Lok Sabha Election 2024

অশান্তির জেরে ধাক্কা কারবারে, হতাশ অনেকে 

গাইঘাটা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বহু মানুষ ওই মেলার মাধ্যমেই অর্থ উপার্জনের উপায় খুঁজে পেয়েছিলেন। এই সময়ে মেলা চত্বর বাদ দিয়েও গোটা ঠাকুরনগর এলাকা জুড়ে বসে কয়েক হাজার দোকান।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:০৯
Share:

মেলায় তেমন বেচাকেনা নেই। হতাশ বিক্রেতা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

মতুয়া ধর্ম মহামেলা শুধু কামনা সাগরে পুণ্য স্নান নয়, অনেকের কাছে ব্যবসার বড় ক্ষেত্র, আয়ের উৎসও বটে। বছরের পর বছর এটাই বাস্তব চিত্র ঠাকুরনগরের মানুষের কাছে। কিন্তু এ বার সেই মেলাকে কেন্দ্র করে অর্থনীতি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। কারণ, ঠাকুরবাড়ির দু’টি পরিবারের মধ্যে গোলমাল বাধে রবিবার। তাতে রাজনীতির রং লেগেছে স্বাভাবিক কারণেই। বিজেপির শান্তনু ঠাকুর ও তৃণমূলের মমতা ঠাকুরের মধ্যে রবিবার রাতের অশান্তির রেশ ছড়িয়েছে এ বারের মহামেলায়। লাটে উঠেছে মেলায় পসরা সাজানো দোকানিদের ব্যবসা। নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী, মেলা শেষ হওয়ার কথা আগামী ১২ এপ্রিল। কিন্তু বেশিরভাগ দোকানদার মনে করছেন, পরিস্থিতি যে পরিমাণ ঘোরাল হয়েছে ঠাকুরবাড়ির অন্দরে, তাতে ভক্তেরা অনেকেই বিরক্ত হয়ে ফিরে গিয়েছেন। কার্যত সোমবার থেকেই মেলা যেন শেষ হয়ে গিয়েছে— অনেকের তা মনে হচ্ছে ভিড় দেখে।

Advertisement

গাইঘাটা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বহু মানুষ ওই মেলার মাধ্যমেই অর্থ উপার্জনের উপায় খুঁজে পেয়েছিলেন। এই সময়ে মেলা চত্বর বাদ দিয়েও গোটা ঠাকুরনগর এলাকা জুড়ে বসে কয়েক হাজার দোকান। গ্রামীণ মেলায় যাবতীয় পসরা নিয়ে এখানে হাজির হন বহু দূর থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। মতুয়া ধর্মের বই, ক্যাসেট, ঘুগনি, গজা, জিলিপি, আইসক্রিম, ফুচকা, জুতো, হরিচাঁদ ঠাকুরের ছবি দেওয়া গেঞ্জি, মূর্তি নিয়ে ছোট ছোট দোকানে ছেয়ে যায় মেলা। ডঙ্কা, পিতলের বাসন, বাঁশি, গামছা, ধুতি, দা-কাস্তে, কোদাল, ছুরি, বঁটি নিয়েও দোকান পাতেন অনেকে। ব্যবসায়ীরা জানালেন, অন্য মেলা থেকে এখানে লোক সমাগম অনেক বেশি হয়। বেচাকেনা ভাল হয়। হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের ছবি-সহ পুজোর বাসনপত্রের দোকান দিয়েছেন এক ভক্ত। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতি বছরই এখানে পসরা সাজাই। ভাল আয় হয়। কিন্তু এ বারই তার ব্যতিক্রম ঘটল অবাঞ্ছিত অশান্তির জন্য।’’

ঠাকুরবাড়ির পাশের মাঠ জুড়ে দোকান বসে। মঙ্গলবার মেলা ঘুরে দেখা গেল, সকলের ক্ষোভ অশান্তির জেরে মেলার ভিড় কমে যাওয়ার কারণে। গাইঘাটা এলাকাটি কৃষিপ্রধান। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চাষের ক্ষতির জন্য ধার-দেনা হয় বহু চাষির। এই মেলায় অনেকে দোকান দিয়ে সেই ক্ষতি কিছুটা সামলানোর চেষ্টা করেন। শুধু দোকান নয় বাড়িতে সাইকেল, বাইক রাখার অস্থায়ী গ্যারেজ তৈরি করেও অনেকে অর্থ রোজগার করছেন। তাঁরাও এ বার হতাশ। অশোকনগরের বাসিন্দা মাধব বিশ্বাস এ বার মেলায় কার্পেট ও পাপোষের দোকান দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতি বছর এখানে আসি। এ বারও প্রথম দু’দিন প্রচুর মতুয়া ভক্ত এসেছিলেন। বেচাকেনা ভালই হচ্ছিল। ভক্তেরা দূর থেকে আসেন বলে পুণ্যস্নান করার পরেও ২-৩ দিন থেকে যান। কিন্তু এ বার অশান্তির জেরে অধিকাংশ ভক্ত ফিরে গিয়েছেন। ব্যবসা ভাল হয়নি। খরচই হয় তো উঠবে না।’’

Advertisement

নদিয়ার রানাঘাটের বাসিন্দা দীনেশ সাউ মনোহারি দোকান দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘মেলার প্রথম দিন ভাল ব্যবসা হয়েছিল। দ্বিতীয় দিন বৃষ্টির জন্য বেচাকেনা তেমন হয়নি। রবিবার থেকেই শুরু হল অশান্তি। ফলে মতুয়া ভক্তদের ভিড় কমে গিয়েছে অনেকটাই। রোজ বিদ্যুৎ খরচ তিনশো টাকা। এ বার খরচ উঠবে না।’’

মনোহারি দোকানদার কল্যাণীর হর্ষিত রায়েরও একই কথা, ‘‘আমরা ঠাকুরবাড়িতে অশান্তি চাই না। অশান্তি হলে আমরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই। ভক্তেরা তো চলেই গেলেন!’’ বাদুড়িয়ার শঙ্কর পালের পিতলের জিনিসপত্রের দোকান। তিনি বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে জেনেছিলাম ঠাকুরবাড়িতে অশান্তির কথা। ভক্তেরা বিষয়টা অনেকেই ভাল চোখে নিলেন না। ফিরে গেলেন বেশির ভাগ মানুষ। আর আমরা ডুবলাম এখানে দোকান দিয়ে।’’

যদিও এ বিষয়ে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা বনগাঁর বিদায়ী সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘‘মেলায় তো রোজই ভিড় হচ্ছে। মেলা শেষ হতে আরও কয়েকটা দিন বাকি আছে। ব্যবসায়ীদের ভাল ব্যবসা করার সুযোগ রয়েছে। এখনও প্রচুর মতুয়া ভক্ত আসবেন। ব্যবসায়ীদের চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement