—প্রতীকী চিত্র।
ভোট শেষ হয়েছে। এ বার শুরু হয়েছে হিসেব-নিকেশ। দফায়-দফায় বৈঠকে বসছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। কার ঝুলিতে কত ভোট যেতে পারে, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। জেলার রাজনীতিতে বড় ‘ফ্যাক্টর’ রাজবংশী সমাজের ভোট কার ঝুলিতে যাবে, অঙ্ক কষা চলছে তা নিয়েও। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের দাবি, এ বার রাজবংশী সমাজের ভোট তাদের দিকেই গিয়েছে। কারণ, গত দশ বছরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোচবিহারে রাজবংশীদের উন্নয়নে একের পরs এক পদক্ষেপ নিয়েছেন। সেখানে গত পাঁচ বছরে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার রাজবংশী সমাজের মানুষদের প্রতিশ্রুতির বদলে কিছু দেয়নি। অন্য দিকে, বিজেপির আবার দাবি, রাজবংশী সমাজের মানুষ তাদের পক্ষেই ছিলেন। এ বারও তার ব্যতিক্রম হবে না।
তৃণমূলের কোচবিহার জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ বলেছেন, “রাজবংশী সমাজের মানুষের এ বার অন্য কিছু ভাবার প্রয়োজন হয়নি। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যা-যা দাবি তাঁরা করেছিলেন, প্রায় প্রত্যেকটাই পূরণ হয়েছে। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকার তো কিছুই করেনি। স্বাভাবিক ভাবেই, বিজেপির দিক থেকে সবাই তাই সরে এসেছে।”
বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক বিরাজ বসু অবশ্য তা মানতে চাননি। তাঁর অভিযোগ, রাজবংশী সমাজের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নের বিষয়ে তৃণমূল সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। তাঁর বক্তব্য, “লোকদেখানো কিছু বিষয় উন্নয়ন বলে চালাতে চেয়েছিল তৃণমূল সরকার। প্রকৃত উন্নয়ন তো করা হয়নি। সেটা রাজবংশী মানুষের ভাল ভাবেই জানেন। তাই তৃণমূলের পক্ষে ভুলেও কেউ ভোট দেননি।”
ভোট পরিসংখ্যানে যদি দেখা যায়, কোচবিহার জেলায় ৩২ শতাংশের উপরে রয়েছে রাজবংশী ভোটার। সেই সঙ্গে ২৭ শতাংশের কিছু বেশি সংখ্যালঘু ভোটার। অনেকেই মনে করেন, সংখ্যালঘু ভোটের বেশির ভাগ অংশ তৃণমূলের ঝুলিতে যাবে। সেই সঙ্গে রাজবংশী ভোটের একটি অংশ তৃণমূল যদি নিজের দিকে টানতে পারে, তা হলে শাসক দলের এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তৃণমূলের হিসেব, বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ তথা গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের নগেন্দ্র রায় তথা অনন্ত মহারাজের প্রভাব রয়েছে রাজবংশী সমাজের একটি অংশের উপরে। এ বার অনন্তকে তেমন ভাবে বিজেপির প্রচারে দেখা যায়নি। এমনকি, ভোটের আগে তিনি এমন কিছু বার্তাও দিয়েছেন যা বিজেপির বিপক্ষেই বলা চলে। আর এক গ্রেটার নেতা বংশীবদন বর্মণ তো সরাসরি তৃণমূলের হয়েই প্রচার করছেন।
বিজেপি অবশ্য মনে করছে, উদ্বাস্তু ভোটের বড় অংশ তাদের পক্ষে যাবে। সেই সঙ্গে রাজবংশী ভোট হলে যোগ হলে অতি সহজেই জয় হাতের মুঠোয় আসবে। গেরুয়া শিবিরের অন্দরে এ-ও শোনা যাচ্ছে, অনন্ত রায়ের মনে কিছুটা ক্ষোভ থাকলেও, তিনি বিজেপির পক্ষেই কাজ করেছেন। এ ছাড়া, রাজবংশী সমাজের একটি বড় অংশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীকে পছন্দ করেন। ভোটেও তার ছাপ পড়বে বলে মনে করছে বিজেপি।