(বাঁ দিক থেকে) জন বার্লা, দেবশ্রী চৌধুরী, সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালা। ছবি: সংগৃহীত।
প্রথম দফায় বাংলার ২০ আসনের প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপি (তাঁদের মধ্যে অবশ্য আসানসোলের ঘোষিত প্রার্থী পবন সিংহ ইতিমধ্যে সরে দাঁড়িয়েছেন)। এই তালিকা নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে ১৮ আসনে জয় পেয়েছিল বিজেপি। সেই তালিকার সাতটি আসনে প্রথম দফায় প্রার্থীর নামই ঘোষণা করা হল না। এর মধ্যে আবার দু’জন প্রাক্তন এবং এক জন বর্তমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রয়েছেন। আর তা নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরছে বিজেপির মধ্যেই।
দার্জিলিং আসনে গত লোকসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন রাজু বিস্তা। এখন কেন্দ্রীয় স্তরের নেতা হয়ে যাওয়া রাজুর নাম নেই তালিকায়। তবে এমনটা যে হতে পারে তা আগেই অনুমান করা গিয়েছিল। বিজেপি সূত্রেই জানা যায়, দার্জিলিং আসনে প্রাক্তন বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন স্রিংলাকে প্রার্থী করতে পারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সে ক্ষেত্রে রাজুকে পাঠানো হতে পারে মণিপুরের কোনও আসনে। রাজু মণিপুরেরই ভূমিপুত্র। তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিজেপি কী সিদ্ধান্ত নেয় তার জন্য পরবর্তী প্রার্থিতালিকা প্রকাশ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
আলিপুরদুয়ারে প্রার্থীবদল করেছে বিজেপি। গত লোকসভা নির্বাচনে এই আসন থেকে জিতে কেন্দ্রের প্রতিমন্ত্রী হন জন বার্লা। খ্রিস্টান বার্লাই ছিলেন বাংলা থেকে বিজেপির একমাত্র সংখ্যালঘু মুখ। গত ২৫ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনেও বার্লাকে দেখা গিয়েছে। মোদী বার্লাকে পাশে নিয়েই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষদের আপ্যায়ন করেছিলেন। কিন্তু এ বারে তিনি এখনও পর্যন্ত প্রার্থী হননি। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্ভাবনাও কম। দলের বিধায়ক তথা বিধানসভার মুখ্য সচেতক ও জেলা সভাপতি মনোজ টিগ্গাকে প্রার্থী করা হয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ থেকে বিজেপি হুমায়ুন কবিরকে প্রার্থী করেছিল। কিন্তু এ বারে সেই আসনে প্রার্থী গৌরীশঙ্কর ঘোষ। আলিপুরদুয়ার আর মুর্শিদাবাদের প্রার্থী দেখে অনেকেরই প্রশ্ন, বিজেপি কি কোনও সংখ্যালঘু মুখ রাখতেই চায় না আর?
গত লোকসভা ভোটে জেতা জলপাইগুড়ি আসনের জয়ন্ত রায়ের নামও নেই প্রথম তালিকায়। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বাংলা থেকে দু’বারের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালার নামও নেই। তাঁর কেন্দ্র বর্ধমান-দুর্গাপুরের প্রার্থীর নাম এখনও ঘোষণা হয়নি। নাম নেই ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমব্রমের। বিজেপিতে এই তিনের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ রয়েছে যে, সংসদের ভিতরে বা বাইরে এঁরা তেমন সক্রিয় নন। স্থানীয় সাংগঠনিক কাজেও সে ভাবে যোগদান নেই। ফলে কর্মীদেরই অনাস্থা রয়েছে এঁদের উপর। আবার প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীর নামও ঘোষণা হয়নি। রায়গঞ্জ আসন বিজেপি ২০১৯ সালে জিতেছিল মূলত কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সি এবং সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের ভোট কাটাকাটিতে। এ বার কংগ্রেস-সিপিএম জোট হতে পারে ধরে নিয়ে বিজেপি কোনও ওজনদার প্রার্থী চাইছে। বিজেপিতে দীর্ঘ দিন থাকা সঙ্ঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ দেবশ্রীকে কি তবে প্রার্থী করা হবে না? না কি অন্য কোথাও, অন্য কোনওখানে? প্রশ্ন ঘুরছে বিজেপির অন্দরে।
এ ছাড়াও জেতা আসন ব্যারাকপুরের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি বিজেপি। তবে এটা নিয়ে বিজেপি একটু দ্বিধায় রয়েছে। আসলে এখনও জানা নেই অর্জুন সিংহ ভোটের মুখে পদ্মশিবিরে ফিরে আসবেন কি না! এমন জল্পনাও রয়েছে বিজেপির অন্দরে। এর পরেও রয়েছে মেদিনীপুর। সেখান গত বার জিতেছিলেন দলের তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেই আসনের নামও প্রথম তালিকায় নেই। প্রশ্ন রয়েছে, দিলীপ কি টিকিটই পাবেন না? না কি তাঁকেও অন্য কোথাও পাঠানোর ভাবনা। না কি মেদিনীপুরেই। দলের নানা স্তরেই এ নিয়ে জল্পনা এখন তীব্র।
আরও একটি বিষয় বিজেপিতে আলোচনা হচ্ছে। দলের অন্দরে নিজের আসনেই টিকিট পাওয়া নিয়ে জল্পনা ছিল কয়েক জনের সম্পর্কে। এর মধ্যে ছিলেন বাঁকুড়ার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার, রাণাঘাটের জগন্নাথ সরকার এবং হুগলির লকেট চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু এই তিন জনের নামই ঘোষিত। তবে গত বার লড়ে পরাজিত হওয়াদের মধ্যে এক জনকে নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। তিনি প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষ। গত বার লড়েছিলেন ঘাটালে তৃণমূলের দেবের বিরুদ্ধে। এ বার সেখানে দেব বনাম হিরণ চট্টোপাধ্যায় লড়াই। তবে কি ভারতীর ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে না? কেউ কেউ বলছেন, এখন বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র ভারতীকে আরও ভাল আসন দেওয়া হতে পারে। তবে সবটাই জানে বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটি।