—প্রতীকী ছবি।
গত লোকসভা নির্বাচনের চেয়ে বেশি আসনে বাংলায় জেতার লক্ষ্য নিয়েছে রাজ্য বিজেপি। লক্ষ্যপূরণে পরিকল্পনায় ফাঁক রাখছে না বিজেপি শিবির। কিন্তু এই সব কিছুর মধ্যে উঁকি দিচ্ছে বাম ভোটের অঙ্ক। কাঁটার মতো বিঁধছে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাম-জোটের ভোট বৃদ্ধি। ওই ভোটে কাদের ‘যাত্রা ভঙ্গ’ হবে, সেই নিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণ হিসাব কষছে বিজেপি।
বিগত পঞ্চায়েত ও পুরভোটে বিজেপির ভোট বিধানসভার তুলনায় কমেছিল, ভোট বেড়েছিল বামেদের। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে তাঁদের জন্য যে চিন্তার কারণ আছে, তা বুঝেই বামেদের বিরুদ্ধে আক্রমণও জোরালো করছেন বিজেপি নেতারা। নদিয়ার করিমপুরে (মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের অধীন) জনসভায় গিয়ে বুধবারই যেমন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, ‘‘এরা (সিপিএম-কংগ্রেস) ভোটারদের কাছে কোনও রেখাপাত করতে পারবে না। রাজ্যের বাইরে সীতারামকাকুর সঙ্গে মমতাপিসি ও ভাইপো গোপনে ‘সেটিং’ করছেন আর এ দিকে মীনাক্ষী, শতরূপেরা চিৎকার করতে গিয়ে গলার শিরা ফুলিয়ে ফেলছেন! সিপিএমকে ভোট দেওয়া মানে তৃণমূলকে সহযোগিতা করা।’’ বিজেপি নেতৃত্বের আরও দাবি, স্থানীয় নির্বাচনে নিচু তলার কিছু সমীকরণের উপর দাঁড়িয়ে বামেরা ভোট পেলেও দেশের সরকার নির্বাচনের ভোটে তার প্রভাব পড়বে না।
বিজেপি শিবিরের অন্দরে চর্চা অবশ্য অন্য রকম। বিজেপি শিবিরের একাংশের বক্তব্য, নদিয়ার দুই আসনের পাশাপাশি মালদহ, উত্তর দিনাজপুরেও নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে বাম-জোটের ভোট। বিজেপির এক রাজ্য নেতার কথায়, “সিএএ হওয়ার আগেও মতুয়ারা বিজেপিকে ঢেলে ভোট দিয়েছিলেন। সিএএ চালু না হলে সেটার একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও পড়তে পারত। কিন্তু নতুন করে আর ইতিবাচক প্রভাব পড়ার জায়গা কোথায়?”
নদিয়ার রানাঘাট আসনে গত নির্বাচনে বিজেপিই জিতেছিল। কিন্তু সেখানেই কাঁটা হয়ে রয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাম-জোটের ভোট বৃদ্ধির হিসাব। স্থানীয় এক নেতার কথায়, “গত লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম ১.৯৫% ভোট পেয়েছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই ভোট বেড়ে হয়েছে ১৩%। সেই ভোট যদি সিপিএম ধরে রাখে, তা হলে সমস্যা হতে পারে।” যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁর আশা, ‘‘হয়তো রানাঘাটে জিতব। কিন্তু সাংসদ প্রচারে বেরিয়ে যা উচ্চ প্রত্যাশার কথা বলছেন। শেষ পর্যন্ত সেটা না ব্যুমেরাং হয়ে যায়!’’
কৃষ্ণনগর লোকসভা জয়ের বিষয়েও আশাবাদী বিজেপি। তবে সেখানেও মাথায় রাখতে হচ্ছে পঞ্চায়েতের হিসাব। বাম ও কংগ্রেসের মিলিত প্রার্থীর সংখ্যা বিজেপির চেয়ে বেশি ছিল। এমনকি, ফলাফলেও বিজেপির ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেছিল বাম-জোট। বিজেপির ওই নেতার কথায়, ‘‘এই সন্ত্রাসের মধ্যেও আমরা এই লোকসভার ৪০টি গ্রাম পঞ্চায়েত জিতেছি। সেগুলি থেকে যত সম্ভব ব্যবধান বাড়িয়ে রাখাই লক্ষ্য।’’
মালদহের দু’টি আসন ও রায়গঞ্জ আসন নিয়েও চিন্তা রয়েছে গেরুয়া শিবিরের অভ্যন্তরে। রায়গঞ্জ লোকসভা নিয়ে এক বিজেপি নেতার আশঙ্কা, ‘‘বার বার ‘ফ্লুক’ হয় না!’’ তার উপরে বাড়তি চিন্তা বাম-কংগ্রেস জোট। পঞ্চায়েতের ফলাফল মাথায় রাখলে তার যথেষ্ট কারণও আছে। মালদহ দক্ষিণ আসনে গত বছর সামান্য ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী। যে আসনে বামেরা প্রার্থী না দিয়ে কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছিল। এ বার সেই আসন জিততে মরিয়া বিজেপি। সেই সঙ্গে ধরে রাখতে চায় মালদহ উত্তর আসনও। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে এই জেলায় বিজেপি ও বাম-জোট কার্যত সমান সমান। কিন্তু এলাকার সমীকরণ কী বলছে? এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘মানছি লোকসভার ভোট হবে নরেন্দ্র মোদীকে দেখে। কিন্তু বাম-কংগ্রেস-তৃণমূলের ভোট ভাগ এবং মেরুকরণ না হলে জেতা মুশকিল।”
জেলায় জেলায় বিজেপি নেতারা গোষ্ঠী-কোন্দলের কথাও মাথায় রাখছেন। তবে তাঁদের ভরসা, প্রার্থী ঘোষণা হলে সবাই নরেন্দ্র মোদীর নামে ভোটে ঝাঁপান। ফলে, ভোট বৈতরণী সুষ্ঠু ভাবে পার করতে এখন তাঁদের একমাত্র চিন্তা, বাম ভোট কোন দিকে ঘুরবে। কলকাতা জ়োনের এক বিজেপি নেতা অবশ্য বিষয়টাকে ইতিবাচক হিসেবে নিচ্ছেন। তাঁর কথায়, “বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট হলে তা তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরাবে। আদতে আমাদের সুবিধাই হবে।”