—প্রতীকী ছবি।
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের ৮টি কেন্দ্রে শুক্রবার ভোট। ভোট প্রচারে গোটা অঞ্চলে গত কয়েক দিন দাপিয়ে বেড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর দল। আজও আগরায় গিয়ে মোদী যে ভাবে এসপি নেতা অখিলেশ সিংহ এবং কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীকে নিশানা করেছেন, তা রাত পোহালে এই ৮টি নির্বাচনী ক্ষেত্রের কথা মাথায় রেখেই। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, মোদীর প্রবল প্রচারের আড়ালে বইছে অসন্তোষের চোরা স্রোত। তা হয়তো এক নজরে বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু ভোটবাক্সে তা প্রভাব ফেলতে পারে। আর সেই চোরাস্রোতের বিষয়ে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব যে অন্ধকারে রয়েছেন, বিষয়টি এমন নয়। আর তাই প্রকাশ্যে নগ্ন ভাবে মেরুকরণের প্রচার করে দলিত, সমাজে পিছিয়ে থাকা অংশ, জনজাতির ভোটের সঙ্গে যাতে কিছুতেই মুসলমান ভোট এক বন্ধনীতে না আসতে পারে তার চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে মোদীকে।
যদিও ক্ষোভের মূল জায়গাটি সমাজের ক্ষত্রিয় অংশের মনে। আমরোহা, মিরাট, গাজিয়াবাদ, গৌতম বুদ্ধনগর, বুলন্দশহর, আলিগড় এবং মথুরায় শুক্রবার ভোট। প্রতিটি নির্বাচনী ক্ষেত্রেই যে মুসলমান ভোট ব্যাঙ্ক রয়েছে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। কিন্তু ক্ষত্রিয়দের প্রভাব এবং প্রতিপত্তিও রয়েছে যথেষ্ট। ঘটনা হল এই ৮টি আসনের একটিতেও বিজেপির কোনও ক্ষত্রিয় প্রার্থী নেই এ বার। সেই শূন্যস্থানকে কাজে লাগাতে ঝাঁপিয়েছেন অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নামা বিএসপি নেত্রী মায়াবতী। সেই সঙ্গে এসপি-র অখিলেশ যাদবও।
সম্প্রতি গাজিয়াবাদে একটি জনসভায় তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মায়াবতী বিজেপিকে নিশানা করেছেন ক্ষত্রিয় (রাজপুত, ঠাকুর) সম্প্রদায়ের আবেগকে উস্কে দিতে। এটাও জানিয়েছেন, তাঁর দল প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্ত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব রেখেছেন। গাজিয়াবাদে বিএসপি-র প্রার্থী নন্দকিশোর পাজির ঠাকুর সম্প্রদায়ের। মায়ার কথায়, “উত্তরপ্রদেশের উচ্চবর্ণের মধ্যে ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের সংখ্যা খুবই বেশি। অত্যন্ত দুঃখজনক যে বিজেপি মুখে ক্ষত্রিয়দের পাশে থাকার কথা বললেও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে তাঁদের অবজ্ঞা করেছে। গাজিয়াবাদে আমরা ক্ষত্রিয় প্রার্থী দিয়েছি। আগে সেখানে পঞ্জাবি প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু লখিমপুর খেরিতে পঞ্জাবি জনসংখ্যা বেশি বলে পুনর্বিবেচনা করে শিখ প্রার্থীই সেখানেই দাঁড় করানো হয়েছে।”
ঘটনা হল, কিছু দিন আগেই ক্ষত্রিয় সম্প্রদায় মহাপঞ্চায়েত বসিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, যে দল ক্ষত্রিয় প্রার্থী দেবে তাকেই সমর্থন করা হবে। কিন্তু বিজেপি সেই বার্তাকে গুরুত্ব দেয়নি বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা। এসপি শিবিরের দাবি, অখিলেশও এ ব্যাপারে সতর্ক। গৌতম বুদ্ধ নগরে একটি জনসভায় ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়কে আলাদা করে চিহ্নিত করেছেন অখিলেশ। বলেছেন, “আমি দেখতে পাচ্ছি পাগড়ি মাথায় কাঁরা এসেছেন। যাঁরা এক দিন ঐতিহ্যগত ভাবেই অন্য দলকে ভোট দিতেন, তাঁদের রাজনৈতিক চেতনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে এ বার বাইসাইকেলকে (এসপি-র প্রতীক) ভোট দিতে চলেছেন তাঁরা।”
গৌতম বুদ্ধ নগরে এক বিজেপি নেতা ঘরোয়া ভাবে জানালেন, “ক্ষত্রিয় ভোটারদের উষ্মা যে বাড়ছে সেটা দল জানে। ক্ষত্রিয়প্রধান গ্রামগুলিতে আলাদা করে যাওয়া হচ্ছে ও তাঁদের বোঝানো চলছে। আমাদের দু’জন ঠাকুর বিধায়ক রয়েছেন, নয়ডার পঙ্কজ সিংহ এবং জেওয়ার থেকে ধীরেন্দ্র সিংহ। তাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঠাকুরদের সঙ্গে সংযোগ রাখার।” প্রসঙ্গত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ নিজে ঠাকুর। তাঁকেও ব্যবহার করা হয়েছে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে। গাজিয়াবাদে জনসভা করে গিয়েছেন রাজনাথ সিংহ।
বুধবারই শেষ হয়ে গিয়েছে এই ৮টি আসনে প্রচার। তবে আজ কৌশলগত ভাবে উত্তরপ্রদেশের এমন জায়গায় প্রচারে গিয়েছেন মোদী, যেখান থেকে তিনি এই ৮টি আসনেও বার্তা দিতে পারেন। আগরার জনসভায় অখিলেশ এবং রাহুলের নাম না করে তিনি বলেছেন, “দু’টি ছেলের মধ্যে বন্ধুত্বের ভিত্তি হল তোষণের রাজনীতি। এই তোষণের রাজনীতি দেশকে ভাগ করে। কিন্তু আমরা এই রাজনীতিকে শেষ করে মানুষের সন্তুষ্টিকরণের চেষ্টা করছি।”