মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল ছবি।
মার্চের শেষ দিনে হয়ে যাওয়া ‘টর্নেডো’ নিয়ে প্রথম দফার ভোট প্রচারের শেষ লগ্নে, সোমবার শুরু হল আর এক রাজনীতির ‘ঝড়’।
এ দিন সকালে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী নিজের এক্স হ্যান্ডলে নির্বাচন কমিশনের প্যাডে লেখা ৯ এপ্রিল তারিখের একটি চিঠির (আনন্দবাজার সত্যতা যাচাই করেনি) ছবি দিয়ে দাবি করেন, কমিশন ক্ষতিগ্রস্তদের অনুদান ও বাড়ি তৈরির টাকা দেওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছে। তাঁর দাবি, “পিসি, ভাইপো নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে বদনাম করতেই ব্যস্ত। অনেক আগেই দুর্গতদের সাহায্য করা যেতে পারত। কিন্তু মানুষকে সাহায্য করার চেয়ে রাজনীতি করাই তাঁদের উদ্দেশ্য।” একই সুরে বিবৃতি দেন দার্জিলিঙের বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তা।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হলদিয়ায় এ দিন অবশ্য বলেন, ‘‘বারবার বলেছি, নির্বাচন কমিশন আমাদের নতুন নির্মাণের অনুমোদন দিচ্ছে না। সেটা চিঠিতে নেই। আমরা অভিযোগ করার পরে, কমিশনের তরফে যে অ্যাপ্রুভাল (অনুমোদন) দেওয়া হয়েছে, ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে দিয়েছে। যিনি এক্স-পোস্ট করছেন, তাঁর কোনও ধারণা নেই। খালি বলতে হবে, তাই বলছেন।’’
কোচবিহারে রাসমেলার মাঠে এ দিন সভা ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেখানে তিনিও বলেন, “মানুষ ঘর পাননি। নির্বাচনের পরে, আমরা এগারো লক্ষ মানুষের ঘর দেব। জলপাইগুড়ি-কোচবিহার-আলিপুরদুয়ারে যে ঘরের পুরোপুরি ক্ষতি হয়েছে, যে ঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে, তা আমরা তৈরি করে দেব।” এ দিনই আবার তাঁর আলিপুরদুয়ারে সভা ছিল। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরে রাজ্য নিজের তহবিল থেকে আবাস প্রকল্পের তালিকায় থাকা ১১ লক্ষ বাড়ির টাকা দেবে। ঝড়ে যাঁদের বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে, অল্প ক্ষতি হয়েছে, সে তালিকাও তিনি প্রশাসনকে রাখতে বলেছেন। আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি তৈরির টাকাও তখন দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাড়ি যাঁদের একেবারে ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে, তাঁরা ইতিমধ্যেই কুড়ি হাজার টাকা পেয়েছেন। সরকার আরও চল্লিশ হাজার টাকা দিচ্ছে। আর এটা হয়ে গেলে, আরও ষাট হাজার টাকা পাবেন। অর্থাৎ, এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা পাবেন।’’
এ দিনই জলপাইগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার প্রশ্ন তোলেন, ‘‘ওই চিঠিতে কেন স্পষ্ট করে অনুমতির কথা লেখা হয়নি?’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার পাল্টা দাবি করেন, কমিশন স্পষ্ট ভাবেই রাজ্যের মুখ্যসচিবকে অনুমতি দেওয়ার কথা জানিয়েছিল। তিনি বলেন, “গত ৯ এপ্রিল কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে জানান, ঝড়ে-বিধ্বস্ত মানুষকে আর্থিক সহায়তা করা যাবে। সরাসরি উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া যাবে। কোনও রাজনৈতিক প্রচার ছাড়া। ১০ এপ্রিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মিথ্যা প্রচার করে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তা-ই। এই দুই অপরাধীকে (কালপ্রিটকে) দুটো দফা অবধি ভোট-প্রচারে আটকানো উচিত।” তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “এই চিঠি দেখানোর বিজেপি নেতারা কে? কমিশন জবাব দিক!”