প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।
হাতের কড় গুনতে বসলে একে একে তাঁর সামনে আসবে দলের অন্দরের সমস্যা, বিভিন্ন দাবিতে পাহাড়ে অসন্তোষ এবং চা বলয়ের ক্ষোভ। লোকসভা ভোট ঘোষণার আগে, এই আবহে আজ, শনিবার বিকেলে শিলিগুড়িতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ অসম থেকে বিমানে তিনি বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামবেন। তার পর সেখান থেকে শিলিগুড়ির কাওয়াখালির মাঠ। পাঁচ বছর আগে যে মাঠের সভা দিয়ে তিনি রাজ্যে লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করেছিলেন।
শনিবার এই সভা থেকে প্রায় ৪,৫০০ কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পের ঘোষণা করার কথা প্রধানমন্ত্রীর। তবে তার মধ্যেই তিনি তৃণমূল-সহ বিরোধীদের বিরুদ্ধে এবং দলের অন্দরে কী বার্তা দেন, সে জন্য অপেক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে এবং রাতে কাওয়াখালির মাঠ পরিদর্শন করেন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা, দলের রাজ্যের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা বিধায়ক দীপক বর্মণ-সহ জেলার নেতারা। সাংসদ বলেন, ‘‘অন্তত দুই লক্ষাধিক মানুষ মোদীজির কথা শুনতে আসছেন। উনি কী বলবেন, সে জন্য আমরাও অপেক্ষা করছি।’’
গত লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গের আটটি আসনের মধ্যে সাতটিতে জেতে বিজেপি। যদিও ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে ভোটের অঙ্ক কিছুটা বদলায়। দার্জিলিং জেলায় বিধানসভায় বিজেপি বেশিরভাগ আসন জিতলেও, পরে দল শিলিগুড়ি পুরসভা, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদে কার্যত তেমন কিছু করতে পারেনি। পাহাড়ে ‘লিড’ নিয়ে লোকসভা, বিধানসভায় জিতলেও, গত দু’বছরে ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ), পুরসভা এবং পঞ্চায়েত ভোটে ছাপ ফেলতে পারেনি। পাহাড়ে তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার দাপট বেড়েছে।
এ বারে প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা নিয়েও দেখা দিয়েছে সমস্যা। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বার্লাকে আলিপুরদুয়ার আসন থেকে টিকিট দেয়নি বিজেপি। তিনি কার্যত বিদ্রোহ করেছেন। প্রকাশ্যে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। জলপাইগুড়িতে দলের অন্দরের সমীক্ষায় বর্তমান সাংসদকে নিয়ে দলেরই একাংশের ক্ষোভের কথা উঠে এসেছে। দার্জিলিং কেন্দ্রে রাজু বিস্তা এবং হর্ষবর্ধন শ্রিংলার মধ্যে কে প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে দলের অন্দরের টানাপড়েন প্রকাশ্যে এসেছে। রায়গঞ্জে দলের একাংশ বর্তমান সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীর বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন।
বিজেপির উত্তরের নেতাদের একাংশ ঘনিষ্ঠ মহলে মানছেন, একশো দিনের প্রকল্পে শ্রমিকদের বকেয়া টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা, আদিবাসীদের শংসাপত্র বিলি, লক্ষ্মীর ভান্ডারের ভাতা বৃদ্ধি, চা বাগানে শ্রমিক লাইনে জমি পাট্টার মতো প্রকল্পের দৌলতে কিছুটা ছাপ ফেলেছে রাজ্যের শাসক দল। বিজেপির রাজ্য কমিটির এক নেতার কথায়, ‘‘বিধানসভা ভোটের সময় থেকে তৃণমূল উত্তরের হারানো মাটি কিছুটা উদ্ধার করেছে। পাহাড় থেকে সমতলে তা নানা ভাবে সামনে এসেছে। সে জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি জমি রাখার জন্য জরুরি।’’
বিজেপির রাজ্য নেতা তথা ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মণ অবশ্য বলেন, ‘‘জন বার্লার মতো কিছু বিষয় থাকলেও, তা মিটে যাবে। উনিও সভায় আসবেন। কেন্দ্রীয় স্তর থেকে প্রার্থী ঘোষণা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সবাই প্রস্তুত।’’ বার্লার অনুগামীরা জানিয়েছেন, আলিপুরদুয়ারের সাংসদ সভায় যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছেন। তবে বহু চেষ্টা করেও বার্লার সঙ্গে এ দিন কথা বলা যায়নি।