—প্রতীকী চিত্র।
কয়েক দিন পরেই ভোট। ভোটের দিন সব কিছুতে পরিকল্পনামাফিক মসৃণ পদক্ষেপ করতে চাইছে হুগলি সিপিএম। সেই লক্ষ্যে দলের তরুণ ব্রিগেড ময়দানে নেমে পড়েছে। ভোটের কাজ পরিচালনার জন্য চার-চারটি ‘ওয়ার রুম’ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। জেলার তিনটি লোকসভার জন্য থাকছে তিনটি ভিন্ন ‘ওয়ার রুম’। সেগুলির সঙ্গে সমন্বয় এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ‘ওয়ার রুম’ থাকবে শ্রীরামপুরের দলের জেলা কার্যালয়ে। এই কায়দায় পরিকল্পনা করেই মুর্শিদাবাদের ভোটে সন্তোষজনক কাজ হয়েছে বলে সিপিএম সূত্রের দাবি।
কেন ‘ওয়ার রুম’?
জেলা সিপিএম সূত্রের খবর, ভোটের দিনের জন্য তিনটি (হুগলি, আরামবাগ ও শ্রীরামপুর) লোকসভা কেন্দ্রেই দলীয় কর্মীদের পৃথক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করা হয়েছে। গ্রুপগুলিতে ১৬০০-১৭০০ জনকে যুক্ত করা হয়েছে। ভোটের দিন দলের এরিয়া কমিটির তরফে সরাসরি প্রত্যেক বুথ স্তর থেকে প্রথমে খবর সংগ্রহ করা হবে। বুথ বা এরিয়া কমিটি মারফত সেই খবর সংশ্লিষ্ট ‘ওয়ার রুমে’ জানানো হবে। ভোটকেন্দ্রে দলের এজেন্ট বসতে না দেওয়া থেকে মারধর— সব খবরই এ ভাবে দ্রুত ‘ওয়ার রুমে’ পৌঁছে যাবে। সেই খবরের ভিত্তিতেই দলীয় স্তরে নির্বাচন কমিশন বা পর্যবেক্ষকের কাছে অভিযোগ জানানো হবে।
কোনও খবরের ভিত্তিতে দলের প্রার্থীকে কোনও তথ্য জানানো বা সতর্ক করার প্রয়োজন হলে তা-ও করা হবে। ‘ওয়ার রুম’ থেকেই নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থায় পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম বা কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাছে অভিযোগ জানানো হবে। কাজের সুবিধার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভোট পরিচালনার কাজে যুক্ত আধিকারিকদের ফোন নম্বর দলীয় কর্মীদের আগাম দেওয়া থাকবে।
চুঁচুড়ার কামারপাড়ার সিপিএম অফিসে থাকছে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের ‘ওয়ার রুম’। আরামবাগ কেন্দ্রে তা হচ্ছে আরামবাগ শহরে। শ্রীরামপুরে দলের জেলা কার্যালয়ে দু’টি ‘ওয়ার হাউস’ থাকবে। একটি শ্রীরামপুর কেন্দ্রের জন্য। অন্যটি জেলার কেন্দ্রীয় ‘ওয়ার রুম’।
জেলা সিপিএম সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘দলের তরুণ প্রার্থীদের নিয়ে উদ্দীপনা রয়েছে আলাদা মাত্রায়। হেঁটেই আমাদের প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয় করে নিয়েছেন। প্রতিদিন হেঁটে এতটা রাস্তা ঘোরা, আমি অন্তত অতীতে দেখিনি। ওঁরা তরুণ বলেই এই উৎসাহ দেখানো সম্ভব হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নবীনদের প্রযুক্তির ব্যবহার। আমরা ভোট পরিচালনা করব পুরোটাই আমাদের ‘ওয়ার রুমে’র মাধ্যমে। ছেলেমেয়েরা পুরোপুরি তৈরি।’’
‘বৃদ্ধতন্ত্র’ নিয়ে এই সে দিনও সিপিএম সমালোচনার মুখে পড়েছে। সেই অবস্থান থেকে তারা এ বার কার্যত ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছে। লোকসভায় টিকিট বণ্টনের ভারসাম্যেই স্পষ্ট, নবীন-প্রবীণের সমন্বয় চাইছে সিপিএম। তরুণদের হাতে ভোট পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে নতুন প্রজন্মের কর্মীদের সামনে আনতে চাইছে।
এ বার বামেদের প্রচারে এবং ভোট কর্মসূচিতে প্রযুক্তি নির্ভরতা এসেছে দলের তরুণদের হাত ধরেই। তৃণমূল এবং বিজেপি ষোলো আনা পেশাদারদের দিয়ে প্রচারের ঘুঁটি সাজিয়েছে। সিপিএম সরাসরি পেশাদারদের সাহায্য না-নিলেও দলের তরুণদের দিয়ে পরিকল্পনামাফিক সেই কাজ করাচ্ছে। সেই পরিকল্পনার ছাপ দলের তিন প্রার্থী প্রচারে চোখে পড়ছে।