শুভেন্দু অধিকারী ও সুকান্ত মজুমদার। — ফাইল চিত্র।
রাজভবনে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ‘সৌজন্য’ সাক্ষাৎ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আরামবাগের সভা থেকে মোদী তৃণমূল কংগ্রেসকে কড়া আক্রমণ করে আসার পরেই মমতার সঙ্গে ওই বৈঠককে ঘিরে ‘সেটিং’ চর্চা উস্কে দিয়েছে সিপিএম ও কংগ্রেস। এই জল্পনার মধ্যেই শনিবার কৃষ্ণনগরে রাজ্য বিজেপির দুই সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারী ও সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সূত্রের খবর, রাজ্য প্রশাসনে আইপিএস এবং আইএএস অফিসারদের একাংশের ভূমিকা যে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’, সন্দেশখালি-সহ একাধিক ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সেই অভিযোগ করেছেন শুভেন্দুরা। পাশাপাশিই দুই বিজেপি নেতার প্রশ্নে মোদী তাঁদের জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজভবনে তাঁর বৈঠকে রাজনীতির বিষয়ে কথা হয়নি। বাংলায় তাঁরা যে ভাবে লড়াই চালাচ্ছেন, শুভেন্দু-সুকান্তকে তা এগিয়ে নিয়ে যেতে পরামর্শও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
কৃষ্ণনগরে মোদীর জনসভার পরে এ দিন মঞ্চের পিছনের তাঁবুতে প্রধানমন্ত্রী আলাদা করে ডাকেন রাজ্য বিজেপির দুই শীর্ষ নেতাকে। সূত্রের খবর, বৈঠকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত রাজ্যে কর্মরত আইপিএস এবং আইএএসদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, আধিকারিকদের ওই অংশ প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহির প্রশ্ন বিসর্জন দিয়ে রাজ্যের শাসক দলের ‘অনুগত’ হয়ে কাজ এবং পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যের দুর্নীতি নিয়েও তাঁরা ‘নালিশ’ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সব কথাই শুনেছেন। সেই সঙ্গে দলের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। সুকান্ত পরে বলেন, “অভ্যন্তরীণ বৈঠক। বৈঠকের বিষয় নিয়ে বাইরে বলব না। তবে রাজ্যে রাজনীতিকে যা যা প্রভাবিত করে, সেই সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে।”
এ বারের বঙ্গ সফর সেরে চলে যাওয়ার পথে মোদীও এ দিন শুভেন্দু-সুকান্তের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গে নিজের এক্স হ্যান্ড্লে মন্তব্য করেছেন, ‘‘সাধারণ মানুষের মধ্যে আমাদের সুশাসনের কর্মসূচি কী ভাবে আরও ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তৃণমূলের অপশাসনের বিরুদ্ধে বাংলার যে কর্মীরা সাহস ও আবেগের সঙ্গে লড়াই করছেন, তাঁদের কুর্নিশ জানাই।’’
আরামবাগের সমাবেশ থেকে মুখ্যমন্ত্রীও চড়া সুরে আক্রমণ করেন মোদী। কিন্তু তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই রাজভবনে তাঁদের সৌজন্য সাক্ষাৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল রাজনৈতিক শিবিরের একাংশে। তাদের মতে, বৈঠকের ফলে মোদীর মমতাকে রাজনৈতিক আক্রমণ অনেকাংশে ‘লঘু’ হয়ে যায়। ‘সেটিং’-এর অভিযোগে ফের সরব হয়েছে সিপিএম-কংগ্রেস। যদিও সুকান্ত এই যুক্তি মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা করেন, তা বলেন না। যা বলেন, তা করেন না! আমি বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছি, তাঁদের মধ্যে সরকারি বিষয়ে কথা হয়েছে। রাজনীতি নিয়ে কোনও কথা হয়নি।’’ মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতের পরে শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘বিশ্বের জনপ্রিয়তম নেতা যখন লড়াইকে স্বীকৃতি দেন, তার চেয়ে গর্বের মুহূর্ত আর কিছু হয় না।’’