Lok Sabha Election 2024

ডি-লা গ্র্যান্ডি মেফিস্টোফিলিস্! ভোট দিতে বলে হাঁক টেনিদার  

শেষমেশ টেনি মুখুজ্জে একাই এই গুরুদায়িত্ব বইবে, নাকি রণাঙ্গনে আক্ষরিক অর্থেই চারমূর্তির আবির্ভাব হবে, কৌতূহলের অন্ত নেই তা নিয়ে। নাগরিক অধিকারের তত্ত্বাবধানের কাজ বলে কথা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৪ ০৭:১৩
Share:

পোস্টারে ম্যাসকট টেনিদা। — নিজস্ব চিত্র।

শ্রদ্ধানন্দ পার্কে হওয়া মিটিংগুলোতে কেউ বলত না ‘জাতির আজ বড় সুদিন’। সবাই বলত, ‘জাতির আজ বড় দুর্দিন।’ একদিন গণেশমামার মুখে ইংরেজি শুনে খেপে গিয়ে টেনিদা ওই লাইনটাই হুবহু আউড়ে দিয়েছিল হাবুলদের কাছে। সে কথা কি নির্বাচন কমিশনের কানে গিয়েছিল? নির্ঘাৎ তা-ই। নইলে চাটুজ্জেদের রোয়াক থেকে তুলে টেনিদাকে একেবারে লোকসভার ভোটার ডেকে আনার কাজে নামিয়ে দেয়!

Advertisement

আর কী কাণ্ড, সেই টেনিদার মুখেই কি না এখন ইংরেজির খই ফুটছে! গত জানুয়ারিতেই কমিশন জানিয়ে দিয়েছিল, ভোটারদের লোকসভা নির্বাচন সম্পর্কে উৎসাহী আর
সচেতন করতে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি, বাঙালির টেনিদাকে কাজে লাগাবে তারা। গড়ের মাঠে গোরা ঠ্যাঙানো, ঝণ্টিপাহাড়ে ঘুটঘুটানন্দকে শায়েস্তা করা টেনিদা শনিবার ভোট ঘোষণা হওয়ার পরেই সেই কাজে নেমে পড়েছে। উত্তর কলকাতা জেলা নির্বাচনী অফিসারের দফতর জানিয়েছে, পটলডাঙার থান্ডার ক্লাবের ভজহরি মুখুজ্জের কার্টুন দিয়ে তৈরি হয়েছে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, পোস্টার। সেই পোস্টারে মুখটা গাজরের হালুয়ার মতো করে আঙুল উঁচিয়ে সে বলে উঠছে, ‘‘আমি পটলডাঙার টেনিদা বলছি। ব্যালট ইজ স্ট্রঙ্গার দ্যান বুলেট, এভরি ভোট কাউন্টস।’’ কখনও আবার শুদ্ধ বাংলায় বলছে, ‘‘নিশ্চিন্তে ভোট দাও, তোমার ভোট তুমি দাও।’’

কে জানে, হয়তো গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে ‘জাগো রে নগরবাসী’ বলে ‘প্রভাতসঙ্গীত’ গাইতেও টেনিদা বেরিয়ে পড়বে কোনও দিন। ‘ম্যাসকট’ বলে কথা! ভোটারদের সচেতন করতে ম্যাসকট ব্যবহার নতুন নয়। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব স্থায়ী ম্যাসকট আছে। কালো-হলুদ ডোরাকাটা সেই বাঘমামার পোশাকি নাম ‘শেরা’। নানা সময়ে দেশের নানা এলাকা বা রাজ্যে স্থানীয় চরিত্রদের ম্যাসকট হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৬ সালে মেঘালয়ে নির্বাচন কমিশন মেঘলা চিতাবাঘ বা ক্লাউডেড লেপার্ডকে ম্যাসকট করেছিল। সেই হিসেবে উত্তর কলকাতার কার্যত ‘পোস্টার বয়’ টেনিদা এ ভাবে নির্বাচন কমিশনের দূত হয়ে ওঠায় অবাক নয় প্রায় কেউই।

Advertisement

উত্তর কলকাতার জেলা নির্বাচনী অফিসার শুভাঞ্জন দাসেরও একই যুক্তি। বলছেন, ‘‘নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সৃষ্ট টেনিদা যুবক থেকে বৃদ্ধ, সকলের কাছেই সমান জনপ্রিয়। তার উপরে টেনিদা পটলডাঙা অর্থাৎ উত্তর কলকাতার বাসিন্দা। তাই উত্তর কলকাতার বাসিন্দাদের ভোটদানে উৎসাহিত করার জন্য টেনিদাকে বেছে নেওয়া হয়েছে।’’ তবে ভোট-ম্যাসকট হয়ে টেনিদার আবির্ভাব সত্ত্বেও অনেকের মন খুঁতখুঁত। চশমা-আঁটা ক্যাবলা, ঢাকাই বাঙাল হাবুল সেন, পটল দিয়ে শিঙিমাছের ঝোল খাওয়া আর পালাজ্বরে ভোগা প্যালারামকে কি ভুলে গেল কমিশন? ভোটারদের ডাকার কাজে টেনিদা আছে, অথচ চারমূর্তির বাকি তিন মূর্তিই নেই— এ কেমন নুন-ছাড়া তরকারির মতো লাগছে না? টেনিদা যদি ‘ডি-লা গ্র্যান্ডি মেফিস্টোফিলিস্‌’ বলে পাড়া কাঁপিয়ে হাঁক মারে, ‘ইয়াক্‌—ইয়াক্‌’ বলবে কারা?

শেষমেশ টেনি মুখুজ্জে একাই এই গুরুদায়িত্ব বইবে, নাকি রণাঙ্গনে আক্ষরিক অর্থেই চারমূর্তির আবির্ভাব হবে, কৌতূহলের অন্ত নেই তা নিয়ে। নাগরিক অধিকারের তত্ত্বাবধানের কাজ বলে কথা। আর কে না জানে, ‘তত্ত্বাবধান মানে— জীবে প্রেম’!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement