প্রধানমন্ত্রীর সভার প্রস্তুতি। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। ছবি : সুদীপ ভট্টাচার্য।
লোকসভা ভোটের আগে কৃষ্ণনগরে নরেন্দ্র মোদীর সভা কার্যত বিজেপির শক্তি পরীক্ষার। বিশেষ করে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বিধানসভা কেন্দ্রগুলি থেকে কত লোক আসে, সেটাই বড় প্রশ্ন। গত লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত চাপড়া, পলাশিপাড়া, কালীগঞ্জ ও নাকাশিপাড়ায় এগিয়ে থাকায় কারণেই তৃণমূল শেষ পর্যন্ত প্রায় ৬২ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিল। এবার তাই এই এলাকাগুলিতে নজর দিচ্ছে বিজেপি। বিজেপি নেতৃত্বর আশা, এই কেন্দ্রগুলির হিন্দুপ্রধান গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি থেকে প্রচুর কর্মী-সমর্থক মোদীর সভায় আসবেন।
বিজেপি সূত্রের খবর, কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে এলাকা থেকে অন্তত ৬০ হাজার লোক আনার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব। পাঁচ-ছ’টি করে বুথ নিয়ে গঠিত শক্তি কেন্দ্র ধরে লোক আনার পরিকল্পনা হয়েছে। আবার তাদের হাতে রানাঘাট কেন্দ্র থেকে অন্তত ৫৫ হাজার মানুষ আসবেন বলে দাবি বিজেপির। মোট লক্ষ্য দেড় লক্ষ। বাকিটা উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ এবং মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদ ও বহরমপুর কেন্দ্র থেকে আসবে বলে নেতাদের দাবি। এর অর্ধেকও যদি সত্যি হয়, তা হলে আজ, শনিবার কৃষ্ণনগর শহর স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। কারণ যে কলেজ মাঠে জনসভা হবে, সেখানে মেরেকেটে ৬০-৬৫ হাজার লোক ধরে। ফলে অনেকেই মাঠে ঢুকতে পারবেন না। মুর্শিদাবাদ তো বটেই, নদিয়ারই করিমপুর বা কল্যাণীর মতো দূরের এলাকা থেকে কর্মীরা সভা শুরুর আগে মাঠ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবেন কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। মাঠে ঢুকতে না পারা লোকের ভিড়েই কৃষ্ণনগরের রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে যেতে পারে।
রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বেশির ভাগ বিধানসভা কেন্দ্রও বিজেপির হাতে রয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে প্রায় ২ লক্ষ ৩৩ হাজার ভোটে কেন্দ্রটি জিতেছিল তারা। বিধানসভা ভোটে সব বিধানসভা কেন্দ্র মিলিয়ে সেই ব্যবধান দাঁড়ায় লাখখানেক ভোটে। তবে পঞ্চায়েত এবং পুরভোটে তৃণমূলের চেয়ে বিজেপি অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে। ফলে লোকসভা ভোটের আগে দক্ষিণ নদিয়ায় দলের সাংঠনিক শক্তি ফের ঝালিয়ে নিতে চাইছেন নেতারা। ২৭০টি বাসে কর্মীদের সভায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নেতাদের দাবি, ট্রেনেও যাবে হাজার দশেক লোক। এ ছাড়া বিভিন্ন ছোট গাড়ি, অটো, টোটো মিলিয়ে থাকছে আরো ছ’শোর বেশি যান। বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সংগঠনিক জেলা সভাপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, "শুধু আমাদের কর্মী-সমর্থকেরাই নন, তার বাইরে বহু সাধারণ মানুষ সভায় যাবেন।"
জেলা বিজেপি সূত্রের খবর, কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের জন্য প্রায় চারশো বাস ভাড়া করা হয়েছে। সেই সঙ্গে থাকছে প্রায় আড়াইশো পণ্যবাহী গাড়িও। মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে প্রায় দু’শো বাস আসছে। বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অর্জুন বিশ্বাসের দাবি,“বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদানে কৃষ্ণনগর শহর কার্যত স্তব্ধ হয়ে যাবে।” জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র বাণীকুমার রায় পাল্টা বলেন, "মাঠে লোক ভরাতে ওদের নদিয়া ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে লোক আনতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সভা করুন, কিন্তু তিনি রাজ্যের বকেয়া টাকাও মিটিয়ে দিয়ে যান।"