বারাসতের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক থেকে।
কাকলির হয়ে ভোট প্রার্থনা করলেন মমতা। বললেন, ‘‘কাকলি আমার দীর্ঘ দিনের সহকর্মী। অসমে গিয়ে মার খেয়েছিল। এদের মতো মহিলা চাই, যারা এগিয়ে যাবে। লড়াই করবে। এক নম্বরে ভোট দেবেন। যখন যেখানে যেতে বলি, ও যায়। খুব ভাল সাংসদ। মিথ্যেবাদী নেতাদের ছোঁবেন না। ওরা ৪৪৪ ভোল্ট।’’
মমতা বলেন, ‘‘বলছে বোমা ফাটাব। ২৬ হাজার লোকের চাকরি খেল। হাসছে। ভয়ঙ্কর। আমরা ১০ লক্ষ চাকরি নিয়ে রেডি। সঙ্গে জুটেছে সিপিএমের দু’-তিনটে অপদার্থ। আমরা করলে কিল, ওরা করলে পিল। মামলা করে সব আটকে দিচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে মামলা লড়বে বলে কম টাকা নেয়নি। নির্লজ্জ। আজ আমি যদি কোর্টে দাঁড়াই, গরিব মানুষ বিপদে পড়লে, আমি কি টাকা নেব? যারা রাজনীতি করবে, এমপি, এমএলএ হবে, টাকা নিয়ে কেস করবে, চাকরিও আটকাবে? তাই এঁদের বিরুদ্ধে বলতে হবে, গলি গলি মে শোর হ্যায়... সিপিএম লুটেরা, ভুলবেন না।’’
মমতা বলেন, ‘‘সব বিক্রি করে দিয়েছে। ইছাপুরে বন্দুক তৈরি হয় না। হয় বিদেশে। ১০০ দিনের কাজে টাকা দেওয়ার টাকা নেই। আমাদের বলে চোর। এত টিম পাঠিয়েছে। একটা প্রমাণ দিতে পারেনি। আমরা ৪৩ লক্ষ বাড়ি করে দিয়েছি। কর্মশ্রী প্রকল্প করেছি।’’
মমতা বলেন, ‘‘সন্দেশখালি নিয়ে আবার মিথ্যে কথা বলে গেলেন। আবার প্ল্যান করেছে। দাঙ্গা করার প্ল্যান নম্বর বি। সন্দেশখালি হল না বলে, আবার নাকি বাবুরা যাচ্ছেন। ওরা যাওয়া মানেই তো, কী প্ল্যান করবে। আবার তো দাঙ্গা লাগানোর প্ল্যান করছে। আমরা করতে দেব না। যে লাগাবে, তাকে ছাড়ব না।’’
মমতা বলেন, ‘‘অনেক সময় আমরাও বুঝতে পারি না, ফল কী হবে। মানুষ ঠিক করে ফেলেছে। তা না হলে কেউ বলে, জগন্নাথদেবও নাকি ওঁর ভক্ত। বুঝুন, ভগবানের থেকেও বড়। তা ভগবানের থেকে বড় হলে আপনি মন্দিরে থাকুন, পুজো করব। যা ইচ্ছা তা-ই করছে, বলছে। মুখে লাগাম নেই। কুৎসা, মিথ্যা কথা।’’
মমতা বলেন, ‘‘জল দিচ্ছি আমরা, জমি দিচ্ছি আমরা, রেশন দিচ্ছি আমরা। মিথ্যে বলছে মোদীরা। এখন বলছে ঘরে ঘরে গ্যাস দেবে। ফোর টোয়েন্টি। ১৫ লক্ষ টাকা, ২ কোটি ছেলেকে চাকরি, সবই ফোর টোয়েন্টি। কারও চাকরি নেই। ৮০ শতাংশ লোকের চাকরি নেই। মোদীরা হারছে।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমরা জিতলে লক্ষ্মীর ভান্ডার করব। ২০২১ সালে বলেছিলাম। দিয়েছি কি দিইনি! স্মার্ট কার্ড, সবুজসাথী সাইকেল। সবই করেছি। আগামী বছর থেকে একাদশ শ্রেণিতে স্মার্ট ফোন পাবে পড়ুয়ারা।’’
মমতা বলেন, ‘‘দু’বার ভোটে জিতে এত মিথ্যে কথা! আজও বলছেন মিথ্যে, মুসলিমরা জিতলে তফসিলিদের সংরক্ষণ কেড়ে নেবে। আমার প্রতিশ্রুতি, কোনও মুসলিম আপনাদের সংরক্ষণ কাড়বে না। আমারও কাড়ার অধিকার নেই। এটা বিজেপির মিথ্যা কথা। কেউ সংরক্ষণ কাড়তে পারে! নাম কেউ কাড়তে পারে! দেশে কি আইনকানুন নেই! বাড়তে পারে, কিন্তু কমবে না। জনজাতি, অনগ্রসর শ্রেণি, সংখ্যালঘু, সকলের সংরক্ষণ থাকবে। না জেনে কথা বলেন।’’
মমতা বলেন, ‘‘সিএএ নিয়ে অসমে আন্দোলন শুরু হয়েছে। বাঙালিরা ভয়ে ভয়ে রয়েছেন। বিজেপি কালোকে সাদা করতে মিথ্যে বলে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বাংলায় সিএএ হবে না। অভিন্ন আচরণবিধি হবে না।’’
মমতা বলেন, ‘‘রাম, বাম একই কাজ করে। ইন্ডিয়া জোটে আছি। জিতিয়ে দিল্লিতে ক্ষমতায় আনব। কিন্তু বাংলায় ওদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক থাকবে না। বাংলায় ওরা কখনও বিজেপিকে তুলে দেয়। ওদের ভোট দিয়ে কী লাভ? খায় না মাথায় দেয়? ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকে নতুন হাসপাতাল করেনি। ৪২টি নতুন হাসপাতাল করেছি। আজ ৪০-৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয়।’’
মমতা বলেন, ‘‘হাবড়ায় শুনছি মিছিল মিটিং করছে। বালু (রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক) নেই বলে। আইন আইনের পথে চলবে। বিজেপি কেজরীকেও গ্রেফতার করেছিল দেখেছিলেন। যখন কোর্ট মুক্তি দেবে, পাবেন। কিন্তু কোন সিপিএম? যাঁরা হাত, নাক, কান কেটেছে? বালিগঞ্জে ১৯ জন আনন্দমার্গীকে পুড়িয়ে মেরেছে। আমাকে রাস্তায় ফেলে মাথা চৌচির করেছিল। এই সিপিএম দল। হাজার হাজার লোক খুন করেছিল এই সিপিএম। ভুলে যাবেন না, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামে আজও বহু লোকের খোঁজ নেই। তাপসীকে পুড়িয়ে মেরেছিল। যাঁরা সিপিএম করত, তাঁরা বিজেপি করে।’’
মমতা বলেন, ‘‘ওঙ্কারনাথ মন্দির একটা তোরণ করতে চেয়েছিল। আমি তা-ও করে দিয়েছি। বেলুড়ে জেটি করে দিয়েছি। যে যেখানে বলেছেন। মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার, থান, আমি ভেদাভেদ করি না। ওরা বলে হিন্দুধর্মে বিশ্বাস করি না। আমি জানি আমার নাম কে দিয়েছিল। পদবি কে দিয়েছিল। ভাগ্যিস হিন্দু ছিলাম। নয়তো বলত বিদেশ থেকে এসেছে। এনআরসি করে দিত। আমি কখনও বলি না, কিন্তু আমিও হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে। মনে রাখবেন। কিন্তু পরিচয় দিই না। কারণ বিজেপির থেকে সার্টিফিকেট নেব না, যে আমি হিন্দু না মুসলিম। আমি মানুষ। বিজেপি নোংরা পার্টি। সঙ্গে জুটেছে সিপিএম।’’
মমতা বলেন, ‘‘ভগিনী নিবেদিতার বাড়ি দখল হয়ে গিয়েছিল বাগবাজারে। আমি নিজে দু’বার গিয়েছি। রাজ্য সরকারের টাকা দিয়ে, পুরসভার টাকা দিয়ে কিনিয়ে দিয়েছি। দার্জিলিঙে যেখানে নিবেদিতা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, মিটিং ডাকি। বিমল গুরুং ছিলেন জিটিএতে। ওকে বলি, অন্য বাড়ি না-ও। ওটা হবে না।’’
মমতা বলেন, ‘‘স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি বিক্রি হয়ে যাচ্ছিল। আমার কাছে খবর এসেছিল। আপনাদের জেলার মানুষ সুব্রত মৈত্র। এক দিন মধ্য রাতে ফোন। বললেন, কতগুলো লোক এসে বাড়ি দখল করছে। এক দিনে আমি পুরসভাকে দিয়ে ওই বাড়ি কিনিয়ে দিয়েছিলাম। কারণ, তখন আমাদের পুরসভা ছিল।’’
মমতা জানান, মধ্যমগ্রামে অনুকূল ঠাকুরের আশ্রমের জন্য পাঁচ একর জমি দেওয়া হয়েছে। বিনামূল্যে। যাতে সেটা ভাল করে তৈরি হয়ে যায়। তাঁর কথায়, ‘‘লোকনাথ বাবার চাকলা ধাম, সেখানেও অনেক টাকা খরচ করা হয়েছে। কচুয়া ভাল ভাবে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণেশ্বরে স্কাইওয়াক আমরা করেছি। যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, বেলুড়, দক্ষিণেশ্বরে টিকিট কেন্দ্র সেখানকার মতোই করেছি। তারামায়ের মন্দির সুন্দর তৈরি হয়েছএ। সতীপীঠ, কঙ্কালীতলা, কী তৈরি হয়নি বলুন তো? মাজের থান থেকে ইমামবরা, সবই করেছি।’’
মমতা বলেন, ‘‘এই জেলায় হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিনে ছুটি দিয়েছি। বড়মাকে সম্মান করতাম। থাকলে যেতাম। ইছামতী নদীর উপর সেতু, গাইঘাটা ব্লকে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর তোরণ করা হয়েছে। এই জেলায় অনুকূল ঠাকুরের তীর্থস্থান রয়েছে।’’
মমতা বলেন, ‘‘হাবড়ায় ১০০ শয্যার কোভিড হাসপাতালে গড়ে তোলা হয়েছিল। এখন কোভিড নেই। সেই হাসপাতাল চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করার চেষ্টা হচ্ছে।’’