Lok Sabha Election 2024

পাশে নেই অখিলেশও, দাপটহারা বন্দি আজম

কম-বেশি ৮০টির বেশি মামলা রয়েছে সীতাপুর জেলে বন্দি থাকা রামপুরের আজম খানের বিরুদ্ধে। এক সময়ে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে তাঁর নামে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

রামপুর (উত্তরপ্রদেশ) শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:১৭
Share:

অখিলেশ যাদব। —ফাইল চিত্র ।

আতিক আহমেদ, মুখতার আনসারির পরে কি সমাজবাদী নেতা আজম খানের পালা। জেলে মুখতারের মৃত্যুর পর থেকে আজম খানের মৃত্যুর আশঙ্কায় ভুগছেন তাঁর অনুরাগীরা। !

Advertisement

কম-বেশি ৮০টির বেশি মামলা রয়েছে সীতাপুর জেলে বন্দি থাকা রামপুরের আজম খানের বিরুদ্ধে। এক সময়ে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে তাঁর নামে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত। উত্তরপ্রদেশে মুলায়ম সিংহ যাদবের জমানায় বকলমে তিনিই রাজ্য চালাতেন। কিন্তু ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের শাসন শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রভাব কমতে থাকে আজমের। ২০২২ সালে রামপুর থেকে বিধানসভা নির্বাচনে হারার পর থেকেই তাঁর পতনের শুরু। ২০২৩ সালে ছেলের ভুয়ো জন্মশংসাপত্র ব্যবহারের জন্য আজম খান, তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে সাত বছরের জেলে রাখার আদেশ দেয় আদালত। সেই থেকেই সীতাপুর জেলে তিনি।

তবে মুখতার আনসারির মৃত্যুর পরে আতঙ্কিত আজমের কট্টর সমর্থকেরা। ছোটা নবাবের শহর বলে পরিচিত রামপুরে বাড়ি আজমের। বাবা-ছেলে দু’জনেই জেলে। ভোটবাজারে তাই খাঁ-খাঁ করছে গোটা বাড়ি। স্থানীয় সমাজবাদী পার্টি দফতরে আলাপ হল আদিল খানের সঙ্গে। আদিলের বাবা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আজমের সঙ্গে সমাজবাদী পার্টি করেছেন। সেই আদিলের আশঙ্কা, ‘‘অপরাধী হলেই এনকাউন্টার করে দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে আতিক আনসারি ও তারপরে মুখতার আনসারির মৃত্যু যথেষ্ট সন্দেহজনক। আমাদের আশঙ্কা, আজম খানের সঙ্গেও এমন কিছু হতে পারে।’’

Advertisement

আজমের জীবন সংশয় হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন বিজেপি নেতা স্বামীপ্রসাদ মৌর্যও। বর্তমানে মৌর্যের দল সমাজবাদী দলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। তাঁরও আশঙ্কা, মুখতারের মতো আজমও ষড়যন্ত্রের শিকার হতে পারেন। মুখতারের মৃত্যুর পিছনে খাবারে দীর্ঘ সময় ধরে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ আনছেন মৌর্য। সেই কারণে আজম খানকে জেলে দেওয়া খাবার যেন পরীক্ষা করে দেখা হয় সে জন্যও আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে। এখনও শুনানি হয়নি।

দেশের প্রথম লোকসভা নির্বাচনে এই আসন থেকেই জিতে শিক্ষামন্ত্রী হয়েছিলেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ। সেই রামপুর থেকে ১০ বার বিধায়ক এবং এক বার সাংসদ হিসাবে জিতেছেন মুলায়ম সিংহের বিশেষ ঘনিষ্ঠ আজম। মূলত যাঁর ভরসায় উত্তর-পশ্চিম ভারতে একচেটিয়া রাজ করেছে সমাজবাজী পার্টি। কিন্তু সেই দলও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। রামপুরে মহম্মদ আলি বিশ্বভারতীর শিক্ষক গিয়াসুদ্দিন খানের মতে, ‘‘রামপুরের টিকিট বণ্টন নিয়ে যা হল তা থেকেই স্পষ্ট আজম খানের সঙ্গে অখিলেশের দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে।’’ বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি হাতিয়ে নেওয়া, মারধর, হত্যার মতো কম-বেশি ৮০টি অপরাধ রয়েছে আজম খানের বিরুদ্ধে। অনেকেই মনে করছেন, বাবা মুলায়ম আজমের কর্তৃত্বকে মেনে নিলেও, ছেলে অখিলেশ তাঁর সঙ্গে দূরত্ব রচনার কৌশল নিয়ে এগানোর পক্ষপাতী।

স্থানীয়দের মতে, আজম খানের কারণে এলাকার কিছু দুষ্কৃতী এবং হাতে গোনা কিছু পরিবার ছাড়া কেউ উপকৃত হয়নি। উল্টে আজমের উপদ্রব কমায় স্বস্তিতে আমজনতা। বিশেষ করে শিক্ষিত সমাজ। গিয়াসুদ্দিনের কথায়, ‘‘শিক্ষিত ব্যক্তিকে কোনও দিন সম্মান দিতে পারেনি আজম। সম্মাননীয় ব্যক্তিকে বেইজ্জত করে আনন্দ পেত। জমি দখলের লক্ষ্যে তাঁদের ভুয়ো মামলায় ফাঁসানো হত। ফলে আজম জেলে যাওয়ায় শিক্ষিত সমাজে কোনও হেলদোল নেই।’’

রাজনীতির অনেকের মতেই, এ বার নিজের কেন্দ্র রামপুর ও পার্শ্ববর্তী মোরাদাবাদ কেন্দ্রে আজমের বেছে দেওয়া প্রার্থীদের যে ভাবে অখিলেশ পাল্টে দেন, তা থেকেই স্পষ্ট সমাজবাদী শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে গুরুত্ব হারিয়েছেন ওই মুসলিম নেতা। যা তাঁকে রাজনৈতিক ভাবে আরও দুর্বল করে দিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement