কালীগঞ্জের সেই জনসভায় অভিষেকের সঙ্গে মহুয়া। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভায় আসা নাবালকদের ‘লাওয়ারিস’ (হিন্দি শব্দ, যার কাছাকাছি অর্থ বেওয়ারিশ বা অনাথ) বলে ফের বিতর্কে জড়ালেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র।
রবিবার দুপুরে নদিয়ার কালীগঞ্জে পানিঘাটায় মহুয়ার সমর্থনে সভা করতে আসেন অভিষেক। তিনি এসে পৌঁছনোর আগে মঞ্চ থেকে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায় মহুয়াকে। সেই সময়েই মাইকে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “দেবব্রতবাবু, বারবার বলছি, এই লাওয়ারিস বাচ্চাগুলো দাঁড়িয়ে আছে, গেট থেকে সরাও।” সোমবার সংবাদমাধ্যমের একাংশ এবং সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়োয় এ রকম একটি মুহূর্ত দেখাও যাচ্ছে (আনন্দবাজার অবশ্য সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি)।
এই নিয়ে সরব বিরোধী দলগুলি। সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী থেকে বিজেপির রাহুল সিংহেরা নিন্দায় মুখর হয়েছেন। সুজনের কটাক্ষ, “নীতি-নৈতিকতা, শিষ্টাচারের কোনও ব্যাপার নেই— যেমন তৃণমূল, তেমনই তার ভাষা!” এ প্রসঙ্গে সোমবার তৃণমূলের মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, “কী পরিস্থিতিতে উনি এই কথাটা বলেছেন, তা নিশ্চিত করে জানা দরকার। তবে সচেতন মানুষের শব্দ চয়নের আগে আর একটু সতর্ক হওয়া দরকার।”
বেফাঁস মন্তব্য করে এর আগেও বিতর্কে জড়িয়েছেন মহুয়া। দলের কর্মিসভায় খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া সংবাদকর্মীদের ‘দু’পয়সার সাংবাদিক’ আখ্যা দিয়েছিলেন। এবং তার জন্য যথাযথ ক্ষমাপ্রার্থনা দূরে থাক, সমাজমাধ্যমে বিদ্রূপ করেন বলে অভিযোগ। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, একই ঔদ্ধত্য প্রকাশ পেয়েছে এ দিনও। ভোটের মাত্র সপ্তাহখানেক আগে এই ঘটনায় তৃণমূল নেতৃত্ব অস্বস্তিতেই পড়েছেন।
কৃষ্ণনগরের সিপিএম প্রার্থী এসএম সাদির মতে, “আমাদের কাছে সব শিশুই সন্তান। তাদের লাওয়ারিশ বলা বিকৃত রুচির পরিচয়। কোনও জনপ্রতিনিধি এই ভাষায় কথা বলতে পারেন, তা ভাবতেও লজ্জা হয়। কিন্তু এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি।” বিজেপির মিডিয়া আহ্বায়ক সন্দীপ মজুমদার বলেন, “যিনি নিজের স্বার্থের জন্য দেশের নিরাপত্তা বিক্রি করে দিতে পারেন এবং সে জন্য সংসদ থেকে বহিষ্কৃত হন, তাঁর মুখ দিয়ে আর এর চেয়ে ভাল ভাষা কী বেরোবে?” কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়ের দাবি, “মুখের ভাষার উপরে তৃণমূলের লোকেদের নিয়ন্ত্রণ নেই।”
এ দিন চেষ্টা করেও মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমান বলেন, “বিষয়টি ঘটে থাকলে খারাপই হয়েছে। তবে এমন কিছু হয়েছে বলে আমার জানা নেই।”