—প্রতীকী চিত্র।
গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে উদয়নারায়ণপুরের ৯০ শতাংশ পঞ্চায়েত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল। তা সত্ত্বেও ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে এ বার এ তল্লাটে জয়ের ব্যবধান বাড়ানো নিয়ে দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না তৃণমূলের। তার উপরে এ বার উদয়নারায়ণপুরকে ‘পাখির চোখ’ করেছে বিজেপি। ফলে, উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রের অধীন এই বিধানসভায় এ বার লড়াই হাড্ডাহাড্ডি হবে বলেই মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে উদয়নারায়ণপুরে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ছিল ৪২ হাজার। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে সেই ব্যবধান কমে হয় মাত্র ১৪ হাজার। পঞ্চায়েত ভোটে সাফল্য মিললেও সম্প্রতি এক কর্মিসভায় বিধায়ক সমীর পাঁজা দলের নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যদের হুঁশিয়ারি দেন, লোকসভা ভোটে কোনও পঞ্চায়েত সদস্যের বুথে জয়ের ব্যবধান কমলে বা ঘাটতি হলে তাঁকে পদত্যগ করতে হবে।
ফলে, পঞ্চায়েত ভোটে সাফল্য মিললেও ভোটাররা তাঁদের থেকে সরে গিয়েছেন কি না, এ প্রশ্ন ভাবাচ্ছে তৃণমূল নেতাদের অনেককেই। দলের এক নেতা বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে লড়াই হলে বিপক্ষের শক্তি বোঝা যেত। কিন্তু সেই সুযোগ মেলেনি। তাই ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের নিরিখে বিচার করলে এত বিপুল সংখ্যক বিরোধী ভোট এ বারের নির্বাচনে কার দিকে যাবে তা নিয়েই চিন্তা।’’
বিধায়ক সমীর পাঁজাও মানছেন, তাঁদের চিন্তায় রেখেছে গত বিধানসভা ভোটের ফল। তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনে ভোটের ব্যবধান কমার পিছনে দু’টি কারণ থাকতে পারে। হয় আমাদের নিজেদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল, নয়তো এই বিধানসভা এলাকায় সংখ্যালঘু ভোট কম থাকা। আমি তাই এলাকা চষে বেড়াচ্ছি যাতে লোকসভা নির্বাচন তো বটেই, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের ফলেও ২০২১-এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’’
অরুণ উদয় পাল চৌধুরী বিজেপি প্রার্থী হয়েই দাবি করেছিলেন, উদয়নারায়ণপুর থেকেই উলুবেড়িয়া লোকসভার ‘বিজয় রথ’ যাত্রা শুরু করবে। কয়েকটি কর্মী বৈঠক এবং চা চক্রের মাধ্যমে তিনি প্রচারও করে চলেছেন। কিন্তু সংগঠনের অবস্থা ধারে-ভারে তৃণমূলের সঙ্গে কোনও অবস্থাতেই যে তুলনীয় নয়, তা দলীয় কর্মীদের একাংশ স্বীকার করেছেন।
এমনিতে গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই এখানে বিজেপির সাংগঠনিক শক্তির ক্ষয় হয়েছে। বহু স্থানীয় নেতা-কর্মী শাসক দলের ছাতার নীচে চলে গিয়েছেন। তৃণণূল থেকেও কিছু এসেছেন ঠিকই, কিন্তু তাতে ক্ষয় রোধ হয়নি বলেই মনে করছে পদ্ম শিবিরের অনেকে। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলেরও দাবি, পঞ্চায়েতে বিজেপির প্রার্থী দিতে না পারার মূল কারণই হল সংগঠনে ক্ষয়। বিজেপি অবশ্য এ জন্য তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে। অভিযোগ মানেননি বিধায়ক।
বিজেপি প্রার্থীর দাবি, "আমাদের ভোট ঠিকই আছে। লোকসভা নির্বাচনে তার প্রমাণ মিলবে।" প্রার্থী এই দাবি করলেও প্রচারে দলের অনেকটাই ঘাটতি আছে বলে বিজেপি কর্মীদের একাংশ স্বীকার করেছেন।
এখানে বামেদের সমর্থনে কংগ্রেস প্রার্থী দিলেও তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতার পাশাপাশি রয়েছে চিরাচরিত গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। ফলে, এখানে তারা কতটা সুবিধা করতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সম্প্রতি কংগ্রেস প্রার্থীর রোড শো-তে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি গত বিধানসভা নির্বাচনের দলীয় প্রার্থী অলোক কোলেকে। অলোক বলেন, "আমি আর কী বলব! যা বলার দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানাব।" কংগ্রেস প্রার্থী আজহার মল্লিকের দাবি, "দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই।"
উদয়নারায়ণপুর জেলার
অন্যতম পিছিয়ে পড়া ব্লক। বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় এখানে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে। বাড়ি বাড়ি নলবাহিত পানীয় জল দেওয়ার কাজও থেমে নেই। রাস্তাঘাট ঝাঁ চকচকে হয়েছে। প্রচারে এ সব উন্নয়নকে হাতিয়ার করছে তৃণমূল। বিজেপি পাল্টা শাসকদলের ‘দুর্নীতি’র পাশাপাশি প্রচারে দাবি করছে
বিদায়ী সাংসদ তথা তৃণমূল প্রার্থী সাজদা আহমেদ এলাকায় আসেন না। এলাকার কথা সংসদে তুলে ধরেন না। সাজদা বলেন, ‘‘এলাকার মানুষের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ আছে। সংসদেও এলাকার সমস্যা নিয়মিত তুলে ধরেছি।’’" দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল।