—প্রতীকী চিত্র।
সেই চেনা আবহটা এ বার যেন অনেকটা উধাও!
ভোট এগিয়ে আসছে। অথচ, রাস্তার জটলা, চায়ের দোকান, পাড়ার ঠেকে এ বার সাধারণ মানুষ যেন রাজনীতির কথা এড়িয়েই চলছেন! সাধারণের এই নীরবতায় আরামবাগ বিধানসভা এলাকায় উদ্বেগে তৃণমূল। বিজেপি এবং সিপিএম সেই রহস্য বোঝার চেষ্টা করছে।
উন্নয়নের বহু তালিকা নিয়ে শাসকদল ঘুরছে। তার মধ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণে ‘আরামবাগ মাস্টার প্ল্যান’, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, আরামবাগ থেকে চাঁপাডাঙা রাস্তা সম্প্রসারণ ইত্যাদি রয়েছে। লক্ষ্মীর ভান্ডারের বরাদ্দ বৃদ্ধি নিয়েও প্রচার চলছে জোরকদমে। কিন্তু স্বস্তি মিলছে কই! দুর্নীতি আর স্বজনপোষণের অভিযোগ শুনতে শুনতে দলের বহু নেতাই উৎকন্ঠায়।
তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে আরামবাগে দলের সংগঠন মজবুত করায় অন্যতম ভূমিকায় থাকায় তিরোলের বর্ষীয়ান নেতা আব্দুস সুকুরের আক্ষেপ, “এত উন্নয়ন ঢাকা পড়ে যাচ্ছে খালি বেশ কিছু নেতার দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণের জন্য। তাঁদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ায় দলটা প্রায় তছনছের অবস্থা। লক্ষ্মীর ভান্ডারে মহিলারা খুশি ঠিকই, কিন্তু সংশ্লিষ্ট পরিবারটির মতিগতি বোঝা যাচ্ছে না। তারা চুপচাপ। এটাই দুশ্চিন্তার।’’
দুশ্চিন্তার কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন না এই বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের তরফে ভোট পরিচালনার অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত আরামবাগের প্রাক্তন বিধায়ক তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা। তিনি বলেন, “সার্বিক উন্নয়নের থেকে দলের একাংশের ব্যক্তিগত উন্নয়নেই চোখ বেশি। আশঙ্কাটা সেখানেই।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, দিদি (মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়) যে ভাবে জনগণের জন্য প্রকল্পগুলি বের করেছেন, তার সুবিধা সব ক্ষেত্রে প্রকৃত উপভোক্তার কাছে পৌঁছয়নি। ভোট প্রচারে বেরিয়ে অঞ্চল স্তরের নেতাদেরও উপলব্ধি, ‘‘মানুষ নেত্রীকে দেখে ভোট দেবেন, এই পরিস্থিতি আর নেই এখানে।’’
সাধারণ মানুষ একেবারেই মুখ খুলছেন না, তা নয়। মোট ১৩টি পঞ্চায়েত নিয়ে আরামবাগ বিধানসভা এলাকায় ধান, আলু ছাড়াও প্রচুর আনাজ চাষ হয়। কিন্তু সব সময় চাষিরা লাভের মুখ দেখতে পান না। মলয়পুরের শ্যামল রায়, গৌরহাটির শেখ বাদশা, তিরোলের কৌশিক মালিক প্রমুখের ক্ষোভ, মানুষের ধারাবাহিক আয়ের জায়গা হচ্ছে না। নানা প্রকল্পের নামে লুটপাট চালাচ্ছেন এক শ্রেণির নেতা। তাঁদের অভিযোগ, সরকারি সহায়তা প্রকল্পগুলিও অনেক ক্ষেত্রে টাকার বিনিময়ে কিনতে হচ্ছে। কৃষিপ্রধান এলাকায় বহুমুখী হিমঘর এখনও হল না। উল্টে যা কোনও দিন কাজে লাগবে না, সেই হেলিপ্যাড হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হলেও সার্বিক পরিষেবা মিলছে না।
বহু শহরবাসীরও অভিযোগ, ঘিঞ্জি শহরটাকে বাঁচাতে বছর দশেক ধরে একটি বাইপাস রাস্তার কথা বলা হলেও তা হয়নি। সাধারণ মানুষের জন্য কোন দল সত্যি ভাববে বা কিছু করবে তা নিয়েই অনেকে চিন্তিত।
মানুষের এই চুপচাপ থাকা নিয়ে বিজেপি আশাবাদী। আরামবাগের বিজেপি বিধায়ক মধুসূদন বাগ বলেন, “মানুষের চুপ থাকাই বলে দিচ্ছে, তাঁরা আমূল ওলটপালট চান। গত বিধানসভায় মানুষ আমাদের পাশে থাকায় অনেককে চিহ্নিত করে শাসকদল তাঁদের উপর নানা জুলুম করেছে। এ বার তাঁরা সতর্ক। নিশ্চিত ভাবেই আমাদের ভোটের হার বাড়বে।” তৃণমূলের দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণের সংস্কৃতি বিজেপির পক্ষেই যাবে বলে তাঁর দাবি।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মানুষের এই নীরবতা আসলে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরবতা। বামেদের যে বিকল্প নেই, তা মানুষ ক্রমশ বুঝছেন। আমাদের ভাল ফল হবে বলেই বিশ্বাস।”