(বাঁ দিকে) কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
গুজরাতের মাটিতে দাঁড়িয়ে লোকসভার প্রচার বক্তৃতায় আজ আরও উগ্র রূপে দেখা দিলেন নরেন্দ্র মোদী। কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবিরের দাবি, দু’দশক আগে গোধরা কাণ্ডের সময়ের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর অবতারেই ফের দেখা গেল আজ নরেন্দ্র মোদীকে। আজ বারবার মুসলিমদের নাম করে কংগ্রেসকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন তিনি। পাকিস্তানের ঘরে ঢুকে জঙ্গি মারার কৃতিত্ব নিয়েছেন। পাকিস্তানের সঙ্গে কংগ্রেসকে সংযুক্ত করে বলেছেন, কংগ্রেসের ‘শাহজাদাকে’ জেতাতে ‘পাকিস্তান উতলা হয়ে পড়েছে’। একই সঙ্গে দেশের মুসলিমরা ‘ভোট-জেহাদের’ পথে হাঁটছেন বলে সুর চড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সব মিলিয়ে তাঁর আগ্রাসী মূর্তিতে স্পষ্ট, নিজের রাজ্য নিয়েও সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত তিনি এ বার নন।
সম্প্রতি ইমরান খানের মন্ত্রিসভার সদস্য পাকিস্তানের প্রাক্তন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী চৌধরি ফওয়াদ হুসেন রাহুল গান্ধীর বক্তৃতার একটি অংশ পোস্ট করেন তাঁর সমাজমাধ্যমে। সেখানে দেখা যায়, রাহুল গান্ধী রামমন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠার জাঁকজমককে আক্রমণ করে বলছেন, বিজেপি সরকার দেশের গরিব এবং যুবাদের স্বার্থকে পাশে সরিয়ে রাখছে। বুধবার পাক মন্ত্রীর এই পোস্টটি তুলে কংগ্রেসকে প্রথম আক্রমণ করেন বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয়। তিনি লেখেন, ‘ফওয়াদ হুসেন এখন রাহুল গান্ধীর হয়ে প্রচার করছেন। কংগ্রেস কি পাকিস্তানেও ভোটে লড়তে চায়? তাদের ইস্তাহারে স্পষ্ট মুসলিম লিগের সিলমোহর। এ বার সীমান্তের ওপার থেকেও সমর্থন এসে গেল। পাকিস্তানের সঙ্গে কংগ্রেসের আঁতাঁত আর গোপন নেই।”
আজ খোদ মোদীর কথায়, “যখন ভারতে কংগ্রেস দুর্বল হচ্ছে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তখন ওখানে পাকিস্তান কাঁদছে। খুবই মজার ব্যাপার! আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, পাকিস্তানের নেতারা দুয়া করছেন শাহজাদাকে প্রধানমন্ত্রী বানোনের জন্য। কংগ্রেস তো পাকিস্তানের অনুগামী। পাকিস্তান-কংগ্রেস যুগলবন্দি এ বার সামনে চলে এসেছে। আসলে শত্রু রাষ্ট্র কখনও চায় না ভারতে মজবুত সরকার হোক। তারা চায় দুর্বল সরকার, যাতে ২৬/১১-র মতো কাণ্ড ঘটনো যায়। তারা চায় ডসিয়ার পাঠিয়েই ক্ষান্ত থাকবে এমন সরকার। ২০১৪ সালের আগে যেমনটা ছিল। মোদীর মজুবত সরকার নয়, অস্থির ভারত তাদের পছন্দ।” তাঁর সরকার এসে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের ‘টায়ার ফুটো’ করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন মোদী। তাঁর কথায়, “যে দেশ আগে সন্ত্রাসবাদ রফতানি করত, আজ তারা আটা কিনবার জন্য দরজায় দরজায় ঘুরছে। বোমা বানানো হাতগুলোয় এখন ভিক্ষাপাত্র। কংগ্রেস সরকার পাকিস্তানের হামলার পর তাদের ডসিয়ার দিত। মোদী সরকার ডসিয়ার দিয়ে সময় নষ্ট করে না। সন্ত্রাসবাদীদের ঘরে ঢুকে মেরে আসে।”
মোদীর আক্রমণের পাল্টা জবাব দিয়েছেন কংগ্রেসের রাহুল এবং প্রিয়ঙ্কা গান্ধী কর্নাটক এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে। প্রিয়ঙ্কার কথায়, ‘‘এই ব্যক্তির (মোদী) এমন হিম্মত নেই যে নিজের কাজের খতিয়ান দিতে পারেন। আসলে সরকারের সাফল্য নিয়ে বলার কিছু নেই, তাই এ ভাবে ঘৃণা ছড়াচ্ছেন।’’ গত কাল মোদী বলেছিলেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে গরু-মোষও কেড়ে নেবে। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রাহুলের আজ কটাক্ষ, ‘‘আসলে কংগ্রেস ১৫০-র বেশি আসন পেয়ে সরকার গড়তে চলেছে।মোদী নৈরাশ্যে ডুবে হারের ভয় থেকে এ সব কথা বলছেন।’’ অন্য দিকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে একটি চিঠি দিয়েছেন মোদীকে। তাতে তিনি লিখেছেন, “ভোট শেষ হলে দেশবাসী আপনাকে মনে রাখবে এমন একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে, যিনি বিভাজনের সাম্প্রদায়িক বক্তৃতা দিতেন। পরাজয়ের ভয়ে যাঁর বক্তৃতা মিথ্যায় ভরা ছিল।”
সংখ্যালঘু প্রশ্নে আজ তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টির মতো দলগুলিকেও নিশানা করেছেন মোদী। তাঁর কথায়, “সবাই জানে কংগ্রসের সবচেয়ে বড় ভোটব্যাঙ্ক হল মুসলিমরা। তাই তাদের খাতিরযত্ন করে রাখা হয়েছে দশকের পর দশক। কিন্তু আঞ্চলিক দলগুলি কংগ্রেসের থেকেও বেশি প্রতিশ্রুতি দিয়ে কংগ্রেসের একচেটিয়া সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসিয়েছে। তাই কংগ্রেস এ বার নতুন কৌশল নিয়ে আরও বেশি করে সংখ্যালঘু তোষণে জোর দিয়েছে। তারা সংবিধান বদলিয়ে তফসিলি জাতি উপজাতি এবং ওবিসি-র সংরক্ষণ ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের প্রিয় ভোটব্যাঙ্ককে দিতে চায়। কিন্তু মোদীর গ্যারান্টি, ধর্মের আধারে তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের সংরক্ষণ মুসলিমদের দেওয়া হবে না।” কংগ্রেসকে তিনটি চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন আজ মোদী। যার মূল কথা, ‘কংগ্রেসকে লিখিত গ্যারান্টি দিতে হবে যে তারা তফসিলি জাতি উপজাতি এবং ওবিসি-র সংরক্ষণ ছেঁটে মুসলিমদের দেবে না।’
দু’দিন আগে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেসের নেতা সলমন খুরশিদের ভাগ্নি মারিয়া আলম খান উত্তরপ্রদেশের ফারুখাবাদের জনসভায় এসপি প্রার্থীর হয়ে ভোট চাইতে যান। সেখানে তাঁর ‘ভোট জেহাদের’ ডাক দেওয়ার একটি ভিডিয়ো নিয়েও বিতর্ক তৈরি করেছে বিজেপি। গত কাল মারিয়ার এই মন্তব্য থেকে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ দূরত্ব তৈরি করেন। আজ সে প্রসঙ্গে মোদী বলেছেন, “শিক্ষিত মুসলিমরা আজ ভোট জেহাদের ডাক দিচ্ছেন। লাভ জেহাদ আগে শোনা গিয়েছে। কিন্তু ভোট জেহাদ আগে শুনেছেন? কংগ্রেসের শীর্ষ পদে বসা নেতারাই এই ডাক দিয়েছেন যে, সব মুসলিম একজোট হয়ে ভোট দাও।”