(বাঁ দিক থেকে) নরেন্দ্র মোদী এবং মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।
মহুয়া মৈত্রের কৃষ্ণনগরে আবার আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামী ১৩ মে লোকসভা ভোটের চতুর্থ দফায় কৃষ্ণনগরে। তার আগে আগামী ৩ মে সেখানে সভা করার কথা প্রধানমন্ত্রীর। এমনটাই খবর বিজেপি সূত্রে। মোদীর আগে মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল কৃষ্ণনগরেই সভা করতে আসার কথা ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। কিন্তু আচমকাই তা বাতিল হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে খবর মিলল।
পদ্মশিবির সূত্রে খবর, বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়ের প্রচারে তেহট্ট বিধানসভার শ্যামনগর ফুটবল মাঠে সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী। সোমবার সেই সভাস্থল পরিদর্শন করেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। পরে বিজেপি জেলা সভাপতি-সহ অন্যান্য পদাধিকারীদের সঙ্গে বৈঠকও করেন তাঁরা। সভামঞ্চ ঘুরে দেখেছেন মোদীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকেরা। প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চে আর কারা উপস্থিত থাকবেন, তাঁদের নামের তালিকা জেলার নেতাদের থেকে চেয়েছেন তাঁরা।
এর আগেও এক বার কৃষ্ণনগরে সভা করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তখন অবশ্য সেখানে প্রার্থীই ঘোষণা করেনি বিজেপি। পরে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির বধূ অমৃতাকে প্রার্থী করা হয়। বিজেপি সূত্রে খবর, মহুয়াকে হারাতে কৃষ্ণনগরে বিশেষ ভাবে নজর দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেই কারণে দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছিলেন নিজে। যাতে তাঁর ও দলের নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা হয়। ঠিক ছিল, ভোটের ঠিক আগে সেখানে মোদী-শাহ দু’জনেই সভা করবেন। সেই মোদীর সভার দিন ক্ষণ ঠিক হয়ে গেলেও আচমকাই বাতিল হয়ে গেল শাহের সভা! এর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে কৃষ্ণনগরের বিজেপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে। দলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার শাহের আসার কথা ছিল। ওই দিন পূর্ব বর্ধমান কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী দিলীপ ঘোষের প্রচারে সভা করার কথা রয়েছে তাঁর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে ভোটের সমস্ত কাজকর্ম সামলে এক দিনে দু’টি সভা করা সম্ভব নয়। হতে পারে, সেই কারণেই কৃষ্ণনগরের সভাটি বাতিল হয়েছে। দলের অন্য একটি সূত্রের বক্তব্য, গোটা দেশে নির্বাচন পরিচালনার ‘গুরুদায়িত্ব’ শাহের কাঁধে রয়েছে। তাঁর পক্ষে একটির বেশি সভা করা সত্যিই অসুবিধার। আর মোদী নিজেই যে হেতু কৃষ্ণনগরে সভা করবেন বলে স্থির হয়ে গিয়েছে, তাই শাহের সভা বাতিল করা যায় বলেই হয়তো মনে করেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
সংসদে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে শিল্পপতি গৌতম আদানির সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ নিয়ে একাধিক বার প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছিলেন মহুয়া। এর পরেই তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করার অভিযোগ ওঠে। সেই কাণ্ডে লোকসভার এথিক্স কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে সাংসদ পদ যায় মহুয়ার। তাঁকেই আবার কৃষ্ণনগরে প্রার্থী করেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি নেতৃত্বর বক্তব্য, মহুয়া যদি আবার লোকসভায় যান, তা হলে তা সংসদের অপমান। সেই কারণেই এ বারের ভোটে তাঁর হেরে যাওয়া জরুরি। তাই মহুয়ার কেন্দ্রে বিশেষ ভাবে নজর দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
বিজেপি সূত্রে খবর, তবে শুধু মহুয়া-ই কারণ নন। কৃষ্ণনগরে সভা আর একটি কারণ হল, জায়গাটি শান্তিপুর, নবদ্বীপ ও মায়াপুরের মত ধর্মীয় ঐতিহ্যমণ্ডিত জায়গাগুলির প্রায় মাঝামাঝি রয়েছে। ফলে এই সমস্ত এলাকার ‘ধর্মপ্রাণ হিন্দু’ ভোটারদের সভায় টানা সহজ হবে। এ ছাড়া রানাঘাট ও বনগাঁ লোকসভা এলাকায় তো বটেই, উত্তর নদিয়ারও ছোট অংশে মতুয়া ও নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। গত লোকসভা ভোট থেকেই তাঁদের বড় অংশ বিজেপিকে ভোট দিয়েছিল। সেই ভোটব্যাঙ্ক যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, তা-ই নিশ্চিত করা হচ্ছে। জেলার এক বিজেপি নেতা এ-ও বলেন, ‘‘কৃষ্ণনগর ও মুর্শিদাবাদের তিনটি লোকসভা কেন্দ্র সংখ্যালঘু প্রভাবিত। এনআরসি নিয়ে এই সব এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তা দূর করে প্রধানমন্ত্রী যদি তাঁদের কাছে টানতে পারেন, সব চেনা হিসেব বদলে যাবে।’’