Lok Sabha Election 2024

হাবড়া কেন্দ্রে ভোগাবে কি বালুর অনুপস্থিতি, প্রশ্ন তৃণমূলের অন্দরেই

বালু না থাকায় হাবড়ায় বিরোধীরা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে, তা দিন কয়েক আগে অশোকনগরে সভা করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বলে গিয়েছিলেন।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

হাবড়া শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৪ ০৮:৫০
Share:

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।

হাবড়া শহরে চোখ রাখলে দেখা মিলছে, তৃণমূল-বিজেপির প্রার্থীদের কাটআউট, হোডিং। বারাসতের বিজেপি প্রার্থীর স্বপন মজুমদারের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ছবি। কোথাও কোথাও স্বপনের একার ছবি দিয়ে কাটআউট। উল্টো দিকে, তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদারের ছবি দেখা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। হোর্ডিং, ফ্লেক্স, কাটআউট— কোথাও ওই তিন জনের বাইরে আর কারও ছবি দেখা মিলছে না।

Advertisement

হাবড়ার মানুষের কাছে বিষয়টি অন্য রকম। কারণ, ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের সময় থেকে তাঁরা এলাকা জুড়ে ভোটের প্রচারে প্রার্থী, মমতা-অভিষেকের পাশাপাশি আরও এক জনের ছবি দেখতে পেতেন। তিনি হাবড়ার তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এ বার ভোট প্রচারে গোটা হাবড়া বিধানসভা তন্নতন্ন করেও খুঁজেও কার্যত পাওয়া গেল না ‘বালুদার’ (জ্যোতিপ্রিয়ের ডাক নাম) কোনও ছবি!

বালু না থাকায় হাবড়ায় বিরোধীরা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে, তা দিন কয়েক আগে অশোকনগরে সভা করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বলে গিয়েছিলেন। মমতার কথায়, ‘‘শুনতে পাচ্ছি, সিপিএম হাবড়ায় একটু মিটিং-মিছিল করছে বালু নেই বলে। আইন আইনের পথে চলবে। আইন যে দিন মুক্তি দেবে, সে (বালু) মুক্তি পাবে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর মুখে বালুর নাম উঠে আসায় তাঁর অনুগামীরা কিছুটা উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন। এখন বালু ঘনিষ্ঠদের মুখে পথসভায় তাঁর মাঝে মধ্যে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু ওটুকুই। যদিও গত পঞ্চায়েত ভোটেও বালু ছিলেন হাবড়ায় দলের প্রচারের মূল কাণ্ডারী।

Advertisement

রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, গত বছর রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে বালু গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই হাবড়া তৃণমূলে ছন্নছাড়া ভাব। হাবড়ায় লোকসভা নির্বাচন পরিচালনা করতে পুরপ্রধান নারায়ণচন্দ্র সাহাকে চেয়ারম্যান করে একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। বালুর অবর্তমানে এই কমিটিই নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম করছে।

বিধায়কের অনুপস্থিতিতে নির্বাচন করা কতটা চ্যালেঞ্জের?

নারায়ণ বলেন, ‘‘বালুদার অভিভাবকত্বে আমরা এত দিন নির্বাচন করে এসেছি। তিনি আমাদের দিয়ে ভোট পরিচালনা করতেন। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর অভাব এ বার আছে। তবে আমরা সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করছি। হাবড়া থেকে বড় ব্যবধানে লিড পাব।’’

যদিও হাবড়ার রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বালুহীন হাবড়ায় তৃণমূলের সংগঠনে অগোছালো ভাব। কর্মী-সমর্থকেরা সেই অর্থে চাঙ্গা নন। বালু গ্রেফতার হওয়ার পরে বিদায়ী সাংসদ কাকলির হাবড়ায় আনাগোনা বেড়েছে। তিনি সংগঠনের রাশ শক্ত হাতে ধরেছেন। তবে হাবড়ায় দলের অন্দরে গোষ্ঠীকোন্দলের চোরা স্রোত এখনও বইছে, তা জনান্তিকে মানেন দলেরই অনেকে। কংগ্রেস থেকে আসা নেতাদের ‘আদি তৃণমূল’ কর্মীরা মানতে চাইছেন না। এক বর্ষীয়ান তৃণমূল নেত্রীর অনুযোগ, ‘‘আমাদের তো কোনও কাজে ডাকাই হচ্ছে না!’’

বালু জেলের বাইরে থাকা অবস্থাতেই অবশ্য বিজেপি এখানে দাপট দেখাতে শুরু করেছিল। গত লোকসভা ভোটে বারাসত কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার জয়ী হলেও হাবড়া বিধানসভা এলাকায় তিনি পিছিয়ে ছিলেন ১৯,০৫০ ভোটে। সে বার হাবড়া পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ডেই পিছিয়ে পড়েছিল তৃণমূল। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিংহ জ্যোতিপ্রিয়র কাছে পরাজিত হন। তবে জয়ের ব্যবধান ছিল মাত্র ৩,৮৪১ ভোটের!

২০১৯ সালে লোকসভায় সাফল্য পাওয়ার পরেও বিজেপি হাবড়ায় তাদের সেই সাফল্য ধরে রাখতে পারেনি। হাবড়ায় বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল ইদানীং একাধিক বার প্রকাশ্যে এসেছে। তা ছাড়া, স্বপন বারাসত লোকসভা এলাকার বাসিন্দা না হওয়ায় বিজেপি কর্মীদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। দলের নেতৃত্বের কাছে চ্যালেঞ্জ, সেই ক্ষোভ মিটিয়ে পদ্ম শিবিরের সকলকে এক ছাতার তলায় আনা।

তবে বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদার হাবড়া থেকে এ বারও বড় ব্যবধানে লিড পাওয়ার আশা করছেন। হাবড়া এলাকায় বড় সংখ্যায় মতুয়া ও উদ্বাস্তু সমাজের বসবাস। তাঁদের দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে কেন্দ্র সিএএ কার্যকর করার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সেটাই বিজেপির ভাল এখানে ভাল ফলের আশা করার অন্যতম কারণ।

স্বপনের মতে, বালু জেলে না থাকলেও হাবড়া থেকে বিজেপির লিড আরও বেশি হতে পারত। তাঁর কথায়, ‘‘জ্যোতিপ্রিয় যে চাল চোর, তা হাবড়ার মানুষ আগে থেকেই জানতেন। তিনি গ্রেফতার না হলেও জানতেন। জ্যোতিপ্রিয় জেলের বাইরে থাকলে মানুষ ওঁকে দেখতেন এবং আরও বেশি করে ক্ষুব্ধ হতেন। তার প্রভাব বেশি করে ইভিএমে পড়ত।’’ আত্মবিশ্বাসী স্বপনের কথায়, ‘‘এ বার বারাসত লোকসভার ৭টি বিধানসভার মধ্যে সব থেকে বেশি লিড হাবড়া থেকেই আমি পাচ্ছি।’’

বারাসত কেন্দ্রে এ বার বামপ্রার্থী ফরওয়ার্ড ব্লকের সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। ২০১১ সাল থেকেই হাবড়ায় সিপিএমের রক্তক্ষরণ শুরু। গত কয়েক বছর ধরেই সাংগঠনিক ভাবে সিপিএম দুর্বল হয়েছে। এ বার অবশ্য বামেরা ভাল ফলের বিষয়ে আশাবাদী। করোনা ও আমপানের সময়ে বাম কর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করেছিলেন। ইদানীং মিটিং-মিছিলে ভিড় হচ্ছে। তবে সেই ভিড় ইভিএমে পৌঁছবে কিনা, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের অনেকেই সংশয়ে।

সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘দূরে সরে যাওয়া’ অনেক বামপন্থী ফের সক্রিয় ভাবে দলে ফিরেছেন। গত পুরভোটে হাবড়ায় এলাকায় বামেরা ভোট পেয়েছিলেন প্রায় ২০ হাজার ভোট। গত বিধানসভায় যা ছিল ৮ হাজারের মতো। হাবড়ার সিপিএম নেতা আশুতোষ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে সেটিংয়ের রাজনীতি মানুষ ধরে ফেলেছেন। আমরা মানুষকে বলছি, আপনারাই বিচারক। তৃণমূল-বিজেপির ফাঁদে পড়বেন না। আমাদের বিশ্বাস, হাবড়ার মানুষ এ বার ভুল করবেন না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement