নারী শক্তিকে সম্মান জানিয়ে বারাসাতে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যের মধ্যে অন্যতম মতুয়া অধ্যুষিত দুই জেলা উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সভা থেকে শোনা গেল না মতুয়াদের কথা। উঠল না সিএএ প্রসঙ্গও। হতাশ মতুয়াদের বড় অংশ।
নরেন্দ্র মোদী দুই জেলার বারাসত এবং কৃষ্ণনগরে সভা করেছেন। বুধবার বারাসতে এসেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীচৈতন্য দেবের নাম করেছেন মোদী। শোনা গিয়েছে, ‘মা কালী’, ‘জয় দুর্গা’ ধ্বনিও। কিন্তু মতুয়ারা আশা করেছিলেন, তাঁদের আরাধ্য দেবতার নামও করবেন মোদী। তেমনটা ঘটেনি।
মতুয়াদের অনেকে জানালেন, আগে যখন এই দুই জেলায় সভা করেছিলেন মোদী, তখন তাঁর মুখে মতুয়াদের কথা বা মতুয়াদের প্রাণপুরুষ হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের কথা শোনা গিয়েছিল। অনেক মতুয়া ভক্তের কথায়, ‘‘মঙ্গলবার ছিল মতুয়াদের বড়মা বীণাপাণি ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস। ২০১৯ সালের ৫ মার্চ বড়মা মারা গিয়েছিলেন। পর দিন প্রধানমন্ত্রী মহিলাদের সম্মান জানানোর সভা করলেন, অথচ বড়মার কথা স্মরণ করতে কী করে ভুলে গেলেন!’’ পাশাপাশি মতুয়াদের একাংশ আশা করেছিলেন, লোকসভা ভোটের আগেই সিএএ (নাগরিকত্ব আইন) কার্যকর করা নিয়ে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী। সেই আশাও পূরণ হয়নি।
বিজেপির রাজ্যস্তরের এমনকী কেন্দ্রীয় নেতারাও গত কয়েক মাসে দাবি করেছেন, লোকসভা ভোটের আগে সিএএ কার্যকর হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে উচ্চবাচ্য না করায় মতুয়ারা অনেকেই হতাশ। তা হলে কী কেন্দ্র এখনও এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি, উঠছে প্রশ্ন। পাল্টা অনেকের অবশ্য দাবি, মোদী কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। সিএএ কার্যকর করে তবেই তিনি কথা বলবেন।দু’টি সভায় প্রধানমন্ত্রী মতুয়াদের কথা না বলায় মতুয়ারা অপমানিত বলে মনে করছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুর। তিনি বলেন, ‘‘নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দু’টি সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুর্গা, কালী, শ্রীচৈতন্য, কৃষ্ণ ঠাকুরের নাম নিলেন। অথচ মতুয়াদের ঠাকুর হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম নিলেন না একবারও। এটা মতুয়াদের অপমান।’’ মমতার কথায়, ‘‘মতুয়াদের এটা বোঝা উচিত, বিজেপি মতুয়াদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে।’’ সিএএ প্রসঙ্গে মমতার বক্তব্য, ‘‘বিজেপি মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেবে না। দিলে ২০১৯ সালেই দিয়ে দিত। সিএএ কার্যকর করা নিয়ে ভোটের আগে বিজেপি আবারও মতুয়াদের ভাঁওতা দিচ্ছে।’’
প্রধানমন্ত্রী মতুয়াদের নিয়ে কোনও কথা না বলায় সরব হয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বও। রাজ্যের সেচমন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মতুয়াদের যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার একটাও রাখতে পারেননি। এটা মতুয়ারা জেনে গিয়েছেন। তাই মতুয়া সমাজের প্রসঙ্গ প্রধানমন্ত্রী মুখে আনছেন না। তা ছাড়া, বিজেপি মানসিক ভাবে এসসি-এসটি সমাজের মানুষকে ঘৃণা করে।’’
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুরের যুক্তি, ‘‘নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনায় প্রধানমন্ত্রী যে সভাগুলি করলেন, তা ছিল মূলত সরকারি অনুষ্ঠান এবং রাজনৈতিক সভা। আগামী দিনে আরও সভা করবেন। তখন নিশ্চয়ই মতুয়াদের কথা তাঁর মুখে শোনা যাবে।’’ তৃণমূলের সমালোচনা প্রসঙ্গে শান্তনুর জবাব, ‘‘সিএএ খুব শীঘ্রই কার্যকর হতে চলেছে। এটা নিয়ে তৃণমূল উদ্বিগ্ন। মতুয়াদের নাম মুখে নিলাম আর মতুয়াদের নিয়ে রাজনীতি করলাম— প্রধানমন্ত্রী এই নীতিতে বিশ্বাস করেন না। সেটা তৃণমূল করে। প্রধানমন্ত্রী কাজে বিশ্বাসী।’’
এ প্রসঙ্গে পুরনো বিতর্ক উস্কে দিয়ে শান্তনু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে কুকথা বলে মতুয়া সমাজকে অপমান করেছিলেন। সেটা কি ভুলে গিয়েছেন ওঁরা।’’ তৃণমূলের যুক্তি, কথা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর একটি প্রমাদকে টেনে এনে রাজনীতি করে কুরুচিরই পরিচয় দিয়েছে বিজেপি।