আরাবুল ইসলাম। —ফাইল চিত্র।
নিখুঁত অঙ্কেই কি ভাঙড়ের রাজনীতি থেকে ক্রমশ সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে আরাবুল ইসলামকে? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে এলাকার রাজনৈতিক মহলে। আইএসএফ কর্মী খুনের অভিযোগে বেশ কিছু দিন ধরে জেলে আরাবুল। জামিনের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু জামিন মেলেনি। সম্প্রতি একটি শুনানি শেষে আদালত থেকে বেরোনোর সময়ে দৃশ্যত হতাশ আরাবুল বলেন, “কিছুই বলার নেই, এই অবস্থাই চলতে থাকবে।” হাই কোর্টে জামিনের আবেদনও করা হয়েছে আরাবুলের তরফ থেকে। তার শুনানি চলতি সপ্তাহে হতে পারে।
এর মধ্যে আদালতেই আরাবুলের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন তাঁর বেশ কিছু অনুগামী। তাঁরাও আপাতত আরাবুলের জেলমুক্তির সম্ভবনা দেখছেন না। আরাবুলকে ফাঁসানো হয়েছে বলে সম্প্রতি হাই কোর্টে দাবি করেছেন তাঁর আইনজীবী। সরাসরি ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক সওকাত মোল্লার দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলেন তিনি। আরাবুল অনুগামীদের একাংশও ‘দাদা’-র এই অবস্থার পিছনে দলের ‘হাত’ দেখছেন। সওকাত অবশ্য তা মানতে চাননি। আরাবুল-পুত্র তথা জেলা পরিষদ সদস্য হাকিমুল ইসলাম অবশ্য বলেন, “বাবা দলের সৈনিক ছিলেন, আছেন। আগামী দিনেও থাকবেন।”
কেন এককালের দাপুটে নেতাকে অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে দলের অন্দরেই? ২০০৬ সালে বামেদের প্রবল দাপটের মধ্যেও ভাঙড় থেকে জিতেছিলেন আরাবুল। ২০১১ সালে হেরে যান তিনি। সে বারে গোষ্ঠী কোন্দলের অভিযোগ উঠেছিল। তবে হারলেও আরাবুলের দাপট কমেনি। ২০১৬ সালে তৃণমূলের টিকিটে ভাঙড়ে দাঁড়ান রেজ্জাক মোল্লা। টিকিট না পেয়ে সেই সময় গোসা হয়েছিল আরাবুলের। সেই ভোটে আরাবুল সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাননি বলে দলের অন্দরের খবর। জিতেও শারীরিক অসুস্থতার জন্য সে ভাবে সামনের সারিতে ছিলেন না রেজ্জাক। ফলে আরাবুল থেকে যান স্বমহিমাতেই। ২০২১ সালে ফের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দল প্রার্থী করে চিকিৎসক রেজাউল করিমকে। আরাবুল প্রকাশ্যে বিষোদ্গার করেন। তাঁর সমর্থকেরা বিক্ষোভও দেখান। ভোটেও আরাবুল ভিতরে ভিতরে প্রার্থীর বিরোধিতা করেন বলেই অভিযোগ। হেরে যায় তৃণমূল। জেতেন আইএসএফ প্রার্থী নওসাদ সিদ্দিকী। এর পরই এলাকার রাজনীতিতে বড় বদল আসে। মাথাচাড়া দিতে শুরু করে আইএসএফ। কোণঠাসা হতে থাকেন আরাবুলরা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের গণনার দিন আইএসএফের দাপটে কার্যত টেবিলের তলায় লুকোতে হয়েছিল আরাবুল বাহিনীকে।
২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ভাঙড়ের পর্যবেক্ষক করে পাঠানো হয় সওকাতকে। প্রাথমিকভাবে আরাবুলকে সঙ্গে নিয়েই দলকে এককাট্টা করার চেষ্টা শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু দলের অন্দরের খবর, সওকাতের উত্থান দেখে তাঁরও বিরেধিতা শুরু করেন আরাবুল। সূত্রের খবর, এর পরেই আরাবুলকে সরানোর পরিকল্পনা ছকা হয়ে যায়। প্রথমে গ্রেফতার হন আরাবুল। পরে একের পর এক মামলায় নাম জড়িয়ে যায় তাঁর। আপাতত সব পক্ষকে এক ছাতার নীচে এনে আরাবুলকে ছাড়াই ভাঙড় জয়ের পরিকল্পনা করছেন সওকাত। লোকসভা ভোটে ভাঙড় থেকে পঞ্চাশ হাজার ভোটে লিডের লক্ষ্যমাত্রাও বেধে দিয়েছেন তিনি। সওকাতের নেতৃত্বে আইএসএফের সঙ্গে সমীকরণেও বদল এসেছে বলে মনে করছেন দলের অনেকে। ইদানীং সভা-সমিতিতে আর সে ভাবে আইএসএফ বিরোধিতায় সুর চড়াতে দেখা যাচ্ছে না সওকাতকে। নওসাদ অবশ্য দীর্ঘদিন পরে সম্প্রতি ভাঙড়ে এসে সওকাত-আরাবুলদের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন। তবে তাঁর সভায় কর্মী-সমর্থকদের কমে যাওয়া সংখ্যা চোখ এড়ায়নি।
এই পরিস্থিতিতে আরাবুলহীন ভাঙড়ের ভোট চিত্র কী দাঁড়ায়, সে দিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।