Lok Sabha Election 2024

প্রশ্নচিহ্ন থেকে দাঁড়ির দিকে যাওয়ার যুদ্ধে তিন বন্ধু

প্রতীক-উর, দীপ্সিতা, সৃজনদের লড়াই শুধুই তাঁদের ব্যক্তিগত নয়। তরুণ প্রজন্মের এগিয়ে আসার লড়াই, দলের হয়ে দিন বদলানোরও। তিন সতীর্থের আশা, হারানো জমি তাঁরা ফিরিয়ে আনার দিকে এগোবেন।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৪ ০৮:২৭
Share:

শ্রীরামপুরের প্রার্থী দীপ্সিতা ধরের প্রচারে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র ও কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। — নিজস্ব চিত্র।

রিষড়ার সেই পাড়া। যেখানে গোষ্ঠী-সংঘর্ষের জেরে সাম্প্রতিক অতীতে আতঙ্কে দিন কেটেছিল বাসিন্দাদের। এই লোকসভা ভোটের প্রচারে সেখানেই বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের বাইরে অন্য দলের প্রার্থীর জন্য রাতেও অপেক্ষমাণ মানুষ।

Advertisement

আর এক জনের প্রচার-সভা চলাকালীন এগিয়ে এসেছিলেন এক ব্যক্তি। হাতে নারকেল তেলের কৌটো। ভদ্রলোক পরিচয় দিয়ে বলেছিলেন, তিনি রিকশা চালান। তাঁর সঞ্চয় থেকে কিছু টাকা কৌটো ভরে তুলে দিতে চান তরুণ প্রার্থীর হাতে।

তৃতীয় ব্যক্তি লড়তে নেমেছেন রীতিমতো ‘সন্ত্রস্ত’ এলাকায়। আগেকার ভোটে বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকদের যেখানে মার খেতে হয়েছে, সেখানেই পড়শিরা নিজ উদ্যোগে মালা কিনে এনে এ বারের প্রার্থীকে পরিয়েছেন। ঘরে বসিয়ে সুখ-দুঃখের কথা বলেছেন।

Advertisement

টুকরো টুকরো এই ছবি যাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে, তাঁদের প্রথম জন দীপ্সিতা ধর। দ্বিতীয় জন সৃজন ভট্টাচার্য। এবং তৃতীয় জন প্রতীক-উর রহমান। তিন জনেই সিপিএমের ছাত্র আন্দোলনের ফসল। তিন বছর আগে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী ছিলেন তিন জনেই। তেমন কিছু সুবিধা করতে পারেননি। এ বার লোকসভা নির্বাচনের বড় ময়দানে তিন বন্ধুকে নামিয়ে দিয়েছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। শ্রীরামপুরে দীপ্সিতা, যাদবপুরে সৃজন এবং ডায়মন্ড হারবারে প্রতীক-উরের প্রচার নজর কেড়েছে। কিন্তু তাতে কি চাকা ঘুরবে?

তিন বন্ধুই এক সুরে দাবি করছেন, পরিস্থিতিতে বদল আসছে। দীপ্সিতার কথায়, ‘‘বিধানসভা ভোটের সময়ে মানুষ আমাদের কথা শুনতেন কিন্তু ভাবতেন, এরা কি পারবে? এ বার তাঁরা আমাদের কথা শুনতে আসছেন এবং অনেকেই মনে করছেন, এরা পারবে। শেষে এই প্রশ্নচিহ্ন থেকে দাঁড়িতে পৌঁছনোর দিকেই আমাদের লড়াই!’’ স়ৃজনের দাবি, ‘‘বিধানসভা ভোটে খারাপ ফলের পরে আমরা কিন্তু পালাইনি। বিজেপি বনাম তৃণমূলের দ্বিমুখী লড়াইয়ের ধারণা এখন কাটতে শুরু করেছে। তার ফল আমরা পাব।’’ আর প্রতীক-উরের মতে, ‘‘সেই বিধানসভার পরে আরও দু’টো নির্বাচন (পুরসভা ও পঞ্চায়েত) মানুষ দেখেছেন। বাচ্চাদের ডাকা একটা ব্রিগেডও দেখেছেন! পরিস্থিতি আর এক রকম নেই।’’

তিন জনেই লড়ছেন হারা আসনে। প্রতীক-উরের ডায়মন্ড হারবার তার মধ্যে মার্কামারা এবং কঠিনতম! গণতান্ত্রিক পরিবেশই সেখানে ঠিক মতো নেই বলে হামেশাই অভিযোগ করে এসেছে বিরোধীরা। এসএফআইয়ের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি অবশ্য দাবি করছেন, ‘‘যেখানে প্রচার করতে গিয়ে আমাদের প্রার্থীকে পর্যন্ত আগে মার খেতে হয়েছে, সেখানেই সাধারণ মানুষ নিজের পয়সায় মালা কিনে আমাদের দেবেন কেন? আসলে মানুষ বুঝতে পারছেন সব, তাঁরা কিছু বলতে চাইছেন। আমরা গত কয়েক বছরে সব জায়গায় পৌঁছতে পারিনি অনেকটা আমাদের দুর্বলতার কারণেও। এখন আবার চেষ্টা করছি।’’

প্রচার-পর্ব পার করে এসে দীপ্সিতার মত, ‘‘ছাত্র রাজনীতির সূত্রে একটা নির্দিষ্ট অংশের সঙ্গে আগে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছিল। কিন্তু সাধারণ নির্বাচনের ক্ষেত্র অনেক বড়। এ বার দেখতে পাচ্ছি, অটো-চালক, টোটো-চালক থেকে শুরু করে আর্থ-সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষের একাংশ আমাদের সঙ্গে আসছেন। লাল চুল, কানে দুল, তারাই তৃণমূল— এই যে কথাটা চালু হয়েছে, তাদেরও একটা অংশকে সাড়া দিতে দেখছি। তাই আমাদের শক্তি বাড়বে বলে আশা করছি।’’ একই মত সৃজনেরও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘স্থায়ী চাকরির দাবি, শিক্ষা, কর্মসংস্থানের মতো বিষয়গুলো আমরা যখন তুলছি, মানুষ কিন্তু শুনছেন।’’

প্রতীক-উর, দীপ্সিতা, সৃজনদের লড়াই শুধুই তাঁদের ব্যক্তিগত নয়। তরুণ প্রজন্মের এগিয়ে আসার লড়াই, দলের হয়ে দিন বদলানোরও। তিন সতীর্থের আশা, হারানো জমি তাঁরা ফিরিয়ে আনার দিকে এগোবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement