(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনে বাংলার বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বা বিজেপির অন্য নেতৃত্বকে রেশনের চালের কথা বলতে শোনা গিয়েছে। প্রতি ক্ষেত্রেই তাঁরা দাবি করেছেন, কোভিড অতিমারির সময় থেকে বাংলায় বিনামূল্যে রেশন দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিজেপির এই দাবি বার বার নস্যাৎ করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার আরামবাগের সভা থেকে রেশনের টাকার হিসাবও দিয়ে দিলেন তিনি।
আরামবাগের কালীপুর মাঠে বুধবার মমতার সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানকার তৃণমূল প্রার্থী মিতালি বাগের সমর্থনে প্রচার করতে গিয়ে রেশনের চালের হিসাব দেন মমতা। মোদীকে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘উনি প্রতি সভায় গিয়ে গিয়ে বলছেন, রেশনের চাল নাকি বিনামূল্যে দেন। মিথ্যা কথা! এত মিথ্যাবাদী প্রধানমন্ত্রী আমি আগে কখনও দেখিনি। আমার ভাবলে লজ্জা হয়।’’
এর পরেই রেশনের চালের হিসাব মঞ্চে বিশদে বোঝান মমতা। বলেন, ‘‘রাজ্যের ৯ কোটি মানুষকে আমি রেশন দিই। এই খাতে কেন্দ্রের ধার্য বছরে সাত হাজার কোটি টাকা। আর রাজ্যের ধার্য ৯ হাজার কোটি টাকা। কোভিডের পর থেকে গত দু’বছরে রেশন দেওয়ার জন্য আমরা মোট ১৮ হাজার কোটি টাকার চাল কিনেছি। সেই সঙ্গে আরও ১২ হাজার কোটি টাকা আমরাই দিয়েছি। মোদী এক পয়সা দেননি। উনি মিথ্যা কথা বলছেন।’’
আরামবাগের সভায় মমতার মঞ্চেই হাজির ছিলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল প্রার্থী তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে রেশনের চালের প্রসঙ্গে মোদী তথা বিজেপির এই ‘মিথ্যা’ ভাষণ ধরে ফেলার পরামর্শ দেন মমতা। বলেন, ‘‘উনি প্রতি সভায় গিয়ে মিথ্যা কথাগুলো বলে যাচ্ছেন। কল্যাণ, তোমরা তো এগুলো ধরতে পারো।’’
উল্লেখ্য, লোকসভা ভোটের প্রচারের প্রথম পর্ব থেকেই মমতা রেশনের চাল নিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ করে আসছেন। প্রায় প্রতি সভায় গিয়ে তিনি জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, রেশনের চালের টাকা কেন্দ্র নয়, দেয় রাজ্য সরকার। এর সঙ্গেই রান্নার গ্যাসের দাম নিয়ে মোদী সরকারকে তিনি তুলোধনা করেন। বার বার তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমি বিনা পয়সায় চাল দিচ্ছি। সেই চাল মানুষকে ফোটাতে হচ্ছে হাজার টাকার গ্যাস কিনে। হাজার টাকার গ্যাসে ফুটছে বিনা পয়সার চাল!’’ এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে একাধিক বার তিনি ‘নন্দলাল’ বলেও কটাক্ষ করেছেন। বুধবার সেই রেশনের হিসাব দিলেন মমতা নিজেই।
আরামবাগের সভা থেকে সন্দেশখালি, চাকরি বাতিল প্রভৃতি একাধিক ইস্যুতে বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন মমতা। হাই কোর্টের চাকরি বাতিলের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার স্থগিতাদেশ দিয়েছে। তাতে তিনি তৃপ্ত বলে জানিয়েছেন মমতা। সেই সঙ্গে বিজেপিকে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘ওরা চাকরিখেকো বাঘ। ২৬ হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি খেয়ে নিয়েছিল। বেতনও ফেরত দিতে বলেছিল। আমি প্রথম থেকে বলেছিলাম, ওদের পাশে আছি।’’ সন্দেশখালির আন্দোলনে লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল সরকার কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল। তার পর কিছু দিন আগে সেখানকার ‘স্টিং ভিডিয়ো’ প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে, টাকার বিনিময়ে সন্দেশখালির ঘটনা সাজানো হয়েছিল। সে প্রসঙ্গে আরামবাগ থেকে মমতা বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে কেমন টাকার খেলা হয়েছে, দেখলেন তো সকলে! মা-বোনেদের সম্মান নষ্ট হলে টাকার বিনিময়ে কি তা আর ফেরানো যায়? ভোটের বাক্সে এর বদলা হবে।’’