—প্রতীকী চিত্র।
মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস ১৯৮৯ সালের পরে আর জেতেনি। কিন্তু প্রার্থী দিতে পারেনি এই প্রথম। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন কংগ্রেসের প্রাক্তন প্রার্থী অক্ষয়কান্তি বাম। ফলে এখন বিজেপিকে শিক্ষা দিতে ইন্দোরে কংগ্রেসের অস্ত্র ‘নোটা’। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৩ সালে ‘নোটা’ (নান অব দ্য অ্যাবভ) চালু করে নির্বাচন কমিশন। কোনও কেন্দ্রের কোনও প্রার্থীকেই পছন্দ না হলে ভোটারেরা এই ভোট দিতে পারেন।
অক্ষয়ের পক্ষবদলের পরে কংগ্রেসের ‘বিকল্প’ প্রার্থী হতে চেয়ে আদালতের গিয়েছিলেন মোতি সিংহ। কিন্তু তাঁর আর্জি মঞ্জুর করেনি আদালত। তাই ‘নোটা’-কে হাতিয়ার করে প্রচারে নেমেছে কংগ্রেস। সেই প্রচারের জেরে শেষ পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয়েছে বিজেপিও। বস্তুত তার আগে বিজেপির প্রচারের গতি কমেছিল। কারণ, বাকি ১৩ জন প্রার্থীর কেউই বিজেপির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধারে কাছেও ছিলেন না বলে মেনে নিচ্ছেন রাজনীতিকদের একাংশ।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জিতু পাটওয়ারির কথায়, ‘‘অন্য কোনও প্রার্থীকে আমরা সমর্থন করব না। বরং বিজেপিকে শিক্ষা দিতে ভোটারেরা রেকর্ড সংখ্যক নোটা ভোট দিন।’’ প্রায় একই সুরে সমাজমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিয়োয় প্রবীণ কংগ্রেস নেতা সজ্জন বর্মার বক্তব্য, ‘‘আমাদের কংগ্রেস প্রার্থীকে কয়েক জন ব্যক্তি চুরি করেছে। ফলে আপনারা ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। যদি তাদের শিক্ষা দিতে চান তবে নোটার বোতাম টিপুন। গণতন্ত্রকে রক্ষা করুন।’’
প্রবীণ কংগ্রেস নেত্রী শোভা ওঝার বক্তব্য, ‘‘ইন্দোরের ভোটারেরা গত পুরসভা ও বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে বিপুল ভোটে জয়ী করেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিজেপি অন্যায় ভাবে লোভ দেখিয়ে অক্ষয়কান্তি বামকে সরিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। তাই ভোটারদের উচিত নোটায় ভোট দিয়ে বিজেপিকে শিক্ষা দেওয়া।’’
ইন্দোরে বিজেপির প্রার্থী বর্তমান সাংসদ শঙ্কর লালওয়ানি। কিন্তু নোটায় বিপুল সংখ্যক ভোট পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় আশঙ্কায় ভুগছে বিজেপি। অটোয় ‘লোকতন্ত্র বাঁচাও সমিতি’-র পোস্টার লাগিয়ে নোটায় ভোট দেওয়ার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছিলেন এক দল ব্যক্তি। সেই পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ উঠেছে বিজেপি কাউন্সিলর সন্ধ্যা যাদবের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছে কংগ্রেস। কিন্তু সন্ধ্যা যাদব স্পষ্টই জানিয়েছেন তিনি এমন পোস্টার ছিঁড়বেন। কারণ, এমন প্রচার গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ নয়। মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সভাপতি ভি ডি শর্মার মতে, নোটায় ভোট দিতে ভোটারদের ‘উস্কানি’ দেওয়া গণতন্ত্রের অপরাধ।
কিন্তু শেষ মুহূর্তে কংগ্রেসের প্রার্থীকে দলে নেওয়া প্রসঙ্গে ভিন্ন সুর শোনা যাচ্ছে বিজেপির অন্দরেও। ইন্দোর থেকে আট বার জয়ী হয়েছিলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। প্রবীণ এই বিজেপি নেত্রীর মতে, ‘‘আমি ইন্দোরে মূল বিরোধী প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহারের কথা শুনে বিস্মিত হয়েছিলাম। এর প্রয়োজন ছিল না। কারণ, ইন্দোরে বিজেপিকে কেউ হারাতে পারবে না।’’
সুমিত্রার দাবি, বেশ কয়েক জন ইন্দোরবাসী তাঁকে ফোন করেছিলেন। তাঁরা নোটাতেই ভোট দিতে চান। কারণ, বিজেপি যা করেছে তা তাঁদের পছন্দ হয়নি। সুমিত্রার কথায়, ‘‘আমি তাঁদের বলেছি বিজেপি কিছু করেনি। প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি তার মূল আদর্শকে আঁকড়েই এগিয়ে যাচ্ছে। তাই নোটার বদলে বিজেপিকে ভোট দেওয়া উচিত।’’