—প্রতীকী চিত্র।
গেরুয়া ঝড় রুখতে ‘সবুজ’ দেওয়ালের ভিত কি যথেষ্ট শক্ত হয়েছে—ওন্দায় গড় দখলের লড়াইয়ে সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তৃণমূলের অন্দরে। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচন থেকেই ওন্দায় তৃণমূলের অন্দরের ফাটল সামনে এসেছিল। সে বার অবশ্য দলেরই একাংশের প্রবল বিরোধিতা রুখে ওই কেন্দ্রে জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন ওন্দার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক অরূপ খাঁ। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে তা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, ২০১৬-র ভোটের সময়ে ওন্দায় বিজেপির সংগঠন তেমন ছিল না। ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে মানুষের ভোট দিতে না পারার ক্ষোভকে হাতিয়ার করে গেরুয়া হাওয়া ঢুকে পড়ে ঘরে ঘরে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে যার প্রথম প্রকাশ দেখা যায়।
ওন্দায় আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি বিজেপিকে। অঞ্চল থেকে বুথ, সর্বত্র সংগঠন গড়ে ওঠে। যার নেপথ্যে ছিলেন পোড় খাওয়া বিজেপি নেতা অমরনাথ শাখা। ওন্দার গ্রামে গ্রামে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে জমে থাকা ক্ষোভ কৌশলে প্রকাশ্যে বার করতে সফল হন তিনি। ২০২১-এর বিধানসভাতেও জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে প্রথম বিজেপি বিধায়ক হন অমরনাথই। এ দিকে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে আরও দুর্বল হয় তৃণমূলের সংগঠন। এই পরিস্থিতিতে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওন্দা পঞ্চায়েত সমিতি দখলে আনতে জোরদার লড়াইয়ে নামে বিজেপি। তৃণমূলকে জোর টক্কর দিলেও পঞ্চায়েত সমিতি ও বেশির ভাগ পঞ্চায়েতে জয় অধরাই থেকেছে বিজেপির। ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে পাঁচটিতে জেতে বিজেপি। পঞ্চায়েত সমিতির ৪৩টি আসনের ১৭টি ও জেলা পরিষদের তিনটি আসনের মধ্যে একটি যায় বিজেপির দখলে।
পঞ্চায়েত ভোটের এই পরিসংখ্যান সামনে রেখে লোকসভা নির্বাচনে হারানো গড় আদায়ে লড়াই শুরু করেছে তৃণমূল। দলের ওন্দা বিধানসভার পর্যবেক্ষক, সদ্য বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়া কোতুলপুরের বিধায়ক হরকালি প্রতিহার বলেন, “পঞ্চায়েতের ফলাফলেই প্রমাণ, ওন্দার মানুষ তৃণমূলের পক্ষে।”
যদিও ওন্দায় আদি ও নব্য তৃণমূল, দলের স্থানীয় ও বহিরাগত নেতাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে যোগ দেওয়া স্থানীয় নেতারাও আড়ালে ক্ষোভ লুকোচ্ছেন না। ওন্দার এক প্রবীণ তৃণমূল নেতার কথায়, “ব্লকে নেতৃত্বের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব রয়েছে, তা প্রচারের আগে মিটিয়ে ফেলতে যতটা সক্রিয়তা দরকার ছিল, দল তা দেখায়নি।” হরকালির অবশ্য দাবি, ওন্দা এ বারে বিজেপির হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা দলের কর্মীরা জানেন। তাই সকলে এক জোট হয়েই লড়াই করছেন। কোথাও কোনও খামতি নেই।
এ দিকে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফল আশামতো না হলেও লোকসভা নির্বাচনে এলাকায় জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী বিজেপি শিবির। অমরনাথ বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষ কতটা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন, তা সবাই জানেন। তার পরেও ওন্দা ব্লকে আমাদের ফল দাগ কেটেছে। তৃণমূল এলাকায় সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল। তা ছাড়া, এই ভোট দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোট। তাই তৃণমূলের জয়ের কোনও সম্ভাবনাই নেই।”
ওন্দায় ভোট বাড়াতে মরিয়া বামেরাও। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নানা ইস্যুকে সামনে রেখে ওন্দায় ঘরে ঘরে ভোট প্রচারে জোর দিয়েছে বাম নেতৃত্বও। সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেন, “তৃণমূল বা বিজেপি, কেউ মানুষের সমস্যা নিয়ে কথা বলে না। বরং আমাদের উপরে মানুষ আস্থাশীল।”