মুকুটমনি অধিকারী। Sourced by the ABP
২০১৯-এর পর ২০২৪। মাঝে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও রানাঘাট কার্যত বিজেপিকেই হাত উপুড় করে ভোট দিয়েছে। যেখানে গত দুই নির্বাচনে দক্ষিণবঙ্গের বেশির ভাগ কেন্দ্রে তৃণমূলেরই রমরমা, সেখানে দক্ষিণ নদিয়া কেন বার বার বিজেপির দিকে ঝুকছে, সেই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে রাজনৈতিক মহলে।
এর মধ্যে মতুয়া ভোট অব্শ্যই একটা বিষয়। কিন্তু মতুয়া ধাম ঠাকুরনগর যএ বনগাঁ কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে, তার চেয়েও রানাঘাটে বিজেপির জয়ের ব্যাবধান কয়েক গুণ বেশি। কেবলমাত্র পঞ্চায়েত ও পুরভোটের মতো স্থানীয় নির্বাচনে ছবিটা উল্টে গিয়েছে। বিপুল ভাবে জিতেছে তৃণমূল।
কেন এই প্রবণতা? বিশেষত বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার নিজে মতুয়া নন। গত পাঁচ বছরে এলাকার উন্নয়ন নিয়েও প্রচুর প্রশ্ন রয়েছে। দলের অন্দরে কলহ এবং জগন্নাথের প্রতি একাংশের বীতরাগও প্রবল। অপর দিকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী, পেশায় চিকিৎসক মুকুটমণি অধিকারী মতুয়া পরিবারের সন্তান। দীর্ঘদিন তিনি বিজেপি ঘেঁষা মতুয়া মহাসঙ্ঘের জেলা সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। বিজেপিরও অনেকের কাছে প্রার্থী হিসেবে জগন্নাথের তুলনায় মুকুটমণি পছন্দের ছিলেন। তা সত্ত্বেও প্রায় এক লক্ষ ৮৮ হাজার ভোটে জিতেছেন জগন্নাথ।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এর অন্যতম প্রধান কারণ প্রার্থীর চেয়ে প্রতীকের প্রতি ভোটারদের একটা বড় অংশের আনুগত্য। আবার ভোটের ঠিক আগেই রানাঘাটের দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণির দলবদল করে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী হওয়াও সম্ভবত ভোটারদের অনেকে ভাল ভাবে নেননি। তৃণমূলের ভোটের একটা অংশও বিজেপি জয়ের ব্যবধান বাড়িয়ে থাকতে পারে, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
তৃণমূল ঘেঁষা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের নদিয়া জেলার সভাপতি প্রমথরঞ্জন বসু বলেন, "নিশ্চিত ভাবেই মতুয়াদেরকে বোঝাতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। তাঁদের একটা বড় অংশ আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়েছে।" আবার বিজেপিপন্থী একটি মতুয়া মহাসঙ্ঘের সভাপতি দিবাকর মণ্ডলের মতে, "বনগাঁর তুলনায় রানাঘাট কেন্দ্রে মতুয়া সমাজ বিজেপিকে বেশি সমর্থন জানিয়েছে, তা নয়। বনগাঁর তুলনায় অনেক বেশি মতুয়া ভোটার রানাঘাট কেন্দ্রে রয়েছেন, তাই এই কেন্দ্রে বিজেপির জয়ের ব্যবধানও বনগাঁর তুলনায় বেশি।"
গত লোকসভা ভোটে কৃষ্ণগঞ্জের নিহত বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্ত্রী রুপালী বিশ্বাসকে রানাঘাট কেন্দ্রে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। তাতে দলের মধ্যেই মতানৈক্য তৈরি হয়। এ বারেও প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় স্তরের মতানৈক্য বিজেপির জয়কে ত্বরান্বিত করে থাকতে পারে। মুকুটমণির মতে, "ভোট করানোর ক্ষেত্রে সংগঠনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব যেমন ছিল, তেমনই শেষ পর্যন্ত ভোট ইভিএমনে এনে জড়ো করার ক্ষেত্রেও উদাসীনতা দেখা গিয়েছে।" তাঁর কথায়, "রাজ্য নেতৃত্ব চাইলে আমি আমার মতামত জানাব।"
তবে জগন্নাথের দাবি, "আমি শেষ পাঁচ বছর সাংসদ হিসেবে মানুষের জন্য কাজ করেছি। মানুষের সঙ্গেই ছিলাম। তাই দল দ্বিতীয় বার প্রার্থী করেছে। দলীয় প্রতীক চিহ্নই আমার কাছে বড়। মানুষ আমার প্রতি আস্থা রেখেছে, তাই জিতিয়েছে।"