাছে আমার শেষ বক্তব্য।’’
বিজেপি কটাক্ষ করে বলছে, ভোটের জন্য মানুষের কাছে কান্নাকাটি করে ‘নাটক’ করছেন তৃণমূল বিধায়ক। আর বিশ্বজিৎ বলছেন, ‘‘আমি বাগদার মানুষের প্রতি আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছি। এই এলাকায় প্রচুর উন্নয়নের কাজ করেছি। বিধায়ক হিসাবে বাগদায় এটা আমার শেষ দিন। সেই কারণেই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলাম।’’