মোদীর সভায় ভিড় বর্ধমানে। ছবি: উদিত সিংহ।
লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পকে হাতিয়ার করে মহিলাদের ভোট নিজের বাক্সে টানতে চেষ্টার কসুর করছে না তৃণমূল। দেওয়ালে, ব্যানারে ভোটের প্রচারে আঁকা হয়েছে বিশাল আকারের লক্ষ্মীর ভান্ডারের ছবি। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার তালিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী জনসভায় মহিলাদের নজরকাড়া উপস্থিতি চোখে পড়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, তাঁদের অনেকেই লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের উপভোক্তা। তৃণমূল বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে না চাইলেও বিজেপির দাবি, বহু মহিলা যে এ বার তাদের প্রার্থীকে ভোট দেবেন, এ দিনের ভিড় সেই ইঙ্গিতই দিয়েছে।
বর্ধমান-সিউড়ি রোডের ধারে সভা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। সেখানে দুই বর্ধমান জেলা থেকেই দলের কর্মী-সমর্থকেরা আসেন। বর্ধমান শহর লাগোয়া বিধানসভাগুলি থেকেই বেশি মানুষ সভায় এসেছিলেন। সিউড়ি রোড ধরে দলবেঁধে মহিলাদের সভায় আসতে দেখা যায়। তাঁদের মধ্যে কুড়মুন থেকে আসা কয়েক জন জানান, তাঁরা সকলেই লক্ষীর ভান্ডারের টাকা পান। সরকারি নানা প্রকল্পে তৃণমূলের ‘দুর্নীতির’ প্রতিবাদেই তাঁরা এ বার বিজেপিকে ভোট দেবেন। আবার ভাতারের বাসুদহ গ্রামে থেকে আসা কয়েক জন মহিলা জানান, তাঁরা লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে ভাতা পান। তবে সভায় এসেছেন বিজেপি নেতৃত্বের অনুরোধে। ভোট কাকে দেবেন প্রশ্ন করা হলে নিরুত্তর ছিলেন তাঁরা।
ভাতারের রতনপুরের কয়েক জন মহিলার অভিযোগ, লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা পেলেও তাঁরা আবাস যোজনায় বাড়ি পাননি। অন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা সব তৃণমূলের নেতারা ‘ভাগ’ করে নিয়েছেন। সে কারণেই তাঁরা বিজেপি শিবিরে গিয়েছেন। অন্য এক মহিলার দাবি, বারবার আবেদন করেও তিনি লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা পাননি। মেলেনি স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধাও। সে কারণেই বিজেপির সভায় এসেছেন তিনি। আউসগ্রামের কয়েক জন মহিলার বক্তব্য, সরকারি প্রকল্প শুধু তৃণমূলে কর্মী-সমর্থকদের জন্য নয়। লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের সুবিধা পেলে বিজেপির সভায় আসা যাবে না, এই যুক্তি অর্থহীন। তৃণমূল ও রাজ্য সরকারের নানা কাজে তাঁরা ক্ষুব্ধ। সে কারণেই বিজেপি শিবিরে এসেছেন তাঁরা। আবার তালিত ও বীরপুর থেকে আসা কয়েক জন মহিলা স্পষ্টই জানিয়েছেন, তাঁরা এসেছেন হেলিকপ্টার এবং প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে। লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুবিধা তাঁরা পান। তবে রাজনীতি বা বিজেপির সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই।
বিজেপির বর্ধমান সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা-র দাবি, ‘‘সন্দেশখালির ঘটনা বাড়ির লক্ষ্মীদের চোখ খুলে দিয়েছে। তাই তাঁরা রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্পের সুবিধা নিলেও ভোট তৃণমূলকে দেবেন না। এ দিনের সভায় মহিলাদের ভিড় দেখেই তা স্পষ্ট।’’ তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম রাজ্য মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডার যাঁরা পান, তাঁরা দিদির (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গেই আছেন। ওই ভোটব্যাঙ্কে বিরোধীরা থাবা বসাতে পারবে না। বিজেপি ভুল বুঝিয়ে কিছউ মহিলাকে সভায় এনেছে। বাইরে থেকে লোক এনে সভা
করেছে বিজেপি।’’