প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
লোকসভা নির্বাচনের শেষ পর্বে অর্থাৎ ১ জুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্র বারাণসীতে ভোটগ্রহণ। মঙ্গলবার মহাসমারোহে মনোনয়ন পত্র জমা দেবেন তিনি। তার আগে সোমবার দিনভর সংখ্যালঘুদের বার্তা দিতে চেষ্টার ত্রুটি রাখলেন না বিজেপির নির্বাচনী প্রচারের প্রধান মুখ। পটনা সাহিবে পাগড়ি মাথায় ভোগ রান্নায় হাত লাগালেন এবং তা পরিবেশন করলেন। মুসলিম অধ্যুষিত মদনপুরায় সংখ্যালঘুদের দিয়ে মোদীর রোড-শোয়ে পুষ্পবৃষ্টিও করানো হয়েছে।
গোটা বারাণসী জুড়ে এখন সাজো সাজো রব। স্বাভাবিক ভাবেই মোদীর মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়াকেও একটি রাজনৈতিক ‘ইভেন্ট’-এ পরিণত করতে মরিয়া বিজেপি। সেই প্রস্তুতিও এখন সপ্তমে! বিজেপি-সহ এনডিএ-র মুখ্যমন্ত্রীদেরও উপস্থিত থাকার কথা। লখনউয়ের বিজেপি দফতর, মুখ্যমন্ত্রীর দফতর উজাড় করে বারাণসী নিয়ে যাওয়া হয়েছে মন্ত্রী-নেতা এবং সরকারি আধিকারিকদেরও। তার জেরে লখনউ ফাঁকা।
নির্বাচন পর্বে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণের পরেই প্রচারে মেরুকরণকে অস্ত্র করেছিলেন মোদী। কিন্তু প্রতিটি পর্বে ভোটদানের হার কমার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ থেকেই তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে খুশি করার দিকে জোর দিয়েছেন। আজ সকালে পটনা সাহিবে মাথায় গেরুয়া পাগড়ি, হাতে বিশাল খুন্তি নিয়ে গুরুদ্বারে ভোগ রান্নার কাজে হাত লাগাতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। গুরুদ্বারে প্রার্থনার পাশাপাশি, লঙ্গরখানায় আসা ভক্তদের প্রধানমন্ত্রী নিজে হাতে খাবার পরিবেশন করছেন। প্রত্যাশিত ভাবেই সঙ্গী ক্যামেরা।
সোম-সন্ধ্যায় নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে ছ’কিলোমিটার রোড শো করেছেন মোদী। তার আগে এখানে লঙ্কা এলাকার মালবীয় চৌরাহায় শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক মদনমোহন মালবীয়ের মূর্তিতে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। রোড-শো চলাকালীন মোদীর সঙ্গে ছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। হিন্দুত্বের পাশাপাশি, সংখ্যালঘুদের বার্তা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল আজ। মোদীর শোভাযাত্রায় মদনপুরা এলাকায় পৌঁছলে তাঁকে স্বাগত জানান ভারতরত্ন উস্তাদ বিসমিল্লা খানের পরিবার। মুসলিম অধ্যুষিত মদনপুরায় সংখ্যালঘুদের দিয়ে পুষ্পবৃষ্টি করানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর শোভাযাত্রা কাশী পৌঁছলে সানাই, শঙ্খনাদ ও ডমরু-ধ্বনিতে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়েছে।
মোদীর আজকের রোড-শো নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা। বলেছেন, ‘‘আমার বাবা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনও হেঁটে গ্রামে যেতেন। মানুষের কথা শুনতেন, তাঁদের চোখের জল মুছিয়ে দিতেন। গাড়িতে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ানো আর আধ কিলোমিটার দূরে মানুষ দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছেন— এটা জনসংযোগ নয়।’’
মোদীর মনোনয়ন পেশকেও চোখধাঁধানো ‘ইভেন্ট’-এ পরিণত করতে কোনও খামতি রাখছে না বিজেপি। কাল প্রধানমন্ত্রী সকালে কাশীর অসি ঘাটে যাবেন। তার পর সকাল ১০টা নাগাদ যাবেন কাশীর দ্বাররক্ষক ভৈরব মন্দিরে। এ ছাড়া, কাশী বিশ্বনাথ মন্দির এবং সঙ্কটমোচনের দর্শনও করবেন তিনি। বাবা কালভৈরবের দরবারে বিশেষ পুজো দেবেন প্রধামন্ত্রী। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালেও মনোনয়নের আগে মোদী কালভৈরবকে প্রণাম করেই মনোনয়ন পেশ করেছিলেন। আজ রাতে কাশীর বিশিষ্টজনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। কাল মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরে আন্তর্জাতিক রুদ্রাক্ষ প্রেক্ষাগৃহে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকের কথা প্রধানমন্ত্রীর।