ডানলপ আবাসন চত্বরে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শুনছেন হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ বার তাঁর মন খারাপ হল। বিষণ্ণতার কথা অকপটে স্বীকারও করলেন।
একদা যে ডানলপের নাম ছড়িয়েছিল গোটা দেশে, হুগলির সাহাগঞ্জের সেই কারখানা আজ শ্মশান বলে মেনে নিলেন হুগলির তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এ জন্য দায়ী করলেন কেন্দ্রকেই।
ক’দিন আগেই সিঙ্গুরে দাঁড়িয়ে রচনা দাবি করেছিলেন, ‘‘চারদিকে কল-কারখানার ধোঁয়ায় আকাশ ঢেকেছে! মুখ্যমন্ত্রীর আমলে কত কারখানা হয়েছে!’’ কিন্তু বাস্তবে যে মাটিতে কারখানা ছিল, হুগলির সেই কঙ্কালসার ডানলপের মাটিতে দাঁড়িয়ে শুক্রবার তাঁর উপলব্ধি, ‘‘এত কর্মী, এত বড় একটা সংস্থা এই ভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে, খুব খারাপ লাগল দেখে!" একইসঙ্গে দাবি করলেন, ‘‘দিদি (মুখ্যমন্ত্রী) অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার সহযোগিতা না করলে কিছু করার নেই।’’
ডানলপ বন্ধে কেন্দ্রের দায় কোনও ভাবেই মানছেন না ভোটে রচনার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, ডানলপে যা জিনিসপত্র ছিল, লুট করে নিয়ে গিয়েছে তৃণমূলের দুষ্কৃতী-মাফিয়ারা। একইসঙ্গে দাবি করেন, ‘‘ডানলপ কারখানাকে মুখ্যমন্ত্রী শেষ করে দিয়েছেন। ডানলপের এই অবস্থার জন্য মুখ্যমন্ত্রীই পুরোপুরি দায়ী।’’ তৃণমূল এ অভিযোগ মানেনি।
এ দিন প্রচারে বেরিয়ে বাঁশবেড়িয়া হয়ে ডানলপ আবাসন চত্বরে ঢোকেন রচনা। আবাসন চত্বরের কিছুটা অংশ চুঁচুড়া বিধানসভা এলাকার অন্তর্গত। সেখানের বাসিন্দারা পানীয় জল সঠিক ভাবে পাচ্ছেন না বলে রচনাকে অভিযোগ জানান। জবাবে, ভোটে জিতলে সমস্যা মিটবে বলে তাঁদেরকে আশ্বস্ত করেন রচনা। জল নিয়ে লকেট অবশ্য খোঁচা দিতে ছাড়েননি। তিনি বলেন, "কেন্দ্রের জলের টাকা তৃণমূল নেতাদের ঘরে ঢুকেছে। তাই বাড়ি-বাড়ি জল যায়নি।’’
ডানলপ কারখানায় শেষবারের মতো তালা ঝোলে ২০১১-তে। তখন প্রায় ২২০০ কর্মী ছিলেন। তারপর থেকে বারেবারেই যন্ত্রপাতি এবং জিনিসপত্র চুরির অভিযোগ উঠেছে। চলেছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। ভোট-বাজারে তা আরও একবার শুনলেন এলাকাবাসী।
ঝোপজঙ্গলে ঢাকা, উঁচু পাঁচিল ঘেরা ডানলপের দুর্দশা ঠাহর হলেও আগে সবটা বোঝা যেত না। গত বছরের এক কালবৈশাখীতে পাঁচিলের একটি অংশ ভেঙে পড়ায় ‘কঙ্কালসার’ কারখানার চেহারা জনসমক্ষে চলে আসে।প্রশাসন সূত্রের খবর, বিভিন্ন সংস্থা, ঋণদাতা ও শ্রমিকদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে ২০১২ সালেই ডানলপকে লিকুইডেশনের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট।