সীতারাম ইয়েচুরি। —ফাইল চিত্র।
রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র শেষে মুম্বইয়ের জনসভায় আমন্ত্রণ সত্ত্বেও গরহাজির থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা। এ বার সিপিএম ও সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিষয়—বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চে আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেসের মনোভাব।
সিপিএম, সিপিআই নেতৃত্বের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল বাদ দিলে ভারতে কংগ্রেস দুই প্রধান বাম শরিক— সিপিএম ও সিপিআইয়ের জন্য মাত্র দু’টি আসন ছেড়েছে। একটি রাজস্থানে সিপিএমের জন্য। অন্যটি অন্ধ্রপ্রদেশে, সিপিআইয়ের জন্য। অথচ দুই দলই কংগ্রেসের কাছে সাত-আটটি করে আসন ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল। তার বিনিময়ে বামেদের প্রতিশ্রুতি ছিল, অন্যান্য সমস্ত রাজ্যে বামেরা সীমিত শক্তি নিয়েও কংগ্রেসের পাশে থাকবে। বাম কর্মী, সমর্থকদের কংগ্রেস বা কংগ্রেসের শরিক দলগুলিকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো হবে। তা সত্ত্বেও কংগ্রেস কোনও রাজ্যে সিপিএম, সিপিআইকে দু’টির বেশি আসন ছাড়তে চায়নি। একমাত্র রাজস্থানের সীকর আসনে কংগ্রেস সিপিএম প্রার্থী আমরা রামকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মঙ্গলবার রামের মনোনয়ন জমার সময় রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি গোবিন্দ সিংহ ডোটাসরা হাজিরও ছিলেন। অন্য দিকে সিপিআইয়ের জন্য শুধুমাত্র অন্ধ্রের বিজয়ওয়াড়া আসন ছেড়েছে কংগ্রেস।
কংগ্রেসের এই মনোভাবে সিপিএম, সিপিআই নেতৃত্ব বিরক্ত। তাঁদের বক্তব্য, বামেরা প্রথম থেকেই বিজেপি বিরোধী জোটে কংগ্রেসের পাশে রয়েছে। কেরলে বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের মূল লড়াই হলেও বামেরা জাতীয় স্তরে জোট থেকে সরেনি। অথচ রাহুল গান্ধী কেরলে বামেদের বিরুদ্ধে লড়ছেন। তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম উদ্যোগী হয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করছে। তার জন্য সিপিআই, ফরোয়ার্ড ব্লক, আরএসপি-কে কম আসনে লড়ে আত্মত্যাগ করতে হচ্ছে। কিন্তু অন্যান্য রাজ্যে কংগ্রেস সিপিএম, সিপিআইকে জমি ছাড়তে চাইছে না। কংগ্রেসের এই মনোভাবে বিরক্ত হয়েই গত ১৭ মার্চ ইয়েচুরি, রাজা মুম্বইতে রাহুল গান্ধীর যাত্রার শেষে জনসভায় যাননি। এ বার তাঁরা ঠিক করেছেন, খড়্গের সঙ্গে দেখা করে নিজেদের বিরক্তি প্রকাশ করবেন। খড়্গের কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। আগামী দু’একদিনের মধ্যেই বৈঠক হতে পারে।
বাম নেতাদের বক্তব্য, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে সিপিএম, সিপিআই-তে দু’টি করে আসন ছাড়ছে। বিহারে আরজেডি একটি করে আসন ছেড়েছে। ত্রিপুরায় একটি করে আসনে আসন সমঝোতা হতে পারে। কিন্তু সিপিএম পঞ্জাব, হিমাচল, অসমে কংগ্রেসের থেকে একটি করে আসন চাইলেও পায়নি। বাধ্য হয়ে সিপিএম কংগ্রেসের সাহায্য ছাড়াই অসম, পঞ্জাব, হিমাচলে একটি করে আসনে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই ভাবে সিপিআই জানিয়েছে, তারা ছত্তীসগঢ়ের বস্তার, ওড়িশার জগৎসিংহপুর, ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ, পঞ্জাবের ভাটিন্ডা, তেলঙ্গানার ওয়ারঙ্গল, মহারাষ্ট্রের শিরডি আসনে লড়বে। বাম নেতাদের মতে, হিমাচলে বা বস্তারেকংগ্রেস সমর্থন করলে বামেদের আসন জেতার সুযোগ তৈরি হত। কিন্তু কংগ্রেস সেই উদার মনোভাব দেখায়নি। রাজস্থানের সীকরে সিপিএম প্রার্থী দিলে কংগ্রেসের জেতার সম্ভাবনা নেই বুঝেই তারা এই আসন ছেড়েছে।