কাজল শেখ। নিজস্ব চিত্র।
তাঁর গ্রামে সভা করেছিলেন দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের খাসতালুক নানুরে বোলপুর লোকসভায় সব থেকে বেশি লিড দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জ রাখলেন তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির সদস্য, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ। ভোটের ফল বেরোনোর পরে তিনি নিজে বলছেন, ‘‘শুধু নানুর নয়, জেলার দু’টি কেন্দ্রেই ব্যবধান বাড়িয়ে জেতাটা চ্যালেঞ্জ ছিল। সেটাই হয়েছে।’’
অনুব্রত মণ্ডল বীরভূমে তৃণমূল জেলা সভাপতি থাকাকালীন কাজলের সঙ্গে বিবাদ সুবিদিত ছিল। তৃণমূল সূত্রে দাবি, অনুব্রত জেলায় থাকাকালীন কাজলকে দলে ‘কোণঠাসা’ হয়ে থাকতে হয়েছিল। দু’পক্ষের অন্তর্বিরোধও বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কাজলের অন্তর্ঘাতের জন্যেই নানুরে জেতা আসনে সিপিএমের কাছে অনুব্রতর ‘স্নেহধন্য’ গদাধর হাজরাকে হারতে হয় বলে তৃণমূলের অনেকের দাবি। পরে অবশ্য, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে নানুর এলাকায় কাজলকে ভোট করার দায়িত্ব দেন অনুব্রত। কাজল সেই নির্বাচনে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের আওতাধীন ৭টি বিধানসভার মধ্যে নানুরে দলকে সর্বোচ্চ লিডও দেন। ওই নির্বাচনে নানুরে তৃণমূলের ৭,৭৩১ ভোটের লিড ছিল। তার পরেই কাজল ব্লক কার্যকরী সভাপতির পদ পান।
২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে নানুর পুনরুদ্ধার করে কাজল ফের তাঁর গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করেন। গরুপাচার মামলায় অনুব্রত জেলে যাওয়ার পরে দলে কাজলের গুরুত্ব বাড়ে। তাঁর অনুগামীরাও সক্রিয় হয়ে ওঠেন জেলার রাজনীতিতে। বীরভূমে জেলা সফরে এসে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাজলকে জেলা কোর কমিটির সদস্য করে দিয়ে যান। নানুর এলাকা থেকে প্রথম নির্বাচনে জিতে জেলা সভাধিপতি মনোনীতও হন তিনি। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বারের লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে নানুর এবং কেতুগ্রাম বিধানসভা এলাকা দেখার দায়িত্ব দেন। তৃণমূল সূত্রে দাবি, সেই থেকে ওই দুটি কেন্দ্র বিশেষ করে নানুরে রেকর্ড সংখ্যক লিড দেওয়াটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় তাঁর কাছে।
দলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও লোকসভা ভোটের প্রচারে তাঁর গ্রাম পাপুড়িতে সভা করে নানুর বিধানসভা থেকে সর্বোচ্চ লিড পাওয়ার কথা বলে যান। বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অসিত মালকেও নানুর কেন্দ্রে সব থেকে বেশি লিড পাওয়ার কথা বলতে শোনা গিয়েছে। ভোটের পরদিন নিজের গ্রাম পাপুড়িতে বিজয় মিছিল করে ব্যবধান বৃদ্ধির কথা বলেছেন কাজলও। ভোটের পরদিনই কাজলের উদ্যোগে মিষ্টি বিলি হয়। ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায় কাজলের কথাই সত্যি। এ দিন ফলাফল বেরোনোর পর দেখা যায়, বোলপুর লোকসভার অন্তর্গত নানুর বিধানসভায় তৃণমূল প্রার্থী অসিত মাল পেয়েছেন ১৪৮৮৩০ ভোট এবং বিজেপি প্রার্থী পিয়া সাহা পেয়েছেন ৬৬৬২০ ভোট। সাত কেন্দ্রের মধ্যে নানুরেই সর্বোচ্চ ব্যবধান হয়েছে।
তবে কাজলকে কটাক্ষ করে বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি (বোলপুর) সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলের দাবি, ‘‘নানুরে ভোট কেমন হয়েছে তা সবাই জানেন। ছাপ্পা-রিগিং করে ভোট করলে রেকর্ড লিড তো হবেই।’’ কাজলের পাল্টা দাবি, ‘‘মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছেন।’’