তৃণমূলের তরফে চলছে তপশিলি সংলাপ প্রচার। কল্যানী সগুনাতে। ছবি সুদেব দাস।
ধীর গতিতে চলছে চার চাকার এক গাড়ি। তাতে বাঁধা নানা ধরনের শব্দযন্ত্র। গাড়িতে বাংলায় লেখা রয়েছে ‘তপশিলি সংলাপ’। শনিবার সকাল থেকে তৃণমূলের দলীয় পতাকা বাধা এমন গাড়ি ঘুরে বেড়াতে দেখা গেল কল্যাণী ব্লকের সগুনা পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকায়। বিগত দিনে রাজ্যের তৃণমূল সরকার তফসিলিদের জন্য কী কী উন্নয়ন করেছে, তার খতিয়ান তুলে ধরে একটি বইও এ দিন বিলি করে তৃণমূল। তফসিলি ভোটব্যাঙ্ক নিজেদের দিকে টানতে ওই কর্মসূচি বলে তৃণমূলের একাংশের দাবি। ভোটের আগে তৃণমূলের ওই কর্মসূচিকে বিঁধতে ছাড়ছে না বিজেপি ও সিপিএম।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের তফসিলি জাতি এবং জনজাতির মানুষের কাছাকাছি পৌঁছতে গত ১৫ মার্চ থেকে ‘তপশিলি সংলাপ’ নামে ওই প্রচারাভিযানে নেমেছে তৃণমূল। সেই অভিযান ঘিরে কী কী পরিকল্পনা রয়েছে দলের, সে কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি, রাজ্যের প্রায় সাড়ে তিন হাজার তফসিলি জাতি এবং জনজাতি নেতা-নেত্রীকে আগেই দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন অভিষেক।তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের নেতা-নেত্রী এবং জনপ্রতিনিধিরা ওই প্রচার গাড়িতে চেপে তফসিলি জাতি এবং জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় প্রচার চালাবেন। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে শুনবেন তাঁদের পাওয়া না-পাওয়ার কথা। সেই মতো নদিয়া জেলার কল্যাণী ব্লকের সগুনা অঞ্চলে এ দিন প্রথম এই কর্মসূচি নেওয়া হয়। যদিও এই এলাকাটি বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে। বিষয়টা নিয়ে কল্যাণী ব্লক তৃণমূলের সভাপতি পঙ্কজ সিংহ বলেন, ‘‘জেলায় প্রথম দিন সগুনা অঞ্চলকে বেছে নেওয়ার কারণ, এই এলাকায় প্রায় ৯০ শতাংশ তফসিলি মানুষের বসবাস। বিগত দিনে রাজ্য সরকার কী ভাবে তফসিলি মানুষদের পাশে ছিল, তা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে প্রচারে তুলে ধরা হয়েছে। পাল্টা কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দ্বারা তফসিলিরা যে বঞ্চিত হয়েছেন সে বিষয়টিও আমরা প্রচার করেছি।’’ রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবাশীষ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তফসিলি সংলাপ কর্মসূচি আগামী দিনে জেলার অন্যান্য এলাকাতেও পালিত হবে।’’
তৃণমূলের এই ধরনের কর্মসূচি প্রসঙ্গে সিপিএমের নদিয়া জেলা কমিটির সম্পাদক সুমিত দে বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার আগে তফসিলিদের ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। মতুয়া আন্দোলনকে বিভক্ত, দুর্বল করেছে তৃণমূল। এর দ্বারা তফসিলিরা কোনও ভাবেই প্রভাবিত হবেন না। আসলে তৃণমূল ও বিজেপি তফসিলিদের নিয়ে নিজেদের মতো করে রাজনৈতিক স্বার্থপূরণ করছে।’’
আর বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, ‘‘সারা বছর তৃণমূল তফসিলিদের নিয়ে কিছু করেনি। সে জন্য ওদের এখন আলাদা করে ভোটের আগে তফসিলি সংলাপ করতে হচ্ছে। আসলে ওরা মানুষকে সিএএ নিয়ে ভুল বোঝাতে চাইছে। মানুষ ওদের এই চক্রান্তে পা দেবেন না।’’