প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
উত্তর থেকে দক্ষিণ। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ‘চারশো পার’ করার যে প্রতিজ্ঞার কথা ঘোষণা করেছেন নরেন্দ্র মোদী, তাকে সফল করতে নিজে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
আজ সকালে উত্তরপ্রদেশের পিলিভিটে হিন্দুত্বের জোয়ার এনেছেন রামমন্দিরের প্রসঙ্গ তুলে। কল্যাণ সিংহের প্রশংসা করে কৌশলে উত্তরপ্রদেশে তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বের জমানায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কথা মনে করিয়েছেন। একই দিনে দুপুরে মধ্যপ্রদেশের নকশাল উপদ্রুত বালাঘাট জেলায় জনসভা করে কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামনে আনতে চেয়েছেন। দিনান্তে হাতে পদ্মের প্রতীক নিয়ে চেন্নাইয়ে গাড়ি করে বর্ণাঢ্য যাত্রা করেছেন নরেন্দ্র মোদী। স্থানীয় বিজেপি শাখার তৎপরতায় অবিরল পুষ্পবৃষ্টি হয়েছে সেই যাত্রার উপরে। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, দ্রাবিড়ভূমে মোদীর এ হেন যাত্রার আয়োজনই বলে দিচ্ছে, দক্ষিণ ভারতে নিজেদের পায়ের ছাপ রাখতে কতটা মরিয়া মোদী ও তাঁর গেরুয়া বাহিনী। কারণ উত্তরে নিজেদের শক্তি বেশি বাড়ানোর আর পরিসর নেই বিজেপির। ‘চারশো পার’-এর তত্ত্বটিকে বাজারে আনা হয়েছে দক্ষিণে আসন বাড়ানোর কথা মাথায় রেখেই, বলছে রাজনৈতিক মহল।
পিলিভিটে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী মঞ্চ ইন্ডিয়ার সদস্য দলগুলিকে আক্রমণ করেছেন, রামমন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার জন্য। তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে গিয়েছে এই মন্দিরের নির্মাণ আটকাতে। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কল্যাণ সিংহ। আজ প্রচারে তাঁকে স্মরণ করেছেন মোদী। বলেছেন, “আমাদের কল্যাণ সিংহ তাঁর জীবন এবং সরকারকে উৎসর্গ করেছিলেন রামমন্দিরের জন্য। দেশের প্রত্যেকটি পরিবার তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী যোগদান করেছে। কিন্তু ইন্ডি-জোটের নেতাদের মনে ঘৃণা ছিল মন্দির নির্মাণ হওয়ার আগেই। এখনও তা রয়েছে। অযোধ্যায় যাতে রামমন্দির না হয় তার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে কংগ্রেস। কিন্তু যখন দেশবাসী তাদের সম্বল দিয়ে এই অসামান্য মন্দিরটি বানালেন এবং তাদের (কংগ্রেস) আমন্ত্রণ জানালেন উদ্বোধনে এসে নিজেদের পাপস্খালনের জন্য, তারা ভগবান রামকে অপমান করল আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে। যারা যোগ দিয়েছিলেন তাঁদের ছ’বছরের জন্য বরখাস্তও করল কংগ্রেস।”
প্রধান বিরোধী দলকে নিশানা করে মোদীর বক্তব্য, “এমন একটা সময় ছিল যখন কংগ্রেস সরকার বিশ্বের কাছে সাহায্যের হাত বাড়াত। কিন্তু কোভিড অতিমারির সময় ভারত গোটা বিশ্বকে ওষুধ পাঠিয়েছে। যখন একটি দেশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তখন গোটা বিশ্ব তার কথা শুনতে বাধ্য হয়। যদি ইচ্ছাশক্তি অটুট থাকে, উদ্দেশ্য সাধু হয়, তা হলে ফলাফল আসতে বাধ্য। আমরা উন্নত ভারতকে আজ সর্বত্র দেখতে পাচ্ছি।”
মধ্যপ্রদেশের বালাঘাট জেলায় ত্রিমুখী লড়াই হচ্ছে কংগ্রেস, বিজেপি এবং বিএসপি প্রার্থীর মধ্যে। এই রাজ্যকে যে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন মোদী, তার প্রমাণ গত তিন দিনে তাঁর মধ্যপ্রদেশে দু’বার সফর। জবলপুরে তিনি রোড শো করেছেন। জবলপুর, বালাঘাট, ছিন্দওয়াড়ার মতো নির্বাচনী ক্ষেত্রে প্রথম দিনই অর্থাৎ ১৯ তারিখ ভোট। মোদী আজ বালাঘাটের জনসভায় বলেন, “কয়েক মাস আগে মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে এখানকার মানুষ কংগ্রেসকে একেবারেই মুছে দিয়েছে। এখন এই লোকসভা ভোটে কংগ্রেস বিজেপির সঙ্গে লড়ছে না। তারা নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে। মোদী সরকার যে আবার আসছে, সেই বার্তা রাজ্যের সমস্ত প্রান্ত থেকে শোনা যাচ্ছে।”
মধ্যপ্রদেশ থেকে বিকেলে তামিলনাড়ুতে পৌঁছন মোদী। গত সোয়া তিন মাসে তাঁর এই নিয়ে সে রাজ্যে সপ্তম সফর। ‘ভিনদাম মিনদাম মোদী’ (আমরা মোদীকে চাই) ধ্বনির মধ্যে আজ বিজেপির রাজ্য সভাপতি কে আন্নামালাই এবং চেন্নাইয়ের তিন প্রার্থীকে নিয়ে রোড-শো করেছেন তিনি। কথা আছে ভেলোর, কোয়ম্বত্তূর, পেরামবালুরের মতো নির্বাচনী কেন্দ্রগুলিতেও রোড শো করার। তামিলনাড়ুর ৩৯টি লোকসভা আসনেই ভোট ১৯ এপ্রিল।