গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সন্দেশখালিতে ধর্ষণের ‘মিথ্যে’ অভিযোগ তোলা হয়েছিল বলে দাবি করলেন আরও এক মহিলা। সেই মহিলার বক্তব্যের একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। ভিডিয়োটির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। সেই ভিডিয়োয় মহিলার দাবি, তাঁকেও ধর্ষণ করা হয়েছে বলে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল থানায়। না জানিয়ে সাদা কাগজে সই করানো হয়েছিল। এক সপ্তাহ পর তিনি সবটা জানতে পারেন। মহিলার আরও দাবি, পরে যখন তিনি মামলা তুলতে চান, তাঁকে ‘হুমকি’ দেওয়া হয়। ভিডিয়োয় অভিযোগকারিণীর দাবি, এ সবের নেপথ্যে ছিলেন পিয়ালি দাস ওরফে মাম্পি।
পিয়ালির অবশ্য দাবি, সব অভিযোগ মিথ্যে। তিনি বলেন, ‘‘রেখা পাত্রের সঙ্গে থানায় গিয়ে উনি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পরে হয়তো পারিপার্শ্বিক চাপে উনি মামলা তুলে নিতে চান। তুলেও নেন। সাদা কাগজে সই করানোর যে কথা হচ্ছে, তা মিথ্যে। থানায় তো সিসিটিভি আছে। সেটা দেখা হোক। শাসকদলের লোকেরা টাকাপয়সার লোভ দেখিয়ে মহিলাদের দিয়ে এ সব বলিয়ে ভিডিয়ো ভাইরাল করছে। এ সবের কোনও সত্যতা নেই। তদন্ত হোক। যদি দোষী প্রমাণিত হই, তা হলে আইন যা শাস্তি দেবে, মাথা পেতে নেব। আর যদি তা না হয়, তা হলে কিন্তু আমি এদের নামে মানহানির মামলা করব।’’
সন্দেশখালি স্টিং অপারেশনের ভিডিয়ো নিয়ে তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। ৩২ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের সেই ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। সেই ভিডিয়ো স্থানীয় বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়ালকে বলতে শোনা গিয়েছে যে, সন্দেশখালিতে টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের ‘মিথ্যে’ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে। বসিরহাট আসনে বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রও দু’হাজার টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের ‘মিথ্যে’ অভিযোগ দায়ের করেছিলেন বলে দাবি করেছিলেন ওই পদ্মনেতা। বিজেপি অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে ওই ভিডিয়োকে সাজানো ও বিকৃত বলেছে। গঙ্গাধরও কণ্ঠস্বর বিকৃতির অভিযোগ তুলেছেন। তা নিয়ে শোরগোলের মধ্যেই আরও এক মহিলা দাবি করলেন, তিনিও ‘ধর্ষণের শিকার’ বলে থানায় ‘মিথ্যে’ অভিযোগ করা হয়েছিল।
প্রকাশ্যে আসা নতুন ভিডিয়োয় মহিলার বক্তব্য, তাঁর অভিযোগ ছিল, তাঁকে রান্নার কাজের টাকা দেওয়া হয়নি। সেই অভিযোগকেই ধর্ষণের অভিযোগের রূপ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে না জানিয়ে। মহিলার দাবি, ‘‘আমি বাড়িতে ছিলাম না। আমার শাশুড়িকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল মাম্পি দাস আর পিয়ালি দাস। দিল্লি থেকে মহিলা কমিশন এসেছে বলে থানায় নিয়ে গিয়েছিল। থানায় ঢুকিয়ে দিয়ে গেট ফেলে দিয়েছিল। উনি আর বেরোতে পারেননি। অভিযোগ কী জানতে চেয়েছিল, উনি জানিয়েছিলেন যে রান্নার কাজের টাকা পাইনি। এর পর সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছিল। এর পর ওখান থেকে চলে যেতে বলেছিল। আমি বাড়ি ফিরে পিয়ালিকে ফোন করে জানতে চেয়েছি। পিয়ালি আমায় বলেছে, ও কোনও ব্যাপার নয়। অভিযোগ ছিল, তাই সই করিয়েছি। তোমরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারো। এক সপ্তাহ পরে জানতে পারলাম, তিন-চার জনকে দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করানো হয়েছে। অভিযোগ ছিল, রাতে আমাদের তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে।’’
ভিডিয়োয় মহিলার দাবি, তিনি ও তাঁর শাশুড়ি পুলিশের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানেও তাঁরা জানিয়েছেন যে, ধর্ষণের মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। মহিলা জানান, তাঁরা ওই মিথ্যে মামলা তুলে নিতে চান। মহিলার কথায়, ‘‘যা ঘটেনি, সে সব নিয়ে কেন মামলা লড়ব? আমাদের অত ক্ষমতা নেই। আমরা এ সব ঝামেলার মধ্যে জড়াতে চাই না।’’ মহিলার দাবি, তিনি পিয়ালির কাছেও গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে অপমান, হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, ‘‘পিয়ালিকেও বলতে গিয়েছিলাম যে আমরা এই মামলা তুলে নিতে চাই। কিন্তু আমাদের অপমান করে দিল। বলল, ‘তোমাদের দ্বারা কিছু হবে না। তোমরা অসভ্য, ছোটলোক!’’ মহিলার আরও অভিযোগ, এ সব কারণে পাড়ায় তাঁরা একঘরে হয়ে গিয়েছেন।
সন্দেশখালির স্টিং অপারেশনের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরেই কার্যত বিড়ম্বনায় পড়েছে বিজেপি। ওই ভিডিয়োয় যে বিজেপি নেতার বয়ান ঘিরে এত শোরগোল, সেই গঙ্গাধর দাবি করেছেন, সন্দেশখালিতে টাকা নিয়ে ধর্ষণের মিথ্যে অভিযোগ পুলিশে দায়ের করানোর বিষয়টি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘মস্তিষ্কপ্রসূত’! শুভেন্দু অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। দাবি করেছেন, ভিডিয়োটি সম্পূর্ণ ভুয়ো এবং সাজানো হয়েছে। এর নেপথ্যে তৃণমূলের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু। সেই আবহে আরও এক ‘নির্যাতিতা’ একই দাবি করায় ভোটের আবহে পদ্ম শিবিরের বিড়ম্বনা আরও বাড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে।