মমতা ঠাকুর (বাঁ দিকে), শান্তনু ছাকুর (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা বনগাঁর প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতা ঠাকুরকে এ বার রাজ্যসভায় প্রার্থী করল তৃণমূল। রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, লোকসভা ভোটের আগে মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক নিজেদের অনুকূলে টানতেই এই পদক্ষেপ। যদিও মতুয়া ঠাকুরবাড়ির সদস্য, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের দাবি, এর কোনও প্রভাব মতুয়া ভোটব্যাঙ্কে পড়বে না।
মমতাকে রাজ্যসভার প্রার্থী করার অর্থ, লোকসভা ভোটে তাঁর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা কার্যত কমে গেল। সে ক্ষেত্রে প্রার্থী কে হতে পারেন, তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে। আলোচনা শুরু হয়েছে, প্রার্থী এ বার বহিরাগত হবেন না তো? এত দিন তৃণমূলের ঘরোয়া আলোচনায় লোকসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে মমতার পাশাপাশি তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের নাম শোনা যাচ্ছিল। যদিও বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘আমাকে লোকসভা ভোটে প্রার্থী করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বিষয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই।’’
২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী করেছিল মমতার স্বামী কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরকে। তিনি ভোটে জেতার পরে, ওই বছরই মারা যান। পরবর্তী সময়ে বনগাঁ লোকসভা আসনে উপ নির্বাচন হয়। মমতা ঠাকুরকে প্রার্থী করে তৃণমূল। তিনি ভোটে জেতেন। ২০১৯ সাল পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন।
২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে দল তাঁকে প্রার্থী করলেও বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুরের কাছে পরাজিত হন মমতা। কেন তাঁকে রাজ্য সভার প্রার্থী করা হল?
রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, তৃণমূলের মধ্যে এখন ‘মতুয়া-মুখ’ বলতে কার্যত মমতা ঠাকুরই। মতুয়া ঠাকুরবাড়ির সদস্য হিসেবে তৃণমূলে আছেন মমতাই। কারণ, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তৃণমূলের মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর এখন তৃণমূলে নেই। মঞ্জুলের দুই ছেলে সুব্রত ও শান্তনু দু'জনেই বিজেপিতে। সুব্রত গাইঘাটার বিধায়ক, শান্তনু বনগাঁর সাংসদ।
সাংসদ না থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী মতুয়া উন্নয়ন পর্ষদ তৈরি করে মমতা ঠাকুরকে দায়িত্ব দিয়েছেন। নাগরিকত্ব নিয়ে তৃণমূলের ঘোষিত নীতির পক্ষে সওয়াল করেন মমতা ঠাকুর। সিএএ-এর বিরোধিতা করেন মতুয়াদের একাংশকে নিয়ে। নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবি তোলেন। ২০১৯ সালের লোকসভা এবং ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপি নেতৃত্ব মতুয়া এবং উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের আশ্বাস দিয়েছিল। মতুয়া উদ্বাস্তুদের সমর্থন পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু এখনও নাগরিকত্ব না পেয়ে মতুয়াদের অনেকে ক্ষুব্ধ। এই পরিস্থিতিতে মতুয়াদের ওই অংশের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে তাঁদের কাছে টানতেই ঠাকুরবাড়ির সদস্য মমতাকে রাজ্যসভায় প্রার্থী করা হল।
তবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ শান্তনু। তিনি বলেন, ‘‘ঠাকুর পরিবারের সদস্য হিসেবে মমতা ঠাকুরকে রাজ্যসভার প্রার্থী হওয়ার জন্য ধন্যবাদ। তবে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে যে শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা থাকা উচিত, তা ওঁর নেই।’’ শান্তনুর দাবি, ‘‘মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক নিজেদের দিকে টানতে তৃণমূলের এই পদক্ষেপ সফল হবে না।
মমতা ঠাকুরের সঙ্গে রবিবার যোগাযোগ করা যায়নি। মতুয়া মহাসঙ্ঘ সূত্রে জানানো হয়েছে, তিনি মহারাষ্ট্রে রয়েছেন। রাজ্য সভার প্রার্থী ঘোষণার পরে ঠাকুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
তবে তৃণমূলের ঘোষণায় মতুয়া ভক্তদের অনেকে খুশি। তাঁদের অনেকের মতে, সংসদে গিয়ে মমতা ঠাকুর এ বার নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবিতে আওয়াজ তুলতে পারবেন।
অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের কথায়, ‘‘মমতা ঠাকুর প্রার্থী হওয়ায় আমরা খুবই খুশি। এই প্রথম অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের কাউকে বা ঠাকুরবাড়ির কাউকে রাজ্যসভায় পাঠানো হচ্ছে। আমাদের নিঃশর্ত নাগরিকত্বের যে দাবি আছে, তা নিয়ে তিনি এ বার রাজ্যসভায় লড়াই করতে পারবেন।’’ তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘মতুয়া এবং মতুয়া ঠাকুরবাড়ির উন্নয়ন যদি স্বাধীনতার পরে কেউ করে থাকেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বড়মা বীণাপাণি ঠাকুরকে রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া থেকে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা— সবই করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মতুয়ারা যে মুখ্যমন্ত্রীর হৃদয়ে থাকেন, তা মমতা ঠাকুরকে রাজ্যসভায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত থেকে আবারও প্রমাণিত।’’ তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূল মতুয়াদের নিয়ে রাজনীতি করে না। তাঁদের সম্মান দেয়, উন্নয়ন করে। মমতা ঠাকুরকে প্রার্থী করার প্রভাব অবশ্যই মতুয়াদের মধ্যে পড়বে।’’