কেন্দ্রীয় সরকার সিএএ কার্যকরর পর মঙ্গলবার জলপাইগুড়িতে বিজেপির মিছিলে ঢাক পেটাচ্ছেন সাংসদ জয়ন্ত রায়। ছবি: সন্দীপ পাল।
সকলেই তো দেশের নাগরিক। আবার নতুন করে প্রমাণপত্রের প্রয়োজন কী? এই সুরেই প্রচারে নেমে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন তথা সিএএ কার্যকর করার পরে ভোট প্রচার শুরু করলেন তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়। ‘রাজবংশী তাত্ত্বিক’ হিসেবে পরিচিত মুখ ধূপগুড়ির কলেজ শিক্ষক তথা বিধায়ক নির্মলের। সিএএ-কে নমশূদ্র তথা মতুয়ারা যে ভাবে স্বাগত জানিয়েছে, রাজবংশীদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। একাধিক রাজবংশী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নির্মল বলছেন, “সিএএ-এর কোনও প্রয়োজনই ছিল না। এটা পুরোটাই লোক দেখানো।”
তৃণমূলের প্রার্থী যখন সিএএ নিয়ে এমন কথা বলছেন, তখন বিজেপি শিবিরে ঠিক উল্টো ছবি। মঙ্গলবার বিজেপি পার্টি অফিসের সামনে থেকে মতুয়া সমাজের মিছিল বের হয় ডঙ্কা-ঢোল নিয়ে। বিজেপির পতাকার সঙ্গে ছিল মতুয়া সমাজের লাল পতাকা। কেন্দ্রীয় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে মিছিল বের হয়। মিছিলের সামনে ছিলেন জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়। যদিও এখনও জলপাইগুড়িতে বিজেপি প্রার্থী ঘোষণা করেনি। মিছিলে হাঁটার সময় জয়ন্তকে মতুয়াদের বাজানো ঢোলও গলায় ঝোলাতে দেখা যায়। জয়ন্ত বলেন, “মতুয়া সমাজ নিজেরাই মিছিল করেছে কেন্দ্রীয় সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে, আমরা পা মিলিয়েছি।”
জলপাইগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের একাধিক লোকসভা আসনে মতুয়াদের ভোট রয়েছে। সিএএ কার্যকর হওয়ার পরে পুরো কৃতিত্ব নিতে বিজেপি সেই সব এলাকায় মিছিল শুরু করেছে। তৃণমূলপন্থী নমশূদ্রদের সামাজিক সংগঠনও সিএএ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করায় রাজ্যের শাসকদলের অন্দরে অস্বস্তি বেড়েছে। সারা ভারত নমশূদ্র বিকাশ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীবন মণ্ডল বলেন, “সিএএ কার্যকর করায় কেন্দ্রীয় সরকারকে স্বাগত জানাই। এটা আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। আমরা উচ্ছ্বসিত। তবে ২০১৫ সাল নয়, ভারতে এসে নাগরিকত্ব পাওয়ার মেয়াদ আরও বাড়াতে হবে।”
নমশূদ্র তথা মতুয়াদের ভোটের অঙ্ক বিজেপি কষলেও রাজবংশী ভোটে নজর দিচ্ছে তৃণমূলও। বিজেপি যেমন দাবি করা রাজবংশী ভোটের বেশিটা পদ্মের বাক্সে পায়, তাতে ফাটল ধরালে জলপাইগুড়ি আসনে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল প্রার্থী রাজবংশী নেতা নির্মল বললেন, “যাঁদের ভোটে আমাদের মতো জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়েছেন। সেই সমস্ত মানুষকে আবার নিজেদের দেশের নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করার কোনও কারণ নেই। ভোট প্রচারে বারবার এ কথাই বলব।“ নমশূদ্র সমাজ সংস্থার উত্তরবঙ্গের সচিব শম্ভুনাথ মিস্ত্রি বলেন, “আমরা স্বাগত জানাই। তবে আইনের ধারা নিয়ে আমাদের কিছু বক্তব্য রয়েছে, সেগুলি সময়ে জানাব।”