মুখ্যমন্ত্রীর সভার আগে প্রস্ততি ভাতারে। নিজস্ব চিত্র ।
শিয়রে লোকসভা ভোট। তবু ভাতারে তৃণমূলের অন্দরে ‘দ্বন্দ্ব’ মিটছে না বলে দলীয় সূত্রের খবর। গলসিতে দলের সংগঠন এখনও ‘দুর্বল’। বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে সিবিআই গ্রেফতার করার পরে পূর্ব বর্ধমানে তাঁর ‘গড়’ বলে পরিচিত আউশগ্রামে নেতৃত্বের অভাব তৈরি হয়েছে বলে দাবি তৃণমূলেরই একাংশের। এই তিন বিধানসভা এলাকায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা রয়েছে আগামী দু’দিন। তিনি কী বার্তা দেন, তা শুনতে যেমন উৎসুক তৃণমূল নেতৃত্ব, তেমনই কৌতূহলী বিরোধীরাও।
আজ, মঙ্গলবার বীরভূমের হাসন থেকে ভাতারে আসার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। সেখানেই তিনি সভা করবেন। বুধবার সভা করবেন আউশগ্রাম ও গলসিতে। সভার জন্য এই তিন বিধানসভা এলাকা বাছার কারণ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা চলছে। যদিও তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “দলনেত্রী কোথায় সভা করবেন, তা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ঠিক করেন। তাঁদের নির্দেশ অনুযায়ী সভার জায়গা বাছা হয়েছে।” আউশগ্রামের সভায় এক লক্ষ ও ভাতারে ৫০ হাজার লোক আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তৃণমূলের। গরম উপেক্ষা করে সভায় আসা কর্মী-সমর্থকেরা যাতে অসুবিধায় পা পড়েন, তার জন্য পর্যাপ্ত পানীয় জল, ওআরএসের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তৃণমূল।
তৃণমূল সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে সভা করার জন্য বরাবরই মুখ্যমন্ত্রীর ‘পছন্দের’ জায়গা ছিল বোলপুর লোকসভার অন্তর্গত মঙ্গলকোট। ২০০৯ লোকসভা নির্বাচন থেকে শুরু করে পরবর্তী সব ভোটেই মঙ্গলকোটে সভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বার বেছে নিয়েছেন ওই লোকসভা কেন্দ্রের অধীন পূর্ব বর্ধমানের আর এক বিধানসভা আউশগ্রাম। কেন? তৃণমূল সূত্রের দাবি, আউশগ্রাম তাদের ‘শক্ত ঘাঁটি’। তবে অনুব্রত জেলে যাওয়ার পরে এই বিধানসভা এলাকায় নেতৃত্বের অভাব রয়েছে বলে দলের শীর্ষ নেতারা মনে করেন। কয়েক সপ্তাহ আগে খোদ মুখ্যমন্ত্রী ঘরোয়া বৈঠকে এ নিয়ে আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দারের কাছে ‘আক্ষেপ’ করেছিলেন। তাঁকে বিধানসভা এলাকায় বেশি সময় দেওয়ারও নির্দেশও দেন। রামপুরহাটে সভা থেকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের ‘আদি-দের’ সঙ্গে নিয়ে চলার বার্তা দিয়েছিলেন। তার পরেও আদি-দের অনেকে ‘বসে রয়েছেন’ বলে দলের একটি সূত্রের দাবি। জেলায় জনজাতিদের বাস বেশি আউশগ্রামেই। তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন, আউশগ্রামের স্কুল মাঠের সভায় দলের নেতাদের ‘সক্রিয়’ হওয়ার বার্তা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী।
ভাতারের সভায় তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ মেটাতে কী বার্তা দেন, তা নিয়েও কৌতূহলী দলের দুই ‘গোষ্ঠী’। তৃণমূলের অন্দরমহলের খবর, প্রাক্তন বিধায়ক তথা দলের প্রবীণ নেতা বনমালী হাজরা গত বিধানসভা ভোটের পর থেকেই ‘নিষ্ক্রিয়’। তাঁকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায় না। তাঁর অনুগামীদেরও দলের কাজে দেখা যায় না। মুখ্যমন্ত্রীর সভায় তাঁকে কি দেখা যাবে? বনমালী জবাব দেননি।
গত লোকসভা ভোটে গলসি থেকে ৯২০০ ভোটে হেরে গিয়েছিল তৃণমূল। বিধানসভা ভোটে অবশ্য জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। তবে গলসিতে তৃণমূলের সংগঠন বেশ দুর্বল। এই বিধানসভায় প্রায়ই বোমাবাজি এবং বোমা উদ্ধারের ঘটনা ঘটে। তৃণমূল নেতাকে গাছে বেঁধে মারার ঘটনাও ঘটেছে। ইদের আগের দিন গ্রাম দখলকে ঘিরে মারপিট হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক ব্যক্তিকে দেখতে যান বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। তৃণমূলের একাংশের দাবি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্য দলের একাধিক কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। সেই সুযোগে বিজেপি সংখ্যালঘুদের বাড়িতেও ঢুঁ মারছে।
দিলীপের কটাক্ষ, “লড়াইটা বুঝতে পারছেন। এই গরমে ঝলসে যাবেন তৃণমূল নেতারা।”