প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাহুল গান্ধী। —ফাইল ছবি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধীর দ্বৈরথ আজ পৌঁছল দক্ষিণ ভারতে। দক্ষিণে আসন বাড়াতে মরিয়া মোদী কেরলের পালাক্কাড ও তিরুঅনন্তপুরমে দুটি জনসভায় রাহুল গান্ধীর নাম না করে, তাঁকে ‘যুবরাজ’ সম্বোধনে বিঁধলেন। দিল্লিতে কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের মৈত্রী আর কেরলে যুদ্ধ— এই ‘দ্বিচারিতা’ তুলে ধরে কটাক্ষ করলেন। অন্যদিকে, ওই রাজ্যেরই ওয়ানাড়ে রোড শো এবং কোঝিকোড়ের জনসভায় রাহুলের বক্তব্য, মোদী এক দেশ এক নেতা এক ভাষার তত্ত্ব আমদানি করে দেশকে আসলে অপমানই করছেন। নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র ওয়ানাড়ের সবাইকে তাঁর পরিবারের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করে রাহুল বলেন, সিপিএমের নেতা কর্মীর সঙ্গেও তিনি অশালীন ব্যবহার করতে পারবেন না।
রাহুলের নাম না করে মোদী আজ কেরলের জনসভায় বলেন, “উত্তরপ্রদেশে নিজেদের খানদানি আসনে সম্মান বাঁচানো মুশকিল বলে কংগ্রেসের এক বড় নেতা কেরলে এসে নতুন ঘাঁটি গেড়েছেন। এমন সংগঠনের রাজনৈতিক শাখার সঙ্গে খিড়কির দরজা দিয়ে যোগাযোগ করেছেন— যাদের দেশবিরোধী বলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কংগ্রেসের যুবরাজ এসে এখানে আপনাদের কাছে ভোট চাইবেন। কিন্তু আপনাদের দাবিদাওয়া নিয়ে, আপনাদের বিষয়গুলি নিয়ে একটি শব্দও বলবেন না।” মোদী অভিযোগ করেন, দেশবিরোধী কার্যকলাপের জন্য নিষিদ্ধ এক সংগঠনের রাজনৈতিক শাখা এসডিপিআই-এর সঙ্গে কেরলে পিছনের দরজা দিয়ে যোগাযোগ রাখছে কংগ্রেস। তাঁর কথায়, কংগ্রেস কেরলে বাম নেতাকর্মীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে। অথচ দিল্লিতে সেই সন্ত্রাসীদের সঙ্গেই তারা একসঙ্গে ঘোরে ফেরে খাওয়াদাওয়া করে, নির্বাচনের কৌশল তৈরি করে।
কেরলে কংগ্রেসের জোট ইউডিএফ এবং বামেদের জোট এলডিএফ-কে একই বন্ধনীতে রেখে এনডিএ-র মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন মোদী তাঁর বক্তৃতায়। বলেছেন, “বিজেপির শক্তিতে দেশ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। অথচ দেখা যাচ্ছে, এলডিএফ ও ইউডিএফ কেরলকে পিছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই এলাকার বিকাশের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার লাগাতার চেষ্টা করে গেলেও রাজ্য সরকার তাতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এরা জাতীয় সড়ক প্রকল্পেও বাধা দিতে চায়।”
বাম নেতৃত্বকে আক্রমণ করে মোদী বলেন, “ত্রিপুরা, বাংলা কিংবা কেরল— বামেদের চরিত্র একটাই। তা হল, নাথিং লেফট নাথিং রাইট। অর্থাৎ, যখন বাম সরকার আসে, তারা কিছুই রেখে যায় না। কিছুই সঠিক করে না।”
রাহুল গান্ধী আজ তামিলনাড়ুর নীলগিরি থেকে নিজের লোকসভা কেন্দ্র ওয়েনাড়-এ পৌঁছে রোড শো করেন। সন্ধেবেলা কোজিকোড়ে জনসভাও করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর আক্রমণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সরাসরি কিছু না বলে রাহুলের মন্তব্য, “মোদী যে এক রাষ্ট্র এক ভাষা এক নেতার কথা বলেন, তাতে দেশকে ভুল বোঝা হয়। দেশকে অপমান করা হয়।” বাম–কংগ্রেস ‘দ্বিচারিতার’ অভিযোগ প্রসঙ্গে রাহুল বলেন, “আমি নিশ্চিত, বামফ্রন্টের মধ্যেও কিছু লোক আমাকে সমর্থন করবেন। এখানে সবাই আমার পরিবারের সদস্য। যদি কোনও বাম সমর্থকের সঙ্গে আমার দেখা হয়, তাঁকে বলতেই পারি, মতাদর্শ না মিললেও আলোচনা করতে সমস্যা নেই। আমি তাঁকে বোঝাতে পারি, কেন আমার আদর্শ তাঁর থেকে ভাল। কিন্তু কখনওই সেই বাম সমর্থকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করব না। তাঁকে অপমান করব না।”
মোদীর প্রচার ছিল, গোটা দেশবাসীই তাঁর পরিবার। এ নিয়ে রাহুলের জবাব, “শুধু বললেই তো হয় না। একটি পরিবারের মধ্যেও বিভিন্ন মতের লোক থাকে, তাদের সবাইকে আপন করতে হয়। কিন্তু এখানে আসল লড়াইটা হল আরএসএস-র আদর্শের সঙ্গে আমাদের। আমরা ব্রিটিশদের থেকে এই কারণে স্বাধীনতা পাইনি যে ভবিষ্যতে আমরা আরএসএস-র মতাদর্শের কাছে নিজেদের আদর্শকে খোয়াবো।”