মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
লোকসভা ভোটে বিরোধীদের প্রস্তাবিত জোটে আঞ্চলিক দলগুলির ‘অধিকার’ নিয়ে অনড়ই রইলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তা-ই নয়, ঘুরিয়ে হলেও সেই বিন্যাসেই আসনরফা নিয়ে নিজের পুরনো শর্তই জানিয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। তবে বিরোধীদের মধ্যে সেই বোঝাপড়া গড়ে তোলা গেলে বিজেপি ক্ষমতায় থাকবে না বলেও মন্তব্য তাঁর। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেন, বিজেপির সুরেই কথা বলছেন মমতা।
বিজেপির বিরুদ্ধে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চে তৃণমূলের অবস্থান আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন মমতা। রেড রোডে শুক্রবার ধর্নার প্রথম দিন সেই প্রসঙ্গ টেনে কংগ্রেস তো বটেই, নির্দিষ্ট করে রাহুল গান্ধীর ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলে জোট সম্ভাবনায় কার্যত ইতি টেনে দিলেছিলেন তিনি। এ দিন রাহুল গান্ধীর জনসংযোগ যাত্রার অন্যতম সঙ্গী যোগেন্দ্র যাদব এসেছিলেন তাঁর মঞ্চে। তাঁকে সামনে রেখে মমতা এ দিন বলেন, ‘‘যোগেন্দ্রভাই এসেছেন। আমাদের দিক থেকে কোনও আপত্তি নেই। খেলতে হবে, জিততেও হবে।’’ তার পরেই ‘অলআউট খেলা’র কথা বলে মমতা বুঝিয়ে দেন, এই মাটিতে লড়াইয়ের পূর্ণ দায়িত্ব তিনিই নিচ্ছেন।
সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রে কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ যোগেন্দ্রর সঙ্গে মমতার পরিচয় পুরনো। তাঁর মাধ্যমে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে বক্তৃতায় তৃণমূল নেত্রী আরও বলেন, ‘‘আঞ্চলিক দলগুলি, জাতীয় দলগুলি যদি এ ভাবে (সার্বিক লড়াই) এগিয়ে যায়, তা হলে আমি বিশ্বাস করি, বিজেপি থাকবে না।’’ কিন্তু এই ‘অল আউট’ লড়াইয়ের কোনও ব্যাখ্যা না দিয়েই মমতা বলে চলেন, ‘‘কেউই চিরকাল থাকে না। চিরকাল থাকবে না।’’
তৃণমূলের মঞ্চে মমতার আগে বক্তৃতা করেন যোগেন্দ্র। সারসরি জোট প্রসঙ্গে না গেলেও মমতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে দেশ আর সংবিধান বাঁচাতে আপনি লড়াই করুন। অনুরোধ করছি, নিজেদের ছোটখাটো মতপার্থক্য ছেড়ে দিন। বড় মন নিয়ে লড়াই করুন।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘দিদি যে লড়াই লড়ছেন তা গোটা দেশের সংবিধান আর আত্মাকে বাঁচানোর লড়াই।’’
ধর্নামঞ্চ থেকে কংগ্রেসকে তুলোধনা করেছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার উপস্থিতিতেই তিনি প্রদেশ কংগ্রেসের তৃণমূল-বিরোধিতার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘এ রাজ্যের কংগ্রেস হল, ‘খানদানি বিশ্বাসঘাতক। অধীর চৌধুরী বিজেপির বড় দালাল।’’ সেই সঙ্গেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের তোলা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে পাল্টা সুর চড়িয়ে কল্যাণের প্রশ্ন, ‘‘সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীও কি জামিনে নেই? ওঁরা কী ভাবে এ রাজ্যে দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে?’’ কটাক্ষের সুরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমার তো সন্দেহ হয়, কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির বোঝাপড়া নেই তো!’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর বলেন, “দিদি যে এখন বিজেপির সুরে বলছেন, সেটা এখন সবাই দেখতে পাচ্ছেন। বিজেপি ও আপনার ভাষা এক হচ্ছে কেন? মোদীর সঙ্গে দিদির কী শর্তে আঁতাঁত হয়েছে?” কংগ্রেসের আসন সংখ্যা নিয়ে মমতার সংশয় প্রকাশ প্রসঙ্গে অধীর বলেন, ‘‘বিজেপি বলে, কংগ্রেস ক’টা আসন পায়, গুনতে হবে। দিদি বলছেন, ৪০টা আসন পায় কি না, তার ঠিক নেই। মোদীজি এবং বিজেপি বলে, কংগ্রেস মুসলমানদের তোষণের রাজনীতি করে। ঠিক একই অভিযোগ করে মমতাও বলেন, মুসলমানদের সুড়সুড়ি দিতে এসেছে।’’