রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সিপিএম নেতারা। ছবি: রাহুল গান্ধীর দফতর ও সিপিএম সূত্রে।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র আক্রমণে চলে গেলেও কৌশলগত কারণে এখনও প্রকাশ্যে শান্তি ও ঐক্যের বার্তা দিয়ে চলেছেন রাহুল গান্ধী এবং সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব। তবে ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র অবসরে বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে এ রাজ্যের সিপিএম নেতাদের সঙ্গে একান্তে আলোচনা সেরে গেলেন রাহুল। জানতে চাইলেন বাংলায় বিজেপির উত্থানের রহস্য কী!
জেলায় জেলায় সরকারি মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা যখন সিপিএম ও কংগ্রেসকে তুলোধোনা করছেন, কলকাতায় ধর্নায় বসে রাহুলের নাম না করে তাঁর স্লোগানকে ‘মহব্বত কি শপিং মল’ বলে কটাক্ষ করছেন, সেই সময়েই সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে মত বিনিময় করে গিয়েছেন ওয়েনাড়ের কংগ্রেস সাংসদ। মালদহে ‘ন্যায় যাত্রা’র পথে রাহুল বাসে তুলে নিয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য শতরূপ ঘোষকে। যাত্রাপথেই দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে দু’জনের। এর পরে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর সঙ্গে মত বিনিময় হয়েছে রাহুলের। বীরভূমে শুক্রবার রাহুলের যাত্রায় থাকার কথা ছিল সিপিএমের আর এক পলিটব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোমের। তবে নিকটাত্মীয় বিয়োগের কারণে রামচন্দ্র শেষ পর্যন্ত আসতে পারেননি। বীরভূমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ ও সিপিএমের অন্য প্রতিনিধিরা ছিলেন। ‘ন্যায় যাত্রা’য় অংশগ্রহণের জন্য সকলকেই কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন রাহুল।
বাংলায় বিজেপির কেন এত বাড়বাড়ন্ত হল, তা নিয়ে অনুসন্ধিৎসু ছিলেন রাহুল। তাঁর প্রশ্ন, বাংলায় ৩৪ বছর বাম শাসন ছিল। তখন বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের দ্বন্দ্বও ছিল। কিন্তু তার পরেও রাজ্যে বিজেপি এত বড় আকারে উঠে এল কী ভাবে? শতরূপ ব্যাখ্যা করেছেন, সেই সময় আর এই সময়ের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকার সাড়ে তিন দশকে রাজ্যে আরএসএসের শ’দুয়েক নতুন স্কুল খুলেছিল। আর গত ১০-১২ বছরে আরএসএসের স্কুল এবং প্রশিক্ষণ শিবির তৈরি হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার। তাঁর দাবি, এর মধ্যে অনেকগুলিই রাজ্য সরকারের অনুমোদিত। এক দিকে সরকারি শিক্ষা যখন ধুঁকছে, সেই সময়ে বুনিয়াদি শিক্ষার জায়গা থেকে প্রভাব তৈরি করছে সঙ্ঘ পরিবার। আরএসএস জমি তৈরি করছে, ফসল পাচ্ছে বিজেপি। এই তথ্য শুনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিপাত করেন রাহুল। অধীরও জানান, বাংলার পরিস্থিতি এই রকমই। আদর্শগত মোকাবিলা করাই যে পথ, আলোচনায় আসে সেই সূত্র।
বিহার বা উত্তরপ্রদেশে এক সময়ে বামেদের প্রভাব থাকলেও এখন সেখানে তারা প্রায় মুছে গিয়েছে কেন, তা-ও জানতে চেয়েছিলেন রাহুল। শতরূপ মেনে নেন, শুধু শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে বামেরা এগোতে চেয়েছিল। কিন্তু হিন্দি বলয়ে জাতপাত-সহ নানা সমীকরণ গড়ে উঠেছিল, যা তারা মোকাবিলা করতে পারেনি।
সূত্রের খবর, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিমকে দেখে ‘মাই ওল্ড ফ্রেন্ড’ বলে স্বাগত জানান রাহুল। তার পরে নিজেই বলেন, ‘ন্যায় যাত্রা’র পথে লাল পতাকার ভিড় দেখে তিনি চমৎকৃত! সেলিম বলেন, তাঁরা ‘ন্যায় যাত্রা’র দাবির পক্ষে এবং অন্যায়ের বিপক্ষে। সুজন সেই সময়ে রাহুলের যাত্রায় প্রশাসনিক বাধা, পোস্টার-ফেস্টুন ছেঁড়ার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, বিজেপি-শাসিত মণিপুর বা অসমে যা ঘটেছে, তার কারণ বোঝা যায়। কিন্তু বাংলায় এমন ঘটনা অপ্রত্যাশিত! রাহুলও তাতে ভিন্নমত হননি বলে সূত্রের দাবি। সুযোগ বুঝে সেলিম-সুজনেরা রাহুলের কাছে বার্তা দিয়ে এসেছেন, বাংলায় তাঁরা একসঙ্গেই লড়তে চান। পরে সেলিম বলেছেন, ‘‘আরএসএসের মোকাবিলায় সারা দেশেই গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে।’’
বাংলায় ‘ন্যায় যাত্রা’র পাট চুকিয়ে ঝাড়খণ্ডে চলে যাওয়ার আগে এ দিন রামপুরহাটে ঘরোয়া আলাপচারিতায় রাহুল বলে গিয়েছেন, এই রাজ্যে যে সাড়া ওই যাত্রা পেয়েছে, তাতে তিনি খুবই খুশি।