শঙ্কর ঘোষের পরিজনের সঙ্গে সুকান্ত মজুমদার। নিজস্ব চিত্র।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মুখে মোর্চা নেতা বিমল গুরুংয়ের নাম আসায় দার্জিলিং পাহাড়ে নানা আলোচনা শুরু হয়ে গেল। এ নিয়ে গুরুং-শিবির মুখে কুলুপ আঁটলেও বিজেপি ও মোর্চা আবার কাছাকাছি আসছে কি না, সে প্রশ্ন পাহাড়ে ঘোরাফেরা করছে। দার্জিলিঙে এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিজেপি। কিন্তু পাহাড়ে তাদের জোট-সঙ্গী জিএনএলএফ, সিপিআরএমের মতো দলগুলির সঙ্গে নেতৃত্ব যোগাযোগ রেখে চলছেন। বিশেষ করে, গত পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির নেতৃত্বে পাহাড়ে তৈরি জোট বিজেপি নেতারা লোকসভায় বজায় রাখতে চাইছেন। সেখানে হামরো পার্টি এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে নিয়েই দল
উৎসাহী।
সুকান্ত মঙ্গলবার দিল্লি থেকে শিলিগুড়ি আসেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মনে হয় না পাহাড়ে অনীত থাপা কোনও ফ্যাক্টর। অনীত থাপার থেকে অনেক বড় নেতা বিমল গুরুং। পাহাড়ের আবেগ যদি কারও কাছে থাকে, তা হলে বিমল গুরুংয়ের সঙ্গেই রয়েছে।’’
মোর্চার তরফে অবশ্য এখনও লোকসভা ভোট নিয়ে সরকারি ভাবে উচ্চবাচ্য করা হয়নি। গোর্খা জনমুক্তি যুব মোর্চা অবশ্য বিমলকে প্রার্থী করার পক্ষপাতী। আবার পাহাড় ও সমতলের কতগুলি ছোট ছোট দল, সংগঠনও গুরুংকে এক দফায় প্রার্থী হতে বলছেন। কিন্তু গুরুং এতে খুব একটা উৎসাহী নন বলেই দলীয় সূত্রের খবর। তিনি শুধু বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত সময় মতো ঘোষণা করে দেওয়া হবে।’’
দলীয় সূত্রের খবর, ২০২১ সালের পর থেকে পাহাড়ে গুরুংয়ের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ কমতে শুরু করে। গত ১৫ বছরে গুরুংয়ের সমর্থনেই পাহাড়ে বিজেপি তিন জন সাংসদ পেয়েছে। কিন্তু সাড়ে তিন বছর পাহাড়-ছাড়া থাকার পরে, তাঁর সংগঠনের বেশিরভাগই পাহাড়ের বর্তমান শাসক দল, অনীত থাপার প্রজাতান্ত্রিক মোর্চায় মিশে গিয়েছে। গত বিধানসভায় গুরুংয়ের দলের প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের জন্য অনীতেরা কার্শিয়াং এবং দার্জিলিং আসনটি হারেন। কিন্তু ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) ভোট থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। গুরুং ভোটের বিরোধিতা করায় তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। পুরসভা ভোটেও গুরুংয়ের দলের কার্যত অস্তিত্ব ছিল না। গত পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি শিবিরে থাকলেও তেমন কোনও ফলই হয়নি।
কিন্তু বিজেপি নেতারা মনে করছেন, গত তিন বছরে পাহাড়ে একদলীয় শাসন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন দল ভোট পাচ্ছে। সেখানে গুরুং, মন ঘিসিংদের এক জোট করে লোকসভাতেও লড়াই করার পক্ষপাতী বিজেপি শিবির। সেখানে কমে গেলেও গুরুংকে নিয়ে আবেগ কিছু কিছু জায়গায় রয়েছে। তবে গুরুং বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাবেন কি না তা এখনও পরিষ্কার নয়।
জিটিএ প্রধান অনীত থাপা বলেছেন, ‘‘আমরা আমাদের প্রার্থীর প্রচার নিয়ে ব্যস্ত। বিরোধীরা আগে প্রার্থী ঠিক করুন।’’ আর প্রদেশ কংগ্রেসের পাহাড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিনয় তামাং বলেছেন, ‘‘গুরুং কী করবেন, জানি না। আমরাও নিজেদের রণকৌশল নিয়ে এগোচ্ছি।’’