(বাঁ দিকে) রাজীব কুমার। মহম্মদ সেলিম (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
রাজ্য পুলিশের ডিজি (আপাতত নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে অপসারিত) রাজীব কুমারকে ‘পারদর্শী’ পুলিশ অফিসার বলে দরাজ শংসাপত্র দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সেই সঙ্গে এ-ও দাবি করলেন, বাম আমলেই আমেরিকায় পাঠিয়ে রাজীবকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছিল। কিন্তু এখন ‘রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং’ হচ্ছে। অর্থাৎ, উল্টো কাজ করানো হচ্ছে রাজীবকে দিয়ে।
আনন্দবাজার অনলাইনের সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই: মুখোমুখি’-তে প্রশ্নোত্তরের মধ্যেই সেলিম কংগ্রেসের সঙ্গে ফোনে-ফোনে জোটের প্রসঙ্গ তোলেন। হাসতেই হাসতেই তিনি বলেন, ‘‘ফোনে-ফোনে জোট হয়ে গেল। কিন্তু কেউ জানতে পারল না।’’ তার পরেই সেলিম বলেন, ‘‘ফোনে তো আড়ি পাতা হয়! রাজীব কুমারের এটাই ডিউটি। সিপিএমের সময়কার ট্রেন্ড।’’ প্রত্যাশিত ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, সিপিএমের সময়ে ফোনে আড়ি পাততেন রাজীব? জবাবে সেলিম বলেন, ‘‘তখন এসটিএফ (স্পেশাল টাস্ক ফোর্স) করা হয়েছিল। আমেরিকা থেকে তাঁকে প্রশিক্ষিত করিয়ে আনা হয়েছিল। তখন আফতাব আনসারি মাথা তুলছে, খাদিমকর্তা পার্থ রায়বর্মণ অপহৃত হলেন। তখন অপরাধীদের ধরার জন্য, সন্ত্রাসবাদীদের ফান্ডিং ধরার জন্য বিদেশ থেকে ট্রেনিং করিয়ে আনা হয়েছিল। তিনি এফিশিয়েন্ট (পারদর্শী) অফিসার।’’
কিন্তু তার পরেই তৃণমূল জমানার রাজীবকে বেঁধেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘আগে যেটা করতেন, সেটা ছিল বেআইনি অর্থের জোগানকে ট্র্যাক (চিহ্নিত) করে যাতে অপরাধীকে ধরা যায়। কিন্তু সেই ইঞ্জিনিয়ারিংটা যদি রিভার্স (উল্টে) হয়ে যায়? কী ভাবে বেআইনি অর্থ রাজনীতিতে ঢুকল, তার সাক্ষীসাবুদ লোপাট করা যায় সেই কাজ করা হয়। তিনি (রাজীব) সেই ইঞ্জিনিয়ারিংই করছেন। তবে রিভার্স। তাঁকে কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।’’
তৃণমূল জমানার গোড়া থেকেই রাজীব কুমার বিবিধ কারণে খবরে থাকেন। সারদা মামলার শুরুতে তিনিই ছিলেন বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার। তাঁকে সিবিআই শিলংয়ে নিয়ে গিয়ে কুণাল ঘোষের মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল। তার আগে কলকাতার পুলিশ কমিশনার থাকালীন ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির গোড়ায় রাজীবের লাউডন স্ট্রিটের কমিশনারের বাংলোয় সিবিআই হানা, দ্রুত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেখানে পৌঁছে যাওয়া এবং তার পরে ধর্মতলায় মমতার টানা ধর্নার ঘটনাপ্রবাহ বঙ্গ রাজনীতিতে মাইলফলক হয়ে রয়েছে। পরবর্তী কালে রাজীব সরাসরি পুলিশে ছিলেন না। তাঁকে তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের সচিব করেছিল নবান্ন। কয়েক মাস আগে সেই তাঁকেই রাজ্য পুলিশের ডিজি করেছিল রাজ্য সরকার। যদিও ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর কমিশন তাঁকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে।