—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ভোট পরবর্তী হিংসায় বরাবরই জমি আন্দোলনের আঁতুড়র ঘর নন্দীগ্রামের ‘বদনাম’ রয়েছে। তাই আগামী কাল, মঙ্গলবারের গণনার পরে এই এলাকায় হিংসা ছড়ানোর বিষয়ে শঙ্কিত যুয়ুধান রাজনৈতিক দলগুলির কর্মী-সমর্থকেরা। একই আশঙ্কা করছেন একদা রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রবণ হিসাবে পরিচিত পটাশপুরের বাসিন্দারাও। সেখানে এখন থেকেই রয়েছে থমথমে পরিস্থিতি।
২০২১ সালে ৩ মে বিধানসভা নির্বাচনে ফল ঘোষণা হয়েছিল। তার পরেই ভোট পরবর্তী হিংসা ছড়ায় নন্দীগ্রামের একাধিক এলাকায়। তাতে বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতিকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। এছাড়া, একাধিক বিজেপি কর্মীদের মারধর করারও অভিযোগ ছিল। দেবব্রত মাইতি ছেলে রঞ্জিত মাইতি এবার বলছেন, ‘‘ভোটের আগেই সোনাচূড়াতে এবার এক মহিলা বিজেপি কর্মী খুন হয়েছেন। আমার বাবাকেও একটা ভোটের ফল ঘোষণার দিন খুন করা হয়েছিল। এবার ভোটের ফল যাই হোক না কেন, এলাকাতে শান্তি বজায় থাকুক, এটাই চাই।’’ নন্দীগ্রামে কেন্দামারি পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়ি বিজেপি কর্মী গোবিন্দ মণ্ডলের। অভিযোগ, বিধানসভার ভোট পরবর্তী সময়ে তাঁকে তৃণমূলের লোকজন মারধর করে। তাতে বাকশক্তি হারিয়েছেন গোবিন্দ। পরিবারের এক সদস্য বলঠেন, ‘‘রীতিমতো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। জানি না এবার কী লেখা রয়েছে। প্রশাসনের কাছে দাবি, আমরা যেন শান্তি বসবাস করতে পারি।’’
ভোটের অনেক আগে থেকেই নন্দীগ্রামে এবার তৃণমূল ও বিজেপি একে অপরের বিরুদ্ধে লাগাতার সন্ত্রাসের অভিযোগ করে এসেছে। তবে দাবি, যে দলই রাজনৈতিকভাবে জয়লাভ করুক না কেন, গণনার পরে যেন সাধারণ গ্রামবাসীদের উপর যেন অত্যাচার না করা হয়। বিজেপি জেলা (তমলুক) সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলেন, ‘‘ভোট হওয়ার পর থেকেই সোনাচূড়া, ভেকুটিয়া গোকুলনগর, কেন্দামারি এলাকায় রাতে মোটরবাইক বাহিনী হুমকি দিচ্ছে। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না। আমরা চাই প্রশাসন সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করুক। নন্দীগ্রামে শান্তি থাকুক।’’ আবার তৃণমূলের নন্দীগ্রাম-১ ব্লক সভাপতি বাপ্পাদিত গর্গ বলছন, ‘‘২০২১ সালের ভোট পরবর্তী হিংসা সবই অভিযোগ। কোনও কিছুই তো প্রমাণিত হয়নি।’’
এবার নন্দীগ্রামে ভোট পরবর্তী সময়ে অপ্রীতিকর কিছু ঘটবে না বলে পুলিশের দাবি। তারা জানাচ্ছে, এলাকায় এলাকাতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। হলদিয়ার এসডিপিও অরিন্দম অধিকারী বলেন, ‘‘নন্দীগ্রাম-সহ গোটা হলদিয়া মহকুমাতেই মঙ্গলবার পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে।’’
নন্দীগ্রামের মতো পটাশপুরের বড়হাট, গোকুলপুর, নৈপুর, গোপালপুর, আড়গোয়াল, মথুরা অঞ্চলকে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রবণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। ২৫ মে ভোটের দিনে নৈপুরে দু-একটি বুথে ছোটখাটো উত্তেজনা ছাড়ায় শান্তিতে ভোট মিটেছে। বড়হাটেও এক ভোটকর্মীকে মারধর ছাড়া অশান্তি তেমন হয়নি। তবে ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরে নতুন করে উত্তেজনার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না এলাকাবাসী। অশান্তির আঁচ করে শনিবার এগরা সাহাড়ার একাধিক গ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা রুটমার্চ করেছেন। রবিবার পটাশপুরে একাধিক এলাকাতেও রুটমার্চ হয়েছে। এলাকার শান্তি থাকার অভয় দিচ্ছেন রাজনৈতিক নেতারাও। বিজেপির জেলা (কাঁথি) সম্পাদক স্বপন দাস বলেন, ‘‘ফলাফল যেই হোক, সকল স্তরের রাজনৈতিক কর্মী সমর্থকদের এলাকায় শান্তি বজায় রাখার আবেদন করছি।’’ তৃণমূলের জেলা (কাঁথি) সভাপতি পীযূষকান্তি পন্ডাও বলছেন, ‘‘আমরাও সবাইকে নিজের এলাকায় শান্তি বজায় রাখার আবেদন করেছি।’’