Sandeshkhali Incident

গ্রেফতার চার বিজেপি কর্মী, ফের তাতল সন্দেশখালি 

রবিবার এক তৃণমূলকর্মীকে বেধড়ক মারধর ও বিধায়ক সুকুমার মাহাতো ও পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ দিলীপ মল্লিককে হেনস্থার অভিযোগে রাতেই চার বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২৪ ০৭:৩০
Share:

উত্তপ্ত সন্দেশখালি। —ফাইল চিত্র।

দ্বিতীয় দফার স্টিং ভিডিয়ো সামনে আসার পরে রবিবার অশান্তি হয়েছিল সন্দেশখালিতে। তার জের চলল সোমবারেও। এর মধ্যে এক মহিলা যৌন হেনস্থার ‘মিথ্যা অভিযোগ’ প্রত্যাহার করতে চাওয়ায় শুরু হয়েছে জলঘোলাও।

Advertisement

রবিবার এক তৃণমূলকর্মীকে বেধড়ক মারধর ও বিধায়ক সুকুমার মাহাতো ও পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ দিলীপ মল্লিককে হেনস্থার অভিযোগে রাতেই চার বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। প্রতিবাদে সোমবার বিকেলে বেড়মজুর ২ পঞ্চায়েতের কাঠপোল বাজারে আগুন জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করে বিজেপি। বিক্ষোভ দেখান শতাধিক মহিলা। পুলিশ এসে অবরোধ তুলতে লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশ এ কথা মানেনি। লাঠি উঁচিয়ে অবরোধকারীদের হটিয়ে দেওয়া হয় বলে পুলিশের দাবি। তৃণমূলকর্মীকে মারধরের প্রতিবাদে বিধায়কের নেতৃত্বে এ দিনই ন্যাজাটের কালীনগরে ধিক্কার-মিছিল করে তৃণমূল।

বিজেপি নেতা বিকাশ সিংহের অভিযোগ, “আমাদের কয়েক জন মহিলাকে গালিগালাজ করে রবিবার শাড়ি ছিঁড়ে দিয়েছিল তৃণমূলের ছেলেরা। থানায় মহিলারা অভিযোগ করেন তৃণমূল নেতা দিলীপ মল্লিক-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে। পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি।” অভিযোগ উড়িয়ে দিলীপ পাল্টা বলেন, “টিভিতে মানুষ দেখেছে, মহিলাদের নিয়ে এসে বিজেপি আমার বাড়ি ঘিরে ফেলে। বাড়ি থেকে বার করে মারধর করা হয় এক যুবককে। বিধায়ক ও আমাকে হেনস্থা করে। আমি বা আমার দলের কেউ কিছুই করিনি।”

Advertisement

এর মধ্যে রবিবার রাতে সন্দেশখালির এক প্রৌঢ়া যৌন হেনস্থার ‘মিথ্যা অভিযোগ’ থানা থেকে প্রত্যাহার করতে চাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করায় চলতে থাকা ‘নারী নির্যাতন’ বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। তাঁর পরিবার সূত্রে আরও দাবি করা হয়েছে, তিনি অভিযোগ তুলে নিতে চাওয়ায় বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র হুমকি দিচ্ছেন। রেখার পাড়াতেই তিনি থাকেন।

রবিবার রাতে সংবাদমাধ্যমকে ওই প্রৌঢ়া জানান, তাঁর ভাইকে সন্দেশখালির আন্দোলনের সময় পুলিশ গ্রেফতার করে। তাই তাঁর মানসিক অবস্থা ভাল ছিল না। পাড়ার অন্য মহিলাদের মতো তিনিও যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেন উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে। পিয়ালি দাস ওরফে মাম্পি তাঁকে প্রভাবিত করেন বলেও অভিযোগ ওই মহিলার। কিন্তু আর ‘মিথ্যা মামলা’ চালাতে চান না বলে জানান তিনি। তাঁর দাবি, এখন অনেকে সামনে এসে মুখ খুলছেন বলে তিনিও মুখ খোলার সাহস পেয়েছেন।

ওই প্রৌঢ়ার দাবি, “রেখা বলেছে, ‘যদি ভোটে জয়ী হই, পারবে তো ঠেকাতে?’ কে কত টাকা দিয়েছে, সে কথাও জিজ্ঞেস করেছে।” এ ব্যাপারে রেখার প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে, ওই গ্রামেরই পিয়ালি দাসের দাবি, “ওই প্রৌঢ়া কলকাতায় পরিচারিকার কাজ করেন। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অভিযোগ করেছিলেন। আমি প্রভাবিত করিনি।” পিয়ালির আরও দাবি, “শনিবার রাতে গাড়িতে করে দিলীপ মল্লিক কয়েক জন মহিলাকে কলকাতা থেকে ধামাখালি নিয়ে আসেন। ২০ হাজার টাকা দেন। তার পরেই রবিবার ওই প্রৌঢ়া সন্দেশখালি থানায় গিয়ে অভিযোগ তুলে নিতে চান।” দিলীপের পাল্টা দাবি, “আমি ওই মহিলার সঙ্গে এই নিয়ে কোনও কথাই বলিনি। সব ভিত্তিহীন অভিযোগ।”

রবিবার থেকেই প্রৌঢ়ার বাড়ির সামনে পুলিশ পাহারা বসেছে। তবে, ওই মহিলা রেখার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ করেছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। পুলিশ এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চায়নি।

এ দিন সন্দেশখালির পাঁচ মহিলা হুগলির ডানকুনিতে বিজেপি কার্যালয়ে এসে সংবাদমাধ্যমকে জানান, তাঁরা কেউ নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেননি থানায়। কেন? উত্তরে এক মহিলা বলেন, “আমরা অভিযোগ করলে পুলিশ আমাদের কথা শুনবে না। হাজার হাজার শাহজাহান তৈরি রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক বার এসে তো আমাদের কথা শুনতে পারতেন।” কিন্তু এখন তো সিবিআই তদন্ত করছে। তা হলে? এর কোনও স্পষ্ট জবাব মেলেনি।

ভোট-প্রচারে সমান ভাবেই রয়েছে সন্দেশখালি। এ দিন বনগাঁয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার বলেন, “সন্দেশখালির মা-বোনদের অপমান করতে টাকা খরচ করছে। মা-বোনদের নিয়ে চক্রান্তের খেলা খেলবেন না।” বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার পাল্টা বলেন, “খবর পেয়েছি, এক জন নির্যাতিতা, যিনি এর আগে অভিযোগ করেছেন, আমাদের প্রার্থী রেখা পাত্র তাঁর বাড়ি গিয়ে দেখেন, তাঁর (নির্যাতিতার) বিছানার উপরে ছ’-সাত জন সিভিক ভলান্টিয়ার বসে আছেন।” বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “এই যে আইপ্যাককে দিয়ে পুরো ভিডিয়ো-ষড়যন্ত্র হয়েছে, এটা যেমন ভাইপোর মস্তিষ্কপ্রসূত, তেমনই নেপথ্যে রয়েছেন বসিরহাটের এসপি মেহেদি হাসান (হোসেন মেহেদি রহমান), এসডিপিও আমিনুল। ভাইপোর কী পরিণতি হয় দেখবেন।” এসপি বা এসডিপিও এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

এ দিনই খুলনা পোলপাড়ায় বিজেপির বুথ সভাপতি সঞ্জয় মণ্ডলের বাড়িতে আসে সিবিআইয়ের একটি দল, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়কার একটি মারধরের অভিযোগের ভিত্তিতে। সঞ্জয় বলেন, “আমরা তৃণমূলের ভয়ে তখন পুলিশের কাছে যেতেই পারিনি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement