নব নির্মিত কুড়মি ভবন। নিজস্ব চিত্র।
লোকসভা ভোটের আগে ঝাড়গ্রাম সফরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঝাড়গ্রাম সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কুড়মি ভবনের। ভোটের আগে এই উদ্বোধন নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
কুড়মিদের উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকার কুড়মি ডেভলেপমেন্ট বোর্ড গঠন করেছে। জানা গিয়েছে, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রাম এই চার জেলাতেই কুড়মি মানুষজন বেশি থাকায় এই চার জেলায় অফিস তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। ঝাড়গ্রাম জেলা শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সরকারি ফাঁকা জমিতে গড়ে উঠছে কুড়মি ভবন। ২০১৯ সালে ওই জায়গাটি কুড়মি ভবনের জন্য চিহ্নিত করা হয়। তারপর ৩৩ ডেসিমাল জায়গাটি সরকারি ভাবে হস্তান্তর হয়। ভবন তৈরির জন্য ১ কোটি ৫৫ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। ২০২২ সালের ৯ মার্চ ভবন তৈরির জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। কুড়মি ভবনটি তৈরির দায়িত্বে রয়েছে পূর্ত দফতর। কুড়মি ভবনটি দোতলা হবে। কিন্তু বর্তমানে একতলা ভবনটি নির্মিত হয়েছে। একতলা ভবনটির উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী।
কুড়মিদের মিটিং হল, মিউজিয়াম তৈরি হবে। কুড়মালি সংস্কৃতির জীবন যাত্রার বিভিন্ন দিক তুলে ধরার জন্য একটি লাইব্রেরি থাকবে। লাইব্রেরিতে কুড়মালি ভাষায় লেখা বিভিন্ন বই থাকবে। কুড়মি ডেভলেপমেন্ট বোর্ডের একটি অফিস হবে। এ ছাড়াও কুড়মি প্রতিনিধিদের থাকার জন্য তিনটি রুম তৈরি হবে। তবে একতলা ভবনে মিটিং হল ও অফিস রুম তৈরি হয়েছে। মিটিং হলে চারশো জন বসতে পারবে। সেখানে প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। একটি বড় অফিস রুম রয়েছে। কুড়মিদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক গ্রহণ করলেও কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্ত করার ব্যাপারে রাজ্য সরকার বিশেষ উদ্যোগী হয়নি বলে কুড়মি সামাজিক সংগঠনগুলির অভিযোগ রয়েছে। এমনকি পঞ্চায়েত ভোটেও সেই প্রভাব পড়েছিল। কুড়মিরা পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী দিয়েছিল। সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েতে কুড়মিরা বোর্ড গঠন করেছিল। গত বৃহস্পতিবার নবান্নে কুড়মিদের নানা সংগঠনের পাশাপাশি নানা জনজাতি সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কুড়মি ডেভলেপমেন্ট বোর্ডকে আরও পাঁচ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। তবে ভোটের আগে কুড়মি ডেভলেপমেন্ট বোর্ডকে পাঁচ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণার পাশাপাশি ঝাড়গ্রাম সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী কুড়মি ভবনের উদ্বোধন করবেন। আর তাতেই কটাক্ষ শুরু করেছে বিরোধীরা।
জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু বলেন, ‘‘এটি ভোটের আগে জঙ্গলমহলে কুড়মি ভাইবোনদের কিছু উপহার দিয়ে ভোট টানার ব্যর্থ প্রচেষ্টা মাত্র। আখেরে তাতে কোনও সুবিধা হবে না।’’ কুড়মি ডেভলেপমেন্ট বোর্ডের ভাইস চেয়ারপার্সন রথীন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, ‘‘কুড়মিদের জন্য সরকার যে উন্নয়নের কাজ করছে তা ঠিকই রয়েছে। নবান্নে কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। সরকারি ভাবে চারটি জেলায় সমীক্ষা করা হবে। তারপর আবার কমেন্ট ও জাস্টিফিকেশন রিপোর্ট পাঠানো হবে।’’ ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অজিত মাহাতো বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ভোটের রাজনীতি করেন না। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে জঙ্গলমহলে বিপুল উন্নয়ন হয়েছে। শুধুমাত্র কুড়মি নয়, প্রতিটি জাতিকে সম্মান দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ভারতবর্ষের মধ্যে একমাত্র কুড়মিদের জন্য ভেবেছেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। কুড়মালি ভাষার স্বীকৃতি থেকে শুরু করে কুড়মি ভেললেপমেন্ট বোর্ড ও কুড়মি ভবন সবই করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধীদের কাজই হলঅপপ্রচার করা।’’